
ছবি: জনকণ্ঠ
পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক ভাঁড়ারা শাহী মসজিদ। আনুমানিক ১৭৫৫ সালে, বাদশাহ শাহ আলমের শাসনামলে মসজিদটি নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটি একদিকে যেমন স্থাপত্যগত দিক থেকে দর্শনীয়, তেমনি আধ্যাত্মিক শক্তির কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।
প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ মানত করতে এই মসজিদে আসেন। শিশুদের প্রথম মুখে ভাত দেওয়ার রীতিও এখানে প্রচলিত রয়েছে। অভিভাবকরা মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছ থেকে মুখে ভাত দিয়ে এই ধর্মীয় রীতিতে অংশগ্রহণ করেন।
বর্তমানে মসজিদটির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন হাফেজ সরয়ার হোসেন (২৫)। তিনি প্রতিবেদককে জানান, বাদশাহ দৌলত খানের পুত্র আসমত খান ফারসি ভাষায় মসজিদের নির্মাণ সাল লিখে গিয়েছিলেন। অনেকের মতে, মসজিদের বয়স সাড়ে তিনশ বছরেরও বেশি।
পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত মসজিদটি নিয়ে রয়েছে অনেক লোককথা। জানা যায়, তৎকালীন সময়ের আল্লাহর ওলি ফকির চাঁদ (রহ.) মসজিদের খেদমত করতেন। প্রচলিত আছে, তিনি নৌকা নিয়ে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতেন, কারণ তখন মসজিদটি নাকি পানির ওপর ভেসে থাকত। লোককথা মতে, তিনি দোয়া করে পদ্মা নদীকে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং আজও সেই জায়গাতেই নদী প্রবাহিত হচ্ছে।
১৯৯৫ সালে মসজিদের দানবাক্স নিয়ে দুইটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ বাধে। এতে খিয়াল সরদার ও তাজম মণ্ডল নামে দুই ব্যক্তি নিহত হন, তারিখ ছিল ৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার।
বর্তমানে ভাঁড়ারা শাহী মসজিদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি শুক্রবার হাজার হাজার মুসল্লি এখানে জুমার নামাজ আদায় করতে আসেন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি কারুকার্যমণ্ডিত স্থাপত্যে নির্মিত, যা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
ভাঁড়ারা শাহী মসজিদকে পাবনার অন্যতম ঐতিহাসিক মসজিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লোকমুখে প্রচলিত, মসজিদটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্মিত হয়েছিল। তবে হাফেজ সরয়ার হোসেন এ মতের বিরোধিতা করে বলেন, “এটি সঠিক নয়। মসজিদটি বহু পুরোনো হওয়ায় সঠিক ইতিহাস অনেকে জানেন না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এই মসজিদের খেদমত করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। হাজার হাজার মানুষ এখানে মানত করতে আসে, আর আল্লাহ অনেককেই তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করেন এই মানতের উসিলায়।”
মুমু