যেখানে অপরাধ নেই বললেই চলে—এই দেশ এখন ভ্রমণের স্বর্গ!

ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময়—বিশেষ করে পরিবার, একাকী ভ্রমণকারী কিংবা নিশ্চিন্তে কিছু সময় কাটাতে আগ্রহীদের জন্য—নিরাপত্তা সবসময়ই শীর্ষ বিবেচ্য বিষয়। আর সেই দিক থেকে ২০২৫ সালেও শীর্ষস্থানে আছে আইসল্যান্ড, গ্লেশিয়ার, গিজার এবং জাদুকরী অরোরা বোরিয়ালিসের দেশ।

আন্তর্জাতিক আর্থিক তুলনামূলক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেলোসেইফ (HelloSafe) প্রকাশিত গ্লোবাল ট্রাভেল সেফটি ইনডেক্স ২০২৫–এ আইসল্যান্ড পেয়েছে প্রথম স্থান। এই সূচকে ৩৫টি নিরপেক্ষ মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন ভ্রমণ গন্তব্যের নিরাপত্তা মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সহিংসতার প্রবণতা, সশস্ত্র সংঘর্ষের ঝুঁকি, স্বাস্থ্যসেবার মান, সামরিকীকরণের মাত্রা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার।

কেন আইসল্যান্ড?

কালো বালুর সৈকত, ধোঁয়া ওঠা লাভার মাটি, গর্জনরত জলপ্রপাত—আইসল্যান্ড প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বপ্নপুরী। কিন্তু এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাইরে রয়েছে শান্তিপূর্ণ, সহনশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ একটি সমাজব্যবস্থা।

গ্লোবাল ইনডেক্সে আইসল্যান্ড পেয়েছে সবচেয়ে কম বিপদের স্কোর, অর্থাৎ সবদিক বিবেচনায় এটি ভ্রমণকারীদের জন্য সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এটি অন্যান্য আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সূচক, যেমন গ্লোবাল পিস ইনডেক্স-এও নিয়মিত শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।

আইসল্যান্ডকে এতটা নিরাপদ করে তোলে যেসব কারণ:

• অপরাধের হার অত্যন্ত কম, এমনকি শহর এলাকাতেও

• মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা

• বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক কোন সংঘাতে জড়িত নয়

• দুর্যোগ মোকাবিলায় শক্তিশালী অবকাঠামো

• ঘনিষ্ঠ সামাজিক বন্ধন ও একাত্মতাবোধ

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৫ সালের শুরুতেই আইসল্যান্ডকে বিশ্বের তৃতীয়-সুখী দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যক্তি পর্যায়ের সুখ ও জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে সরাসরি একটি সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়।

সব ধরনের ভ্রমণকারীর জন্য এক নিরাপদ স্বর্গ

আপনি যদি গোল্ডেন সার্কেল রোড ট্রিপে বের হন, অগ্ন্যুৎপাতের ধারে হাইকিং করতে চান, বা গরম জিওথার্মাল হট স্প্রিং-এ ডুব দিতে চান—আইসল্যান্ড দিচ্ছে দুঃসাহসিকতা ও নিশ্চিন্ততার একসাথে স্বাদ।

এটি বিশেষভাবে উপযোগী:

• একাকী ভ্রমণকারীদের জন্য, কারণ এখানে আতিথেয়তা ও নিরাপত্তার অনন্য পরিবেশ রয়েছে

• পরিবারের জন্য, যেখানে শিশুদের উপযোগী কার্যক্রম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হয়

• প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য, যারা চাইলেই অনায়াসে প্রকৃতির বিশালতা উপভোগ করতে পারেন

নিরাপত্তা, সৌন্দর্য ও টেকসই ভ্রমণের অনন্য মেলবন্ধন

আইসল্যান্ড শুধু নিরাপদ নয়—এটি একটি পরিবেশবান্ধব, সংস্কৃতিমনস্ক এবং দৃষ্টিনন্দন ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দেয়। শীতকালে অরোরা বোরিয়ালিস থেকে শুরু করে গ্রীষ্মের মিডনাইট সান, এখানে প্রকৃতি ও পরিপূর্ণতা পাশাপাশি চলে।

আজকের অনিশ্চিত পৃথিবীতে যেখানে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত প্রায়ই দুশ্চিন্তার ছায়ায় ঢেকে যায়, সেখানে আইসল্যান্ড হচ্ছে নিরাপত্তা ও প্রশান্তির এক উজ্জ্বল বাতিঘর।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কম অপরাধ, শক্তিশালী অবকাঠামো এবং শান্তিপূর্ণ সংস্কৃতির কারণে ২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে আবারও নিজেকে প্রমাণ করেছে এই ইউরোপীয় দ্বীপ।

তাই, যদি আপনি দূরে কোথাও নিশ্চিন্তে ভ্রমণে যেতে চান—তাহলে আইসল্যান্ড অবশ্যই থাকা উচিত আপনার ভ্রমণ তালিকার শীর্ষে।