ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিজার্ভ এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ৭ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ২২:০৫, ৭ নভেম্বর ২০২২

রিজার্ভ এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলার

ডলার

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমায় ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট আরও বেড়েছে। ডলার সংকটের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এতে করে চাপে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

সোমবার (৭ নভেম্বর) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের আমদানি বিল ১৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করার পর রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। 

এই মুহুর্তে যাদের শুধু রপ্তানি আয় আছে ও যারা বড় ব্যবসায়ী, ব্যাংক শুধু তাদের ঋণপত্রই খুলছে। অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানতে গত জুলাইয়ে কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এছাড়া বিলাসপণ্য আমদানি কমাতে শতাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরপরও ব্যাংক ঋণপত্র খুলছিল। তবে অক্টোবরে এসে ঋণপত্র খোলা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে  সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্যপণ্য, সার ও জ্বালানি আমদানির এলসি খোলা নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্য আমদানিতে কোনো ব্যাংক ডলার সংকটের কারণে এলসি না খুললে বিকল্প ব্যবস্থার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে। 

এদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রপ্তানি আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া এখন থেকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে কোনো ধরনের চার্জ নেবে না ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধার্থে সপ্তাহের  ছুটির দিনেও বিদেশে থাকা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো খোলা থাকবে। এ সিদ্ধান্ত সোমবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মূল্যম্ফীতি বাড়ছে। মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সবাই এখন চাহিদা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তবে অন্য দেশগুলো নীতি সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে খরচে লাগাম টানার চেষ্টা করছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমছে। আবার হুন্ডি প্রবণতা বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কমছে প্রবাসী আয়ও। সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন এলসি কমছে। যদিও বাকি বা দেরিতে পরিশোধের শর্তে আগে খোলা এলসির দায় পরিশোধ বেড়েছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। 

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এলসি খোলা ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমলেও আমদানির দায় পরিশোধ বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর কারণ, এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে কোনো পণ্য আমদানি হয় না। বেশিরভাগ এলসির দেনা পরিশোধ হয় পণ্য দেশে আসার পর। অবশ্য সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বেশিরভাগ আমদানি হচ্ছে বায়ার্স ক্রেডিট বা ডেভার্ড পেমেন্টের মাধ্যমে। এ উপায়ে পণ্য পাওয়ার পর নির্ধারিত সময় শেষে এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়। 

আমদানি কমাতে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণের পাশাপাশি এলসি খোলার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হচ্ছে। সব ঠিক থাকার পরও কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিচ্ছে, এই এলসি খোলা যাবে না। বিশেষ করে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, ফুল, ফলের মতো পণ্য আমদানিতে অনেক ক্ষেত্রে অনাপত্তি দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা, এ ধরনের পণ্যের এলসি খোলার খুব কম দিনের মধ্যে পণ্য এসে যায়। দায় পরিশোধও করতে হয় দ্রæততম সময়ে। এসব পণ্যের বাইরে অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে ডলার সংস্থান না করে এলসি না খোলার বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। ফলে এখন রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাকের বাইরে এলসি হচ্ছে খুব কম। 

অধিকাংশ ব্যাংক এখন এলসি খোলার আগে আমদানিকারককে ডলার সংগ্রহ করার শর্ত দিচ্ছে। আর আগের দায় পরিশোধে দফায় দফায় সময় নিচ্ছে। ফলে নতুন প্রজন্মের ও ছোট ব্যাংক এলসি খোলা এক রকম বন্ধই রেখেছে। আমদানি-রপ্তানিতে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাওয়ায় দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় ডলার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। মূলত জরুরি পণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে পর্যাপ্ত ডলারের সরবরাহ না থাকায়। এমন পরিস্থিতিতে দেশে নিত্যপণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক ও পর্যাপ্ত মজুদ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্যপণ্য, সার ও জ্বালানি আমদানির এলসি খোলা নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্য আমদানিতে কোনো ব্যাংক ডলার সংকটের কারণে এলসি না খুললে বিকল্প ব্যবস্থার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে। 
রবিবার গণভবনে দেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ডলারের সংকট জানুয়ারি মাসে কেটে যাবে। তখন হয়তো ডলারের দাম ১০৫ থেকে ১০৭ টাকায় নেমে আসতে পারে। তবে ৮৬ টাকায় ডলার আর পাওয়া যাবে না। এ ছাড়াও বর্তমানে আমদানি খাতে ডলারের দাম ১০৫ ও রপ্তানি বিলের ক্ষেত্রে ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনিময়ের এ হার আরও কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটার যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, রপ্তানিকারকরা ভর্তুকি পান এবং স্বল্প সুদে ঋণ পান। অবশ্য আমদানি-রপ্তানিতে ডলারের বিনিময় হারের ব্যবধান ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে বলে বৈঠকে আশ্বস্ত করেন গভর্নর। 

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, রপ্তানিকারকদের বাইরে কোনো ব্যাংক এলসি খুলতে চাচ্ছে না। খুললেও ২০ হাজার ডলারের বেশি এলসি নিচ্ছে না। এতে স্থানীয় শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেননা, অনেকে আছেন বাইরে থেকে কাঁচামাল আমদানি করে শুধু দেশের বাজারে বিক্রি করেন। তাঁদের তো ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে, পরিচালন ব্যয় হচ্ছে। অথচ উৎপাদন করতে পারছেন না। ফলে তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, রিজার্ভ যেমনই থাকুক, বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে একবারে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়ে এদিকে দেওয়া যেতে পারে। তাতে দেখা যাবে, হয়তো ৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। 

