ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

বিজিএমইএর সঙ্গে উপদেষ্টাদের বৈঠক

পোশাক কারখানা আজ থেকে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পোশাক কারখানা আজ থেকে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত

পোশাক খাতের সব কারখানা আজ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত

দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতের সব কারখানা আজ রবিবার থেকে ফের খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করেন, সেটাও মনে রাখা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

তবে গার্মেন্টস খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা  দেওয়ায় আজ থেকে সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে আগামীকাল সোমবার থেকে সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা (কাজ নেই, বেতন নেই) অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।

শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে কারখানা মালিক ও সংগঠনের নেতাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে আজ থেকে সব কারখানা খোলা রাখার জন্য মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছেন উপদেষ্টারা।

বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ সংগঠনটির বেশ কয়েকজন সাবেক সভাপতি ও গার্মেন্টস খাতের উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শনিবার ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর অধিকাংশ খুলে দেওয়া হলেও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ৪৯টি কারখানা বন্ধ রেখেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে শ্রম আইনে বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৩৬টি। বাকিগুলো উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৩ (১) ধারায় ৮৬টি কারখানা বন্ধ ছিল। শনিবার একই ধারায় বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৩৬টি। এর বাইরে ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
বন্ধ কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক কারখানা। তবে বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে ওষুধ, চামড়াজাতপণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের কারখানা আছে। শনিবার সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শ্রমিকেরা সকালেই কাজে যোগ দেন। সকাল থেকেই সড়কে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা টহল দিয়েছেন। বিভিন্ন কারখানার সামনে দায়িত্বপালন করছেন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা।

শ্রমিকনেতারা বলছেন, কিছু কারখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে দাবি নিয়ে আলোচনা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বিভিন্ন কারখানার মূল ফটকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া সংক্রান্ত নোটিস টাঙিয়ে দেওয়ায় কাজে ফিরেছেন শ্রমিকেরা। এদিকে, বিজিএমইএ আয়োজিত বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, আজ রবিবার থেকে দেশের সব তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা খোলা থাকবে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করেন, সেটাও মনে রাখা হবে। বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এ সময় কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে বৈঠকে বলেন, সরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে।

তবে কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে সোমবার থেকে সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা (কাজ নেই, বেতন নেই) অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। আদিলুর রহমান খান আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সরকার কমিটি করেছে। 
এই কমিটির মাধ্যমে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।

সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার যে সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। বৈঠকে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় অনেকের মতো শ্রমিকেরাও নিজেদের কথা বলছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ সমাধানে শ্রম সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা  হয়েছে। তারা সব অভিযোগ ও দাবি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

তবে শ্রমিকের আন্দোলনে একদমই যে ষড়যন্ত্র নেই, এমনো নয়। শ্রম উপদেষ্টা আরও বলেন, ইতোমধ্যে শ্রমিকদের জন্য কোনো প্রক্রিয়ায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা যায়, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শ্রম আইনের মধ্য থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করার যতটা সুযোগ আছে, তা নিশ্চিত করবে সরকার। তবে এই সব প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যারা অস্থিরতা করবে, তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়াা হবে না।
শ্রমিক অসন্তোষে আশুলিয়ায় ৬ মামলায় আসামি ১৯১০ ॥ গত কয়েকদিন ধরে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অনেক কারখানাতেই চলেছে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে বহিরাগতসহ ওইসব প্রতিষ্ঠানের কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের বিরুদ্ধেও। এ সব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ছয়টি মামলা দায়ের করেছে কর্তৃপক্ষ।

পাঁচটি মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৯১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। একটি মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হলেও সংখ্যা উল্লেখ নেই। শনিবার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম। এর আগে গত ৫ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আশুলিয়া থানায় মামলাগুলো দায়ের করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। 
জানা যায়, গত বুধবার টঙ্গাবাড়ি এলাকার ন্যাচারাল ডেনিমস লিমিটেড কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সবুজ হাওলাদার বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) আশুলিয়ার বেরন এলাকার ইয়াগী বাংলাদেশ গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার সহকারী ব্যস্থাপক (প্রশাসন) জাহাঙ্গীর আলম অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন ইউসুফ মার্কেট এলাকার ডিসাং সোয়েটার লিমিটেড কারখানার ব্যস্থাপক (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন (তপন)। মামলাটিতে আসামিদের সংখ্যা উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।

×