
.
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ এখন আধুনিক মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কে আগের মতো নেই যানজট। কিন্তু এ মহাসড়কে এখন যাত্রীদের চলাচলের সময় বিভিন্ন স্পটে স্তূপ আকারে ফেলা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। মহাসড়কটি এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ও ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর ১০ তলা, শিমরাইল, সাইনবোর্ড, সানারপাড় এবং সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ও নয়াবাড়ী এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষেই বাড়িঘর, দোকানপাট ও মিল-কারখানার ময়লা-আবর্জনা ফেলে স্তূপ আকারে রাখা হয়েছে। এতে একদিকে নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের কারণে যানবাহনের যাত্রী, চালক-হেলপার, পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এতে দিন দিন স্থানীয়রা বাসিন্দা ও যানবাহন-যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও যানবাহন চালক, হেলপার ও যাত্রীরা মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে জরুির ভিত্তিতে স্তূপ আকারে রাখা ময়লা-আবর্জনাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সওজ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সওজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ময়লা-আবর্জনার কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। কিছুতেই মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা রোধ করতে পারছি না। এতে মহাসড়কটির সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়কে হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এ মহাসড়কটি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত আট লেনের মহাসড়কে পরিণত করেছে। ফুটওভা ব্রিজ, ইউটার্ন, ইউলুপ ও আন্ডারপাসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ায় মহাসড়কটি এখন আধুনিক মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কেেপারেশনের ১ নম্বর ও ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর ১০ তলা, শিমরাইল, সাইনবোর্ড, সানারপাড় এবং সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ও নয়াবাড়ী এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষেই বাড়িঘর, দোকানপাট ও মিল-কারখানার ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এখন ময়লা-আবর্জনার স্তূপ আকারে রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই ময়লা-আবর্জনা মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে ফেলা হচ্ছে। এতে মহাসড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে পথচারী, যানবাহন চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের চলাচলের সময় নানাবিধ দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হয়। পথচারী ও যাত্রীরা ময়লা-আবর্জনার স্থান পার হওয়ার সময় নাকে রুমাল কিংবা টিস্যু চেপে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু সওজ কর্তৃপক্ষ ময়লা-আবর্জনার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। কিছুতেই মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা রোধ করতে পারছে না। স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ের পাশে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ও নয়াবাড়ী এলাকায় এক বছর ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে এখন স্তূপ আকারে পরিণত হয়েছে। কখনো কখনো ময়লা-আবর্জনা মহাসড়কের ওপরও চলে আসছে।
নয়াবাড়ী ময়লা-আবর্জনার পাশের দোকানের কর্মচারী ইয়ামিন মিয়া বলেন, নয়াবাড়ী এলাকায় গত এক বছর ধরে মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে উক্ত স্থানে অবস্থান করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দিনে-রাতে প্রকাশ্যেই আশপাশের এলাকার ময়লা-আবর্জনা ভ্যানগাড়িতে করে ও ট্রাকে করে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে কাঁচপুর বিসিক শিল্পনগরীর মিল-কারখানার ময়লা-আবর্জনা ও আশপাাশের বিভিন্ন এলাকার ময়লা-আবর্জনা এখানে এনে অহরহ ফেলছে। রাতের বেলা সবচেয়ে বেশি ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার কারণে মহাসড়কের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে মহাসড়কের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এ স্থান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির দিনে ময়লা-আবর্জনা ভিজে ময়লা পানি ও দুর্গন্ধ আর বেড়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জহির হোসেন বলেন, ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে মরা গরু, ছাগল, কুকুর- বিড়াল ও মুরগিসহ মরা নানা পশুপাখি ফেলা হচ্ছে। এগুলো থেকে দুর্গন্ধের মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সকালে ও রাতে সবচেয়ে বেশি ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে ডাম্পিং স্থানে পরিণত হয়ে গেছে। আরেক দোকানি ফয়সাল মিয়া বলেন, কাঁচপুর বিসিক শিল্পনগরী ছাড়াও কাঁচপুর বাজার, সোনারপুর, কুতুবপুর ও কাঁচপুর স্ট্যান্ড এলাকার দোকানপাটের ময়লা-আবর্জনা মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে।
শিমরাইল এলাকার দোকানি সুমন মিয়া বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল একটি ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড। এ বাসস্ট্যান্ডে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকজন অবস্থান করে। কিন্তু শিমরাইল মোড়ের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। সিটি করপোরেশনের লোকজন যখন ময়লা-আবর্জনা সময়মতো পরিষ্কার না করেন, তখন এলাকায় পরিবেশ আরও নোংরা হয়ে পড়ে। এ ময়লা-আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। শিমরাইলের স্থানীয় দোকানিদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছেন না। ফলে ময়লা-আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরে আলম মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কথা স্বীকার করে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এলাকায় পড়েছে।
এ মহাসড়ক দিয়ে অসংখ্য ভিআইপি চলাফেলা করছেন। এ ছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার লোকজন এ মহাসড়কের দিয়ে যাতায়াত করছেন। আমরা আমাদের তরফ থেকে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে একাধিকবার সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও ময়লা-আবর্জনা ফেলা ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা নিজেরাই লোকজন দিয়ে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আবারও সেখানে তারা ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলা কিভাবে রোধ করা যায়- আমরা আরও চিন্তনা-ভাবনা করছি। মানুষ সচেতন না হলে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার ফেলা নিষেধ- এ ধরনের লোহার সাইনবোর্ড লাগানো হয়। কিন্তু পরদিনই লোহার সাইনবোর্ডটি চুরি হয়ে যাচ্ছে। মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো সুযোগ নেই।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনাও মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। শিমরাইল এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এখানে যাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা না হয়, এ জন্য আওয়ামী লীগের এক বড় নেতাকে দিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারপরও ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে আমরা খুবই বিপদে আছি। ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মহাসড়কটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্পটগুলোতে মাটি ফেলে নার্সারি তৈরি করে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা আবারও মহাসড়কের অন্য জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলছে।