ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘নৃত্য শুধু বিনোদন নয়, জীবনের প্রতিচ্ছবি’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

‘নৃত্য শুধু বিনোদন নয়, জীবনের প্রতিচ্ছবি’

আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস উপলক্ষে শিল্পকলার নাট্যশালায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে শামীম আরা নীপাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়

সোমবার ছিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। সেই সুবাদে নৃত্যশিল্পীদের মননে বিরাজ করেছে প্রাণের স্পন্দন। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে উপস্থাপিত হয়েছে নান্দনিক নৃত্যশৈলী। একুশে পদকজয়ী নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপাকে দেওয়া হয়েছে নৃত্যদিবসের সম্মাননা। বের হয়েছে বর্ণিল শোভাযাত্রা। সঙ্গে ছিল দিবসনির্ভর আলোচনা। সে আলোচনায় বক্তারা নৃত্যকে শুধু বিনোদনের জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

সব মিলিয়ে উৎসবমুখর আবহে নানা আয়োজনে উদ্যাপিত হয়েছে দিবসটি। বৈশাখী সকাল থেকেই শুরু হয় দিবসনির্ভর কর্মতৎপরতা। এরপর বিকেল গড়ানো সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি চলেছে নাচনির্ভর বহুমাত্রিক আনুষ্ঠানিকতা। এদিন একই সঙ্গে নৃত্যদিবস উদ্যাপনে পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা ও নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।  
আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস উপলক্ষে ২৩ এপ্রিল থেকে সেমিনার, কর্মশালা ও পরিবেশনায় সজ্জিত সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নৃত্যশিল্পী সংস্থা। ‘বিশ্ব নাচে ছন্দময়, আসবে শান্তি কাটবে ভয়’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার শেষ দিন ছিল সোমবার। এদিন সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মঙ্গল নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে দিবসনির্ভর অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরিবেশনা শেষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা।

সকালের পালা শেষে সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী টানা হয়। এ পর্বের শুরুতে সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতার পঙ্্ক্তিমালার সহযোগে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশিত নাচের মাধ্যমে উঠে আসে হাজার বছরের বাংলার ইতিহাসহ-ঐতিহ্য, সংগ্রামসহ নানা বিষয়। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবসের বাণী পাঠ করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ ও শিবলী মোহাম্মদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাজু আহমেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংস্থার সভাপতি মীনু হক। আলোচনা শেষে নৃত্যগুরু শামীম আরা নীপাকে এবারের নৃত্যদিবসের সম্মাননা জানানো হয়। এ ছাড়া ২০২২ ও ২০২৩ সালের নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরী স্মৃতি পদক প্রদান কর হয় মো. ইলিয়াস চৌধুরী ও ড. নিগার চৌধুরীকে।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, নৃত্যশিল্প চর্চার মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধ ও আলোকিত হয় আমাদের অন্তর্লোক, মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার রাজ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে পায় আমাদের চিত্তলোক। নৃত্যকলা মহিমান্বিত একটি শিল্প মাধ্যম। তাই নৃত্য শুধু বিনোদন নয়, জীবনের প্রতিচ্ছবি। কারণ, নৃত্যের উপস্থাপনা অনেক বেশি মাত্রায় জীবনঘনিষ্ঠ। 

আলোচনা শেষে মুনমুন আহমেদের পরিচালনায় রেওয়াজ পারফরমার্স একাডেমি, তামান্না রহমানের পরিচালনায় নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্র, সাজু আহমেদের পরিচালনায় কথক নৃত্য সম্প্রদায়, সামিনা হোসেন প্রেমার পরিচালনায় ভাবনা, র‌্যাচেল প্রিয়াঙ্কা প্যারিসের পরিচালনায় বাংলাদেশ গৌড়ীয় নৃত্য একাডেমির শিল্পীরা নাচ করেন। এ ছাড়া পরিবেশনা পর্বে অংশ নেয় অনীক বোসের স্পন্দন, সেলিনা হকের দল নৃত্যসুর, ওয়াহিদ পারভিন অলিভের নৃত্য রং, আনসার ড্যান্স একাডেমি, ফাতেমা কাসেমের ঝঙ্কার ললিতকলা একাডেমি, মো. মাসুদ রানার পরিচালনায় বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব, শরীফ মিয়ার পরিচালনায় সৃষ্টিশীল একাডেমি, আরিফ হোসেন শামীমের পরিচালনায় নবরস, ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস, এম আর ওয়াসেকের পরিচালনায় নন্দন কলাকেন্দ্র, জুয়াইরিয়া মৌলি ও হাসান ইশতিয়াক ইমরানের পরিচালনায় ক্যাথাকিয়া, গোলাম মোস্তফা ববির পরিচালনায় নৃত্যবৃতি, অন্তর সরকারের পরিচালনায় কালারস অফ হিল, এমদাদুল হক মিলনের পরিচালনায় হৃদমিক ড্যান্স সেন্টার, বেনজির সালামের পরিচালনায় নৃত্যছন্দ ও প্রান্তিক দেবের পরিচালনায় দেব ড্যান্স একাডেমি।
এদিকে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবসের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়। বিকেলে জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের পর বের কবা হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। সান্ধ্যকালীন আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, শিক্ষাবিদ ড. নাসরীন আহমেদ এবং ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের ইনচার্জ ড. সুসান ভাইজ। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি লুবনা মারিয়াম।
আলোচনা শেষে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্যরা প্রথমে নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর একে পরিবেশনায় অংশ নেয় কল্পতরু, ভঙ্গিমা ড্যান্স একাডেমি, সোহাগ ড্যান্স গ্রুপ, ভারতের সুমন ম-ল, বাফা, সম্পূর্ণকলা একাডেমি ও ঘুঙুর একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। 
আজ মঙ্গলবার একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। বিকেল থেকে রাত অবধি চলমান অনুষ্ঠানে থাকবে বৈচিত্র্যময় নাচের পরিবেশনা।

×