
ছবি: সংগৃহীত
৬২ বছর বয়সী পলা হার্ড একজন সমাজসেবী ও সাবেক প্রযুক্তি নির্বাহী, যিনি মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে ২০২১ সালে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে সম্পর্কে রয়েছেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্য টাইমস অব লন্ডন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস জানান, ৬৯ বছর বয়সে তিনি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি “আনন্দিত”।
গেটস ২০২৩ সালের শুরুতে তাঁদের সম্পর্কের ব্যাপারে প্রকাশ্যে নিশ্চিত করেন, যদিও তাদের একসঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যেতে শুরু করে ২০২১ সালের শেষ দিক থেকেই।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টুডে অনুষ্ঠানে গেটস বলেন, “আমার একজন সিরিয়াস গার্লফ্রেন্ড আছেন, পলার নাম—আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমরা দারুণ সময় কাটাচ্ছি—অলিম্পিক দেখতে যাচ্ছি, আরও অনেক চমৎকার জায়গায় যাচ্ছি।”
আসুন পলা হার্ডের জীবন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিই—বিল গেটসের সঙ্গে সম্পর্কে আসার আগেও তিনি কে ছিলেন এবং এখন কী করছেন।
প্রাক্তন ওরাকল সিইও মার্ক হার্ডের বিধবা স্ত্রী
পলা হার্ড প্রায় ৩০ বছর ওরাকল ও হিউলেট-প্যাকার্ডের শীর্ষ নির্বাহী মার্ক হার্ডের স্ত্রী ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে মার্ক হার্ডের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল।
তাঁদের দুই মেয়ে রয়েছে—ক্যাথরিন ও কেলি।
প্রযুক্তি খাতের পেশাগত অভিজ্ঞতা
পলা হার্ড যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন থেকে ১৯৮৪ সালে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি ‘ন্যাশনাল ক্যাশ রেজিস্টার’ নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে বিভিন্ন নেতৃত্বের পদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে তাঁর সর্বশেষ পদ ছিল সার্ভিস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট, যেখানে তিনি বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব পরিচালনাকারী একটি দল তত্ত্বাবধান করতেন।
বর্তমানে তিনি ব্যক্তিগত, কর্পোরেট এবং দাতব্য অনুষ্ঠানের জন্য বৈচিত্র্যময় ও “স্মরণীয়” ইভেন্ট আয়োজনের কাজ করেন, যা তাঁর লিঙ্কডইন প্রোফাইলে উল্লেখ রয়েছে।
সমাজসেবী হিসেবে কাজ
পলা হার্ড ও তাঁর প্রয়াত স্বামী নানা সমাজসেবামূলক কাজে নিয়মিত অনুদান দিয়ে এসেছেন।
মার্ক হার্ডের প্রাক্তন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেইলর ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘদিন ধরে দান করে আসছেন পলা। ২০২১ সালে “গিভ লাইট ক্যাম্পেইন”-এ ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বেইলর ইউনিভার্সিটিতে ‘মার্ক অ্যান্ড পলা হার্ড ওয়েলকাম সেন্টার’ উদ্বোধন করা হয়, তাঁদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ।
পলা বলেন, “হার্ড ওয়েলকাম সেন্টার নিয়ে আমাদের পরিবার অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। আমরা এই অনুদান দেওয়ার সময়, মার্ক স্বপ্ন দেখেছিলেন—একটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র পুরো ক্যাম্পাসের এই কোণটিকে রূপান্তর করবে। আজকের এই ফলাফল আমাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমি জানি, তিনি আজ খুব গর্বিত হতেন।”
এছাড়াও তিনি ইউনিভার্সাল টেনিস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যেখানে তিনি পেশাদার টেনিসে যাওয়া কলেজ খেলোয়াড়দের জন্য বার্ষিক পুরস্কার স্পনসর করে থাকেন।
বাগদান নিয়ে গুজব
যদিও ২০২১ সালের অক্টোবরে ও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে খেলাধুলার অনুষ্ঠানে তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায়, তবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতেই তাঁদের সম্পর্ক "সবার জানা" বলে গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে নিউ ইয়র্ক সিটিতে গেটসের সঙ্গে ঘোরার সময় পলার হাতে একটি আংটি দেখা যাওয়ায় বাগদানের গুজব ছড়ায়। তবে গেটসের একজন মুখপাত্র পিপল ম্যাগাজিনকে জানান, আংটিটি অনেক আগের এবং এটি কোনো বাগদানের প্রতীক নয়।
টেনিসের প্রতি ভালোবাসা
বিল গেটস ও পলা হার্ড—উভয়েরই টেনিসের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে।
গেটস এর আগে রাফায়েল নাদাল ও আন্দ্রে আগাসির মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে দাতব্য ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। এমনকি মহামারির সময়ও তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে টেনিস খেলতেন বলে জানান বিজনেস ইনসাইডার-কে।
তাঁদের অন্যতম প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি ছিল ২০২২ সালের লেভার কাপ টেনিস টুর্নামেন্টে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতেও তাঁদেরকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে একটি ম্যাচ উপভোগ করতে দেখা যায়।
অন্যান্য অনুষ্ঠানে উপস্থিতি
এই দম্পতি একাধিক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে অংশ নিয়েছেন।
২০২৩ সালের আগস্টে তাঁরা জেফ বেজোস ও লরেন সানচেজের বাগদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন, যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বেজোসের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রমোদতরীতে।
সেপ্টেম্বরে তাঁরা একসঙ্গে বেইলর ইউনিভার্সিটিতে মার্ক ও পলার নামে প্রতিষ্ঠিত ওয়েলকাম সেন্টারের উদ্বোধনে অংশ নেন।
২০২৪ সালের মার্চে ভারতের বিলিয়নিয়ার মুকেশ আম্বানির ছেলে অনন্ত আম্বানির প্রি-ওয়েডিং অনুষ্ঠানে তাঁরা অংশ নেন, যেখানে তিন দিনব্যাপী আয়োজনে রিহান্নার পারফর্মেন্সও ছিল।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ১০ম ব্রেকথ্রু প্রাইজ অনুষ্ঠানে তাঁরা একসঙ্গে রেড কার্পেটে হাজির হন।
সবশেষে, ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে গেটস ও হার্ডকে একসঙ্গে দেখা যায়। সেখানে তাঁরা গেটসের মেয়ে জেনিফার ও তাঁর স্বামী নাইল নাসারকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহিলা জিমন্যাস্টিকস দলের খেলা উপভোগ করেন।
আবির