ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মে মাস শুরু হলো- যে ফুল দেখে বুঝবেন

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

মে মাস শুরু হলো- যে ফুল দেখে বুঝবেন

রাজধানীর একটি নার্সারিতে ফোটা গোলাকার লাল বল সদৃশ্য ফুল মনে করিয়ে দিচ্ছে শুরু হয়েছে মে মাস

না, ক্যালেন্ডারের পাতার দিকে তাকাতে হবে না। একটি ফুল দেখেই বলে দেওয়া যাবে, এখন কোন্ মাস! কি, অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই মুহূর্তে আশপাশের বাগানে বা নার্সারির দিকে একটু শুধু তাকান। সামান্য খোঁজ করুন। লাল রঙের ক্রিকেট বলের মতো গোলাকার একটি ফুল কি দেখতে পারছেন? যদি পান, নিশ্চিত বুঝবেন, মে মাস শুরু হয়ে গেছে। এই একটি ফুল কেবল মে মাসে ফোটে। একদিকে মাসের শুরু হয়, অন্যদিকে দৃশ্যমান হতে থাকে প্রিয় ফুল। এ কারণে মে ফ্লাওয়ার নাম। মে ফ্লাওয়ার মনে করিয়ে দেয় মাসটি এখন মে। 
কাছাকাছি বা একইসময়ে আরও অনেক জাতের ফুলে ফোটে। এবারও ফুটেছে। কৃষ্ণচূড়ায় ক্রমে রঙিন হয়ে উঠছে রাজধানী। মৃদু হাওয়ায় দুলছে সোনালু ফুলের ঝুলন্ত মঞ্জরি। কিন্তু এ দুটো ফুলই মে মাস শুরুর আগে থেকে ফুটছে। মাস শেষ হওয়ার পরও পাওয়া যাবে। মে ফ্লাওয়ার মাসের শেষে পাওয়া যায় না বললেই চলে। মাস শুরুর আগেও পাওয়া যায় না।

লক্ষ্য করে দেখা গেছে এক মাস আগে, মানে, এপ্রিলে যেখানে লম্বা সবুজ পাতা ছিল শুধু, মে মাসের প্রথম দিন সেখানেই লাল রঙের আকর্ষণীয় ফুল উঁকি দিয়েছে! গোলাকার হওয়ায় এটি বল লিলি বা গ্লোব লিলি নামেও পরিচিত। আরও নাম আছে। এই যেমন, পাউডার পাফ লিলি বা আফ্রিকান ব্লাড লিলি। ফুলটির তেমন ঘ্রাণ নেই। তবে সৌন্দর্য দিয়ে মুগ্ধ করে রাখে। বিশেষ ব্যতিক্রম ফুল যারা দেখেছেন আগে, তাদের কথা আলাদা। নতুন করে কেউ দেখলে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না।

সাধারণ ফুলের মতো পাপড়ি হয় না মে ফ্লাওয়ারের। গড়নের দিক থেকে কদম ফুলের সঙ্গে কিছুটা মিল আছে। তবে কদমের চেয়ে আকারে বড়। হাতের মুঠোয় ধরে না। সজারুর গায়ের কাঁটার সঙ্গেও ফুলটির মিল পাওয়া যায়। খাড়া খাড়া কাঁটা দেখে মনে হতে পারে ফুলের দিকে হাত বাড়ালেই বিপদ! আদতে কাঁটা নয় এগুলো। রক্তিম বলটি আসলে নরম। আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিলে নরম কোমল অনুভূতিই হয়। 
মে ফ্লাওয়ারের রং প্রথম দিকে থাকে হালকা লাল। ক্রমে তা রক্তের মতো গাঢ় হয়ে ধরা দেয়। এ কারণে ফুলটির দিকে তাকিয়ে মে দিবসের সেই মহা ইতিহাসের কথাও যেন মনে পড়ে যায়। ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরে ঐতিহাসিক শ্রমিক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে এ প্রতিবাদ গড়ে তুলে। কিন্তু যথারীতি পড়তে হয় বাধার মুখে।

পুলিশ শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। প্রায় ১১ জন শ্রমিক নিহত হয় সেদিন। ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় আরও ৬ জনকে। প্রতিবছর পহেলা মে পৃথিবীজুড়ে এই নিষ্ঠুর ইতিহাস স্মরণ করা হয়। একই দিন ফোটা রক্তলাল মে ফ্লাওয়ার যেন একাত্মতা ঘোষণা করে মে দিবসের চেতনার সঙ্গে। 
উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, মে ফ্লাওয়ারের অস্তিত্ব প্রথম আবিষ্কