ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

বৈদ্যুতিক ব্যাটারির জন্য হুমকির মুখে সমুদ্রের ‘আমাজন’

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ২২ জুন ২০২৫

বৈদ্যুতিক ব্যাটারির জন্য হুমকির মুখে সমুদ্রের ‘আমাজন’

ছবি: সংগৃহীত

ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারির প্রয়োজনীয় উপাদান নিকেল উত্তোলনের দৌড়ে ধ্বংসের মুখে পড়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের অপূর্ব জীববৈচিত্র্যের এক অঞ্চল। ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে পাপুয়া প্রদেশের রাজা আম্পাত দ্বীপপুঞ্জ, যাকে ‘সামুদ্রিক আমাজন’ বলা হয়, এখন চরম পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছে।

নিকেল স্টেইনলেস স্টিলের পাশাপাশি ইভি (Electric vehicle) ব্যাটারিতে ব্যবহৃত হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এই খনিজ উত্তোলনের ফলে সমুদ্র ও বনভূমি উভয়ই হুমকির মুখে।

রাজা আম্পাতের কাওয়েই দ্বীপে দেখা গেছে খনিজ উত্তোলনের ভয়াবহ চিত্র। দ্বীপের বনভূমি উজাড় করে তৈরি করা হয়েছে বিশাল ময়লা রাস্তা। জমে থাকা খনির পানি তৈরি করেছে ছোট ছোট পুকুর। এসবের ফলে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জোরালো পরিবেশ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সরকার এ অঞ্চলে খনিজ উত্তোলনে নিয়োজিত পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে চারটির লাইসেন্স বাতিল করেছে। দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজা আম্পাতের জীববৈচিত্র্য বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত, তাই তাকে রক্ষা করা জরুরি।

তবে খননের ভয় এখনো শেষ হয়নি। এখানকার গ্যাগ দ্বীপে এখনো খনন চালানোর অনুমতি রয়েছে। প্রবালপ্রাচ্যের সংরক্ষণকর্মী মার্ক এর্ডম্যান বলেন, ‘খনিজ উত্তোলনের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্তে আমরা অবাক ও আনন্দিত। এই অঞ্চল সামুদ্রিক জীবনের জন্য বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্লোবাল উইটনেস’-এর তথ্য অনুযায়ী, রাজা আম্পাতে প্রবালপ্রাচ্য ও সামুদ্রিক জীবন পলিমাটির কারণে হুমকির মুখে। আকাশ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এখানে খনিজ উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত মাটি ৫০০ হেক্টর বেড়েছে, যা ৭০০টি ফুটবল মাঠের সমান।

ফরেস্ট ওয়াচ ইন্দোনেশিয়ার গবেষণায় বলা হয়েছে, নিকেল খননের কারণে দ্বীপজুড়ে বনভূমি ধ্বংস হয়েছে, যা ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। নীল সাগরের পানি এখন ঘোলা ও বাদামি রঙ ধারণ করেছে।

বিশ্বজুড়ে নিকেল সরবরাহে শীর্ষে থাকা ইন্দোনেশিয়া এখন টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জের মুখে। সুলাওয়েসি দ্বীপে ব্যাপক আকারে খনিজ উত্তোলন চলছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এতে দারিদ্র্য কিছুটা কমলেও প্রকৃতির ওপর পড়ছে ভয়াবহ প্রভাব।

জাকার্তাভিত্তিক পরিবেশ আন্দোলন সংস্থা ‘জাতাম’-এর কর্মী ইমাম শোফওয়ান বলেন, ‘নিকেল জলবায়ু সংকটের সমাধান হতে পারে, কিন্তু তার বিনিময়ে আমরা হারাচ্ছি বন, কৃষিজমি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা।’

 

সূত্র: বিবিসি।

রাকিব

×