এদিকে ডলার সংকটের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এতে করে চাপে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের আমদানি বিল ১৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করার পর রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।  আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী হিসাবায়ন হলে রিজার্ভের অঙ্ক এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। এ আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার । ৭ নভেম্বর আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা-আকুর (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) আমদানি বিল বাবদ ১৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হবে। এতে করে রিজার্ভ নেমে আসবে ৩৪ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারে। আইএমএফের দেওয়া শর্তে হিসাব করলে যা কমে দাঁড়াবে ২৬ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে এটা অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এখন আমাদের ভাবতে হবে কীভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। প্রথমে আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। ডলারের রেট একেক সময় একেকটা দেওয়া হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। এখন বাজারের ওপর রেট ছেড়ে দেওয়া উচিত। অর্থাৎ প্রয়োজন মতো রেট দিয়ে ব্যাংকগুলো ডলার কিনবে। এতে করে ১১২ হোক, তা বিষয় নয়। রেমিট্যান্স আনা জরুরি। আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমদানি বন্ধ করে রিজার্ভ বাড়ানো যাবে না। যেসব পণ্য দরকার, তা আমদানি করতে হবে। তা না হলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।    
 
 
রেমিট্যান্সে কোনো চার্জ নেবে না ব্যাংক
এখন থেকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে কোনো ধরনের চার্জ নেবে না ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধার্থে সপ্তাহের  ছুটির দিনেও বিদেশে থাকা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো খোলা থাকবে। গত রবিবার ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

বৈঠক শেষে সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম জানান, বাফেদা ও এবিবি যৌথ ভাবে এ বৈঠক হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেমিট্যান্সের উপর চার্জ মওকুফ করা হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সে কোনো ধরনের চার্জ নেবে না। তারমানে কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই বিদেশ থেকে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন। 

এছাড়া প্রবাসীরা যেন সপ্তাহের ৭ দিন রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন এ জন্য ছুটির দিনও বিদেশে থাকা দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে প্রায় ৮ লাখ ৭৫ হাজার শ্রমিক দেশের বাইরে গেছেন। গত বছর যান ৬ লাখ ১৭ হাজার। করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানি ছিল মাত্র ২ লাখ ১৮ হাজার। অথচ ওই অর্থবছরে ৩৬ শতাংশের বেশি বেড়ে রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। গত অর্থবছর তা ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাড়লেও গত ১১ সেপ্টেম্বর দর বেঁধে দেওয়ার পর থেকে কমতে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ১১ শতাংশ কমার পর অক্টোবরেও কমেছে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ। মূলত দর বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি আমদানিতে কড়াকড়ির কারণে রেমিট্যান্সের টাকায় অর্থ পাচার, আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের দায় পরিশোধসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের কারণে প্রবাসী আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এখন হুন্ডিতে আসছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

রপ্তানি আয়ে বাড়ল ডলারের দর
রপ্তানি আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে, যা সোমবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে। রবিবার এসব বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার ক্ষেত্রে গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খাতভিত্তিক দর র্নিধারণ করে দিচ্ছে বাফেদা ও এবিবি। এর আগে গত ৩০ জুন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার র্নিধারণ বাজারের উপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেমিটেন্সে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয় সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা, যা রোববারের বৈঠকেও অপরিবর্তিত রাখা হয়। এদিন রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। 

অপরদিকে আমদানিসহ অন্যান্য দর আগের মতই থাকবে। পণ্য আমদানির এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলারের দর আগের মতই নির্ধারণ করা হবে রেমিটেন্স ও রপ্তানির বিনিময় হারের গড় করে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ গড় হারের সঙ্গে অতিরিক্ত ১ টাকা বেশি নিতে পারবে; অর্থাৎ স্প্রেড সীমা হবে ১ টাকা। এটিই আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিনিময় দর হিসেবে ধরা হচ্ছে।

৪ মাসেই ৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি
বাজারের অস্থিরতা কমাতে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখন জ্বালানি তেল, সারসহ সরকারের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকেই কেবল ডলার দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার পাচ্ছে না। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। এর ফলে রিজার্ভ আরও কমেছে। গত বছরের ২ নভেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। তার আগে ১২ আগস্ট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। 
 
আমদানিতে শর্ত 
আমদানি কমাতে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এলসি খোলার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হচ্ছে। সব ঠিক থাকার পরও কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে দিচ্ছে, এই এলসি খোলা যাবে না। বিশেষ করে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, ফুল, ফলের মতো পণ্য আমদানিতে অনেক ক্ষেত্রে অনাপত্তি দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার অনেক ব্যাংক ডলার সংকটের কারণে শতভাগ এলসি মার্জিন নিয়েও আমদানি এলসি খুলছে না। তবে আগের খোলা এলসির দায় পরিশোধ পরিশোধ করতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এলসি খোলা ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমলেও আমদানির দায় পরিশোধ বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য অনেক বেড়েছে। 

ফলে গত কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এ পর্যন্ত ৫১৪ কোটি ২৩ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেখানে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কিনেছিল প্রায় ৭৯৩ কোটি ডলার। ডলার কেনার চেয়ে এখন বিক্রির চাপ বেশি হওয়ায় রিজার্ভ কমছে।

এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×