ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

কতটা পিছিয়ে গেল তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ২৩ জুন ২০২৫

কতটা পিছিয়ে গেল তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি?

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় রবিবার (২২ জুন) ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টেলিভিশন ভাষণে দাবি করেন, “ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।”

এই হামলা এমন সময় চালানো হয় যখন ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালাচ্ছে এবং পুরো অঞ্চলে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে।

কোন কোন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হয়?
ট্রাম্প জানান, ইরানের ফোরদো, নাটানজ ও ইসফাহান স্থাপনাগুলোতে পূর্ণমাত্রার বোমা নিক্ষেপ করা হয়। ইরানি কর্মকর্তারাও এই তিনটি স্থাপনায় হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফোরদো একটি ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা পাহাড়ের নিচে নির্মিত হওয়ায় একে ধ্বংস করতে প্রয়োজন হয় ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় ১৪টি GBU-57 টাইপের শক্তিশালী বোমা ব্যবহার করে, যা ২০০ ফুট গভীর ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম।

নাটানজ ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এখানে রয়েছে গবেষণা প্লান্ট (PFEP) ও জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ প্লান্ট (FEP)। এখানে কয়েক হাজার সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে, যা পারমাণবিক কাজে ব্যবহৃত হয়।

ইসফাহান একটি প্রাচীন ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্র, যেখানে পারমাণবিক গবেষণা ও পরিশোধন কাজ চলত। এই স্থাপনাটি যুক্তরাষ্ট্র ২০টির বেশি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে লক্ষ্য করে।

এই বোমা হামলা মিশনে অংশ নেয় প্রায় ১২৫টি মার্কিন যুদ্ধবিমান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল B-2 স্টেলথ বোমার, যা রাডার এড়িয়ে গভীর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম। ইরান এই মিশনের কোনো আগাম তথ্য পায়নি। মিশন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরেই তারা জানায়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এটি সরাসরি আগ্রাসন। কূটনৈতিক পথ এখন বন্ধ। ইরান আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।”

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে উপ-রাজনৈতিক পরিচালক হাসান আবেদিনি দাবি করেন, “হামলার সময় এসব স্থাপনা আগেই খালি করে দেওয়া হয়েছিল। তাই বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।”

তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পুরোপুরি ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

কতটা পিছিয়ে পড়ল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি?
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দাবি করছে, এই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বছরের পর বছর পিছিয়ে যাবে, কারণ তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত মূল যন্ত্রপাতি হারিয়েছে। তবে ইরান বলছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে এবং এটি সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা IAEA আবারও জানিয়েছে, ইরান পারমাণবিক বোমা বানানোর কাছাকাছি ছিল—এমন কোনো প্রমাণ তাদের হাতে নেই।

মুমু ২

×