ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দান-সহায়তার জন্য সিঙ্গাপুরকে কেন বেছে নিচ্ছেন বিশ্বের সকল ধনীরা?

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ১ জুন ২০২৫

দান-সহায়তার জন্য সিঙ্গাপুরকে কেন বেছে নিচ্ছেন বিশ্বের সকল ধনীরা?

ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কিছু মানুষ এখন শুধু বিলাসবহুল জীবন নয়, সমাজের কল্যাণেও বড় ভূমিকা রাখতে চাইছেন। সেই লক্ষ্যেই তাঁরা বেছে নিচ্ছেন সিঙ্গাপুরকে—তাঁদের দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন ঘাঁটি হিসেবে।

বিল গেটস, রে ডালিও, এডুয়ার্ডো সাভেরিন, এমনকি সিঙ্গাপুরের নিজস্ব কিছু প্রভাবশালী উদ্যোক্তা—সকলেই সম্প্রতি এখানে দান ও সমাজসেবার কাজে আরও সংগঠিতভাবে নাম লিখিয়েছেন।

সিঙ্গাপুরের সরকারও চাইছে ধনীরা এগিয়ে আসুক সমাজের জন্য, তাই বিশেষ "গ্রান্টমেকার স্কিম"-এর মাধ্যমে সহজ শর্তে দাতব্য সংস্থা চালু করার সুবিধা দিচ্ছে। গত তিন বছরে এভাবে গড়ে পাঁচটি নতুন ফাউন্ডেশন নিবন্ধিত হয়েছে প্রতিবছর।

চলুন, দেখি কারা কারা সিঙ্গাপুরকে বেছে নিয়েছেন মানবিক কাজে হাত বাড়াতে।

বিল গেটস: প্রযুক্তির রাজপুত্র এখন দানের পথেও পথিকৃৎ
মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তো শুধু প্রযুক্তির দুনিয়ায় নয়, দানবীর হিসেবেও বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ২০২৫ সালের মে মাসে তিনি ঘোষণা দিলেন, তাঁর বিশাল গেটস ফাউন্ডেশনের নতুন অফিস খুলছে সিঙ্গাপুরে।

প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়ং-এর সঙ্গে দেখা করে গেটস বলেন, “এই অঞ্চলে উদ্ভাবন, টিকা উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির মতো কাজে আমরা আরও সক্রিয় হতে চাই।” বর্তমানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রে ডালিও: সমুদ্র থেকে শিক্ষা—তরুণদের জন্য নতুন পথ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় হেজ ফান্ড Bridgewater Associates-এর প্রতিষ্ঠাতা রে ডালিওও পিছিয়ে নেই।
২০২৩ সালে তিনি সিঙ্গাপুরে তাঁর Dalio Foundation নিবন্ধন করেন।

এই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যেই সিঙ্গাপুরের ৪০০ শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী সমুদ্রবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কর্মসূচি করেছে। ডালিওর কথায়, “শুধু ব্যবসায় নয়, সমাজের ভবিষ্যৎ গড়তেও আমাদের বিনিয়োগ করা উচিত।” তাঁর সম্পদ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার।

এডুয়ার্ডো সাভেরিন: ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, এখন শিক্ষার পৃষ্ঠপোষক
ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এডুয়ার্ডো সাভেরিন ও তাঁর স্ত্রী ইলাইনের প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনও ২০২৩ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে কাজ করছে।

তাঁরা সম্প্রতি সিঙ্গাপুর আমেরিকান স্কুলকে ২০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন—যা শিক্ষায় তাঁদের আস্থার প্রতিফলন। সাভেরিন বর্তমানে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৪.৫ বিলিয়ন ডলার।

লো টাক কোয়াং: কয়লার দুনিয়া থেকে সমাজসেবায় আলো ছড়ানো
ইন্দোনেশিয়ার কয়লাখাতের এক বড় নাম লো টাক কোয়াং তাঁর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দান করছেন শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যে।

২০২৩ সালে গঠিত এই ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে ১৬০ মিলিয়ন ডলার দান করেছে, যার মধ্যে রয়েছে লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসিকে দেওয়া ১০১ মিলিয়ন ডলার অনুদান—নেতৃত্ব তৈরির জন্য।

সালেহ মারিকান: নিজের জন্য নয়, অন্যের ভবিষ্যতের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার
সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সালেহ মারিকান বলেছিলেন, "আমি চাইনি ১০০ মিলিয়ন ডলারে একটি বাড়ি কিনতে—বরং চাই এই অর্থ সমাজের কাজে লাগুক।"

তাঁর ফাউন্ডেশন দান করছে শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায়।
২০২৪ সালে দান করেছেন প্রায় ৫.৫ লাখ ডলার।

কেন সিঙ্গাপুর?
সিঙ্গাপুর শুধু কর ছাড় নয়, দেয় স্থিতিশীলতা, সুশাসন, এবং ভবিষ্যৎ গড়ার এক শক্ত ভিত্তি। এখানকার সরকার ও সমাজ উভয়েই চায় ধনীরা যেন শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্যও কিছু করে যান।

এই সব উদ্যোগ দেখায়, আজকের ধনীরা কেবল সম্পদে বড় নন, হৃদয়ে বড় হতে চাইছেন—এবং সিঙ্গাপুর হয়ে উঠেছে তাঁদের সেই মানবিক যাত্রার প্রিয় ঠিকানা।

মারিয়া

×