ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটি শেষে আপন চেহারায় রাজধানী

ফের জীবন সংগ্রাম টিকে থাকার লড়াই, কর্মচাঞ্চল্য

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

ফের জীবন সংগ্রাম টিকে থাকার লড়াই, কর্মচাঞ্চল্য

ঢাকা আর ফাঁকা নেই। ঈদের ছুটি শেষে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্য। বুধবার গুলিস্তান

ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষ হয়েছে। ছুটি শেষে ফের কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে রাজধানী। এরই মাঝে খুলেছে সরকারি বেসরকারি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বেশিরভাগ  কর্মকর্তা কর্মচারী কাজে যোগ দিয়েছেন। ফিরছেন বাকিরাও। ফলে ঢাকা আর ফাঁকা নেই। আড়মোরা ভেঙে জেগে উঠছে। ধারণা করা হচ্ছে, আর কয়েকদিনের মধ্যেই ফিরবে আপন চেহারায়।  
‘আপন চেহারা’ যে কী সে তো কারও অজানা নয়। বিপুল জনসংখ্যার চাপ। জীবনসংগ্রাম। টিকে থাকার লড়াই। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা। ছোটাছুটি। এই তো ঢাকা। ব্যক্তিজীবনের নানা সংকট ছাড়াও এই শহরে আছে বহুবিধ দূষণ যানজট বিড়ম্বনা। ঈদের ছুটি এসব থেকে, বলা চলে, মুক্তি দেয়। ঢাকায় সারা বছর ছোটাছুটি করে মহাক্লান্ত মানুষেরা এ সময় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বুব ভরে নিশ্বাস নেন। জীবনী শক্তি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেন। 
এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের আগে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহর ছেড়ে গিয়েছিলেন। ঈদ উদ্যাপিত হয় ১১ এপ্রিল। ৯ এপ্রিল থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে ঢাকার রাস্তা-ঘাট। ঈদের দিন এবং পরের দুই দিনও ছিল অনেকটা জনশূন্য। যারা ঢাকায় ঈদ উদ্যাপন করেন তারা বরাবরই এই সময়টার জন্য মনে মনে অপেক্ষা করে থাকেন। ফাঁকা ঢাকা উপভোগ করেছেন তারা। ঈদের ছুটিতে চিরচেনা রাস্তাগুলোকে অচেনা মনে হয়েছে।

গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। সাধারণ সময়ে যানজটে নাকাল নগরবাসী ঈদে মুহূর্তেই একপ্রান্ত  থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছে যেতে পেরেছেন। ফুটপাত হকারদের দখলমুক্ত ছিল। ঈদের কয়েকদিন দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল সব বন্ধ ছিল। 
তবে এবার ঈদ ছাড়াও ছিল বর্ষবরণ উৎসবের বাড়তি আনন্দ। এই আনন্দের সঙ্গী হতে একটু আগেভাগেই অনেকে ঢাকায় ফেরেন। ১৪ এপ্রিল ছিল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন।

বিশেষ দিনটি সামনে রেখে ১৩ এপ্রিল ঢাকায় ফিরতে শুরু করে উৎসবপ্রিয় বাঙালি। ফলে ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠানে ভিড় ছিল লক্ষ্য করার মতো। মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও অংশ নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। মূলত তখন থেকেই কাটতে শুরু করে শূন্যতা। এর পর যতদিন গেছে ঢাকার রাস্তা-ঘাটে মানুষের উপস্থিতি ততই বেড়েছে। বর্তমানে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের উৎসব আনন্দের রেশ থাকলেও, ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য।

গত সোমবার থেকে অফিস বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সব খুলে দেওয়া হয়। আগের রাতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ফিরে আসেন কর্মস্থলে। বর্তমানে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আসলে। ফলে ঢাকাকে আর ফাঁকা মনে হচ্ছে না। আগারগাঁওয়ের অফিসবাপাড়ায় আগের মতোই ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারি দপ্তর অধিদপ্তরের সিঁড়িতে গম গম করছে মানুষ।

বুধবার পাসপোর্ট নবায়নের কাজে পাসপোর্ট অফিসে এসেছিলেন হাবিুর রহমান নামের এক তরুণ। তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ী। ঈদ শেষ। এখন আবার ব্যবসার কাজে ছুটতে হবে। দোকানের জন্য মালামাল কিনতে চীনে যাব। তাই জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট নবায়ন করতে এসেছি। সেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

ঈদে ব্যাপক কেনাকাটার পর খুলেছে মার্কেট শপিংমলগুলোও। নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ফরহাদ বলছিলেন, ‘কাস্টমার এখন একটু কম। আমরা না খুললে তো ধরেন কেউ আসবেই না। তাই খুলছি। বিক্রি-টিক্রিও হইতাছে।’  
ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। দেখা দিচ্ছে যানজটও। গত কদিন মেট্রোরেলে বসেই যাতায়াত করা গেছে। বুধবার দুপুরের পর ফার্মগেট স্টেশন থেকে মেট্রোতে ওঠার সময় হিমশিম খেতে হয়েছে আগের মতোই। টিকিট সংগ্রহের লাইনও বেশ লম্বা। আলি ঈমাম নামের এক যাত্রী বলছিলেন, ঈদ উপলক্ষে কয়েকটা দিন দারুণ কাটিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আবারও জীবন যুদ্ধে।

একদিকে গরম বেড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। তবে থামলে তো চলবে না। অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে ঈদে। ঘাটতি দূর করতে বাড়তি সময় কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।    
এদিকে, আগামী রবিবার থেকে খুলছে ঢাকার প্রায় সব স্কুল কলেজ। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে। এভাবে সবই সচল হবে। সক্রিয় হবে। আপাতত সেই অপেক্ষা।

×