ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্যারিসেও বিক্ষোভ

কলাম্বিয়া ভার্সিটির দখল নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

কলাম্বিয়া ভার্সিটির দখল নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা

ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেওয়ায় টেক্সাস ভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে এক শিক্ষার্থীকে ‘চ্যাংদোলা’ করে নিয়ে যায় পুলিশ

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলা ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভকারীরা নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দখল নেয়। ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ঢুকে সামান্য ভাংচুরও চালায়। যেসব শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ করছেন তাদের মঙ্গলবার সকাল থেকেই বহিষ্কার শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ খবর ছড়িয়ে পড়ামাত্র ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ঢুকে প্রশাসনিক ভবনের দখল নেয়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সপ্তাহ ধরে তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন শত শত শিক্ষার্থী। কলাম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন নামের ছাত্রদের একটি গ্রুপ জানায়, তারা হ্যামিল্টন হলের দখল নিয়েছে। হলটি ১৯৬৮ সালের ছাত্র বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। খবর বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস ও আলজাজিরা অনলাইনের।

একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও চিত্রে দেখা যাচ্ছে, হ্যামিলটন হলের জানালা ভাঙা, বিক্ষোভকারীরা কাঠের টেবিল এবং চেয়ার দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপার্টহেড ডাইভেস্ট নামের ছাত্রদের আরেকটি গ্রুপ জানায়, তারা এই বছরের শুরুতে গাজায় ইসরাইলি হামলার পর মৃত অবস্থায় পাওয়া ৬ বছর বয়সী কন্যাশিশু হিন্দ রজবের সম্মানে ভবনটি দখল করেছে।

১৯৬০ এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইসরাইলবিরোধী এই আন্দোলন। এই বিক্ষোভে ৯০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা বিক্ষোভে প্রায় ১৯০টি পরামর্শক গোষ্ঠী তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে এবং চাপের মুখেও ছাত্রদের প্রশংসা করেছেন তারা।

ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছিল যে, সোমবার দুপুর দুইটার মধ্যে তাঁবু ছেড়ে না গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মাঝে পড়তে হবে বলে বিক্ষোভকারীদের। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা ওই স্থানে সমাবেশ করে। টেক্সাসের অস্টিনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে চলমান আরেকটি বিক্ষোভ থেকে ডজনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, বিক্ষোভকারীদের থাকার জায়গাগুলোতে ‘বেসবল-আকারের পাথর’ পাওয়া গেছে এবং ‘অধিকাংশ বিক্ষোভকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ফ্রান্সেও ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী প্যারিসসহ দেশটির একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন। ফলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ইসরাইলকে সমর্থন কমিয়ে দেওয়ার সাময়িক সিদ্ধান্ত নেয়।   
উল্লেখ্য, ইসরাইলের পর ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি ইহুদির বাস। পাশাপাশি ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম বাস করে দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কাজ করছেন আইনজীবী জর্জ লব। তিনি বলেন, অস্টিন ক্যাম্পাসে সোমবার প্রায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চলতি মাসে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি ক্যাম্প উচ্ছেদ করার পর থেকে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একই ধরনের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, কলাম্বিয়ায় যা ঘটছে, তা সম্পূর্ণ অপমানজনক। ক্যাম্পাসটিতে এখন ইহুদিবিদ্বেষী ছাত্র ও শিক্ষক ছড়িয়ে পড়েছে। লুইজিয়ানার এই রিপাবলিকান নেতা আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত শফিককে তার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। এর আগে ডেমোক্র্যাটদের একটি দল কলম্বিয়ার ট্রাস্টি বোর্ডকে ‘তাঁবুগুলো সরাতে ব্যর্থ হলে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে’ পদত্যাগ করতে বলে।

নিউইয়র্কের অভিজাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন গাজায় যুদ্ধ ও ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে দেশটিতে চলমান বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ১৮ এপ্রিল ক্যাম্পাসের কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে নির্মিত একটি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ১০০ জনেরও বেশি ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ ঘটনার পর বিক্ষোভকারীরা আরও দ্বিগুণ উদ্যমে নতুন করে তাঁবু খাটাতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের আরও ২২টি প্রদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলছে। সোমবার রাতে, ভার্জিনিয়ার জর্জিয়া, নিউইয়র্কের কর্নেল, লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়াসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি, ফিলিস্তিনির স্বাধীনতা, গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরাইলের আর্থিক সাহায্য বর্জন।

ধাওয়া খেয়ে পালালেন জার্মান রাষ্ট্রদূত ॥ গাজা যুদ্ধে দখলদার ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতকে ধাওয়া দিয়েছেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিন জাদুঘরে এ ঘটনা ঘটে। এদিন জাদুঘরটি পরিদর্শনে যান ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জার্মান দূত ওলিভার ওকজা। জাদুঘরটি অবস্থিত পশ্চিমতীরের বিরজেত বিশ্ববিদ্যালয়ে যা রামাল্লাহ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এক্সে প্রকাশিত কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জার্মান দূতকে পেছন থেকে ধাওয়া দিচ্ছেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা।

ওই সময় তারা ‘বের হয়ে যাও, বের হয়ে যাও’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের ধাওয়া খেয়ে জার্মান দূত দৌড়ে গিয়ে তার গাড়িতে উঠে পড়েন। জার্মান দূত তার গাড়িতে ওঠার পর সেটিকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সময় গুলির শব্দও শোনা যায়। উল্লেখ্য, ইউরোপে ইসরাইলের মিত্র হিসেবে পরিচিত জার্মানি।

×