ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ময়লার ভাগাড়

​​​​​​​মো. খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ১ জুন ২০২৪

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ময়লার ভাগাড়

.

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ এখন আধুনিক মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কে আগের মতো নেই যানজট। কিন্তু মহাসড়কে এখন যাত্রীদের চলাচলের সময় বিভিন্ন স্পটে স্তূপ আকারে ফেলা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। মহাসড়কটি এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নম্বর নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর ১০ তলা, শিমরাইল, সাইনবোর্ড, সানারপাড় এবং সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর নয়াবাড়ী এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষেই বাড়িঘর, দোকানপাট মিল-কারখানার ময়লা-আবর্জনা ফেলে স্তূপ আকারে রাখা হয়েছে। এতে একদিকে নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের কারণে যানবাহনের যাত্রী, চালক-হেলপার, পথচারী স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এতে দিন দিন স্থানীয়রা বাসিন্দা যানবাহন-যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী যানবাহন চালক, হেলপার যাত্রীরা মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে জরুির ভিত্তিতে স্তূপ আকারে রাখা ময়লা-আবর্জনাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সওজ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সওজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ময়লা-আবর্জনার কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। কিছুতেই মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা রোধ করতে পারছি না। এতে মহাসড়কটির সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়কে হিসেবে গণ্য হচ্ছে। মহাসড়কটি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত আট লেনের মহাসড়কে পরিণত করেছে। ফুটওভা ব্রিজ, ইউটার্ন, ইউলুপ আন্ডারপাসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ায় মহাসড়কটি এখন আধুনিক মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে।

খবর নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কেেপারেশনের নম্বর নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর ১০ তলা, শিমরাইল, সাইনবোর্ড, সানারপাড় এবং সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর নয়াবাড়ী এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষেই বাড়িঘর, দোকানপাট মিল-কারখানার ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এখন ময়লা-আবর্জনার স্তূপ আকারে রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই ময়লা-আবর্জনা মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে ফেলা হচ্ছে। এতে মহাসড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

অন্যদিকে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে পথচারী, যানবাহন চালক, শ্রমিক যাত্রীদের চলাচলের সময় নানাবিধ দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হয়। পথচারী যাত্রীরা ময়লা-আবর্জনার স্থান পার হওয়ার সময় নাকে রুমাল কিংবা টিস্যু চেপে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু সওজ কর্তৃপক্ষ ময়লা-আবর্জনার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। কিছুতেই মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা রোধ করতে পারছে না। স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ের পাশে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর নয়াবাড়ী এলাকায় এক বছর ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে এখন স্তূপ আকারে পরিণত হয়েছে। কখনো কখনো ময়লা-আবর্জনা মহাসড়কের ওপরও চলে আসছে।

নয়াবাড়ী ময়লা-আবর্জনার পাশের দোকানের কর্মচারী ইয়ামিন মিয়া বলেন, নয়াবাড়ী এলাকায় গত এক বছর ধরে মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে উক্ত স্থানে অবস্থান করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দিনে-রাতে প্রকাশ্যেই আশপাশের এলাকার ময়লা-আবর্জনা ভ্যানগাড়িতে করে ট্রাকে করে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে কাঁচপুর বিসিক শিল্পনগরীর মিল-কারখানার ময়লা-আবর্জনা আশপাাশের বিভিন্ন এলাকার ময়লা-আবর্জনা এখানে এনে অহরহ ফেলছে। রাতের বেলা সবচেয়ে বেশি ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার কারণে মহাসড়কের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে মহাসড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। স্থান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির দিনে ময়লা-আবর্জনা ভিজে ময়লা পানি দুর্গন্ধ আর বেড়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জহির হোসেন বলেন, ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে মরা গরু, ছাগল, কুকুর- বিড়াল মুরগিসহ মরা নানা পশুপাখি ফেলা হচ্ছে। এগুলো থেকে দুর্গন্ধের মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সকালে রাতে সবচেয়ে বেশি ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে ডাম্পিং স্থানে পরিণত হয়ে গেছে। আরেক দোকানি ফয়সাল মিয়া বলেন, কাঁচপুর বিসিক শিল্পনগরী ছাড়াও কাঁচপুর বাজার, সোনারপুর, কুতুবপুর কাঁচপুর স্ট্যান্ড এলাকার দোকানপাটের ময়লা-আবর্জনা মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে।

শিমরাইল এলাকার দোকানি সুমন মিয়া বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল একটি ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ডে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকজন অবস্থান করে। কিন্তু শিমরাইল মোড়ের উত্তর দক্ষিণ পাশে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। সিটি করপোরেশনের লোকজন যখন ময়লা-আবর্জনা সময়মতো পরিষ্কার না করেন, তখন এলাকায় পরিবেশ আরও নোংরা হয়ে পড়ে। ময়লা-আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। শিমরাইলের স্থানীয় দোকানিদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছেন না। ফলে ময়লা-আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়।

সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরে আলম মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কথা স্বীকার করে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এলাকায় পড়েছে।

মহাসড়ক দিয়ে অসংখ্য ভিআইপি চলাফেলা করছেন। ছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার লোকজন মহাসড়কের দিয়ে যাতায়াত করছেন। আমরা আমাদের তরফ থেকে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে একাধিকবার সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও ময়লা-আবর্জনা ফেলা ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা নিজেরাই লোকজন দিয়ে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আবারও সেখানে তারা ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলা কিভাবে রোধ করা যায়- আমরা আরও চিন্তনা-ভাবনা করছি। মানুষ সচেতন না হলে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার ফেলা নিষেধ-  ধরনের লোহার সাইনবোর্ড লাগানো হয়। কিন্তু পরদিনই লোহার সাইনবোর্ডটি চুরি হয়ে যাচ্ছে। মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো সুযোগ নেই।

সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনাও মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। শিমরাইল এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এখানে যাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা না হয়, জন্য আওয়ামী লীগের এক বড় নেতাকে দিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারপরও ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না। নিয়ে আমরা খুবই বিপদে আছি। ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মহাসড়কটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্পটগুলোতে মাটি ফেলে নার্সারি তৈরি করে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা আবারও মহাসড়কের অন্য জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলছে।

 

×