
তারিক আফজাল
ডিজিটাল মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে জামানতবিহীন কৃষি ঋণ দিচ্ছে এবি ব্যাংক। অর্থাৎ স্মার্টকার্ডে সরাসরি ঋণ পাচ্ছে কৃষক। এমন মহতি উদ্যোগ ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিজনেস এডিটর রহিম শেখ।
এই কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর কৃষির ওপর যে আন্তরিকতা বিশেষভাবে খাদ্য স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার যে প্রয়াস তারই সার্থকতা
কৃষি ঋণ বিতরণে বাড়তি আগ্রহের কারণ কী?
তারিক আফজাল : গত ৮ মাস ধরে আমরা কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার কারণ হচ্ছে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি উন্নয়ন এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণ কমে যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে পারলে মন্দ ঋণের ওপর যে চাপ তা অনেকাংশেই কমে যাবে। মন্দ ঋণ কমিয়ে আনতে গেলে অবশ্যই ক্ষুদ্র, কৃষি এবং নারী উদ্যোক্তা ঋণের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। আমরা এই কার্যক্রমগুলো অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।
আমাদের এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কৃষির ওপর যে আন্তরিকতা বিশেষভাবে খাদ্য স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার যে প্রয়াস তার সার্থকতা পাবে। তবে যে কেউ বলতে পারেন কৃষি বা নারী উদ্যোক্তা ঋণ ক্ষুদ্র ঋণ। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একজনকে অনেক টাকা নিয়ে সেই টাকা একটা গোষ্ঠী বা ১০০-এর অধিক কৃষকের মাঝে ভাগ করে দিতে পারি তাহলে ঝুঁকির মাত্রা যেমন কম থাকবে ঠিক তেমনি মন্দ ঋণের মাত্রাও কম থাকবে এবং প্রতিষ্ঠানের জন্যও মঙ্গলজনক। এই কারণেই আমরা এই ঋণের দিকে আমরা ঝুঁকছি।
স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ কিভাবে সম্ভব?
তারিক আফজাল : কৃষি উন্নয়ন ও অর্থায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। সেখানে অন্যতম সহযোগী হিসাবে এগিয়ে এসেছে ব্যাংকগুলো। আর ডিজিটাল মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে জামানতবিহীন কৃষি ঋণ দিচ্ছে এবি ব্যাংক। এ পর্যন্ত ১৬ জেলার ৪৪০ ইউনিয়নের ২৫ হাজার কৃষককে আমরা স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে ঋণ দিয়েছি। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ২৪ হাজার টন খাদ্য উৎপাদন করেছেন আমাদের কৃষকরা। ১২ হাজার একর জমি নতুন করে চাষের আওতায় এসেছে। আমাদের এই কাজে সরাসরি সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তাদের সহযোগিতায় আমরা কৃষকদের খুঁজে পেয়েছি এবং জামানতবিহীন ঋণ দিতে পেরেছি।
জামানতবিহীন ঋণের ঝুঁকি কিভাবে দেখছেন?
তারিক আফজাল : স্মার্টকার্ডে ঋণ পেয়ে কৃষকরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন। তারা ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করবেন। হাস-মুরগি পালন করবেন। কোনো না কোনো উৎপাদন কাজে ব্যবহার করবেন। কৃষকদের প্রত্যয় উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেছে। তারা টাকা সময়মতো ফেরত দেবেন। কেউ মনে হয় না খেলাপি হবেন। তাদের ঋণ আদায় নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কারণ কৃষকের উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নয়ন হবে। প্রয়োজনে তাদের ঋণের অঙ্ক বাড়ানো হবে। অল্প ঋণের ঝুঁকি নিয়ে ভাবার তো কিছু নেই। বরং বড় ঋণ নিয়ে ঝুঁকি বেশি।
আগামীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
তারিক আফজাল : দেশের কাঠামোগত উন্নয়ন যেমন পদ্মা ব্রিজ, মেট্রোরেল এবং শহরের বাইরে গেলে দেখা যায় গ্রামীণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কিভাবে হচ্ছে। এই কাঠামোগত উন্নয়নকে সার্থক করার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার অত্যন্ত জরুরি। আমি মনে করি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসারে সার্বিক জনগোষ্ঠীকে একটি উন্নয়নের এবং স্থায়ীভাবে আর্থিক সচ্ছলতা এনে দেয়া সম্ভব। এটা সরকারের যেমন নির্দেশনা, সেই নির্দেশনার প্রতিফলন প্রত্যেকটি ব্যাংকে তাদের নিয়মিত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। যেসব ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট আছেন যেমন- পোশাক খাত, পাওয়ার সেক্টরের উৎপাদনকারী, তেমনি সামগ্রিকভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেরও উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।
ব্যাংক খাতের মূল চ্যালেঞ্জ কী?
তারিক আফজাল : ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠাই বড় চ্যালেঞ্জ। এটি খুবই প্রয়োজন। সুশাসন বলতে ব্যাংকের যে গতি সেটি যাতে বজায় থাকে। ব্যাংকের কাজই হলো ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা। প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে শহর এমনি বিভিন্ন পর্যায়ে সবকিছু যাতে নিয়মমাফিক হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে গাইডলাইন আছে সেদিক লক্ষ রেখেই হয় সেটিই আসলে সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার মনে হয় যে, সকলেরই উচিত তার কার্যপরিধি সুষ্ঠুভাবে হয়। যাতে আপামর জন সাধারণ যাতে সুবিধা পায়। ব্যবসায়ী যারা আছেন তাদের যেমন ঋণ গ্রহণে যেমন প্রয়োজন আছে, ঠিক তেমনি ব্যাংকের দিক থেকে সেই ঋণ পরিশোধ সময়মতো পাওয়ারও প্রয়োজন আছে। এখানে আসলে সকলের আন্তরিকতা খুব বেশি প্রয়োজন।