ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

নির্বাচন ও অর্থনীতি

জলি রহমান

প্রকাশিত: ০১:১৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচন ও অর্থনীতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই স্ফীত হচ্ছে অর্থনীতি

শুরু হয়েছে নির্বাচনী উৎসব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই স্ফীত হচ্ছে অর্থনীতি। প্রধান দুটি ঈদ উৎসবের পরেই ব্যাপকভাবে অর্থের লেনদেন ঘটে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে আবারও উৎসবমুখর রাজনীতি অঙ্গন। এ উপলক্ষে অর্থনীতিতে লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকার। যা অনেকেরই অজানা। আর্থিক খাতে নির্বাচনী প্রভাব নিয়ে আজকের লেখা-  
২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনের বাজেট ছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছিল ২৮৩ কোটি টাকা। সে নির্বাচনে ভোটারপ্রতি ব্যয় ৮ টাকা এবং নবম সংসদ নির্বাচনে ৫ টাকা ঠিক করা হয়েছিল। নবম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা এবং দশম সংসদ নির্বাচনে তা ছিল ২৫ লাখ টাকা।  একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ভোটার প্রতি ১০ টাকা নির্বাচনী ব্যয় ছিল প্রার্থীদের। এখন চলছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা। এবারের নির্বাচনেও ভোটার প্রতি ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি প্রার্থীর ব্যয় কোনোভাবেই ২৫ লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, আগামী নির্বাচনের জন্য ব্যয় হতে পারে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

কোন কোন খাতে এত টাকা খরচ হয়? টাকার অঙ্ক শুনলে অনেকের মধ্যেই এমন প্রশ্ন জাগে। একাদশ নির্বাচনের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪০,১৮৩টি ও ভোটকক্ষ রয়েছে ২,০৭,৩১২টি। এখন হয়তো কিছু সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। এসব ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করতে বেশ কয়েক ধরনের সরঞ্জাম কেনা হয়। যেমন- ব্যালট পেপার, স্ট্যাম্প প্যাড, মনোনয়ন ফরম, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, অমোচনীয় কালির দাগ, চটের ব্যাগ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, বাক্সের লক ইত্যাদি। এছাড়াও প্রার্থীর ন্যূনতম ব্যয়, ইভিএম প্রকল্প, নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা সংস্থার ব্যয়সহ নানান আনুষঙ্গিক খাতে নির্বচনী বাজেট বরাদ্দ থাকে। নির্বাচন ঘিরে অর্থনীতিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাবই লক্ষ্য করা যায়।
ইতিবাচক প্রভাব : কিছুদিনের মধ্যেই নির্বাচন ঘিরে ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে যাবে শহর ও গ্রামের রাস্তাঘাট। বিলাসবহুল শপিং মল, হোটেল, রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের দোকানের আড্ডায়ও ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের সুস্পষ্ট প্রতিফলন পাওয়া যাবে। যা জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হলে রাজনীতিতে স্থিতিশীল পরিবেশ আসবে বলেই আশা করা যায়। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। আসন্ন নির্বাচনের ৩০০ আসনে ভোটার রয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯৭ লাখ।

প্রতি আসনে প্রার্থী যেহেতু সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে। এর ফলে ৬ লাখ ভোটারের নির্বাচনী এলাকাতেও প্রার্থী কোনোভাবে ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে না। তেমনি ২ লাখ ভোটারের এলাকায়ও ভোটার প্রতি ১০ টাকা বিবেচনায় ২০ লাখ টাকাই ব্যয় করতে পারবেন। এবারের নির্বাচনে আসনপ্রতি ভোটার সংখ্যা এখনো প্রকাশ করেনি ইসি। অবশ্য ভোটের জন্য প্রার্থীরা কত টাকা খরচ করছেন তা নিরূপণের যথার্থ ব্যবস্থা না থাকায়, বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়।     
নেতিবাচক প্রভাব : নির্বাচনকালে প্রিন্টিং, আপ্যায়ন, মাইকিং, যানবাহনসহ সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারে বিপুল পরিমাণ কালো টাকার ব্যবহার বাড়ে। আর্থিক এসব লেনদেনের কারণে চাঙ্গাও হয় গ্রামীণ অর্থনীতি। কোনো কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় কোটি টাকার অঙ্কও ছাড়িয়ে যায়। যা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। বৈশ্বিক মন্দা এবং দেশে ডলারের তীব্র সংকটে অর্থনীতি এমনিতেই নাজুক। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়েছে দেশ। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতিতে ধস নামার আশঙ্কা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতির এ দুঃসময়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেখানে জরুরি, সেখানে অস্থিরতা বাড়লে অর্থনীতিতে শুধু ধসই নামবে না, আরও অনেক কিছু হতে পারে।

এতে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি বৈদেশিক ও সামাজিক খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। ইতিমধ্যে ডলার সংকটসহ নানান কারণে  বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একটি দেশে বিনিয়োগ বাড়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং সন্তোষজনক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এসব না থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না। বিনিয়োগ না বাড়লে গতিশীল হবে না অর্থনীতি। আর অর্থনীতি গতিশীল না হলে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে সংকুচিত। তাই প্রত্যাশা, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সুষ্ঠ ও সুন্দর। যা দেশ ও অর্থনীতির জন্য কল্যানকর হবে।

×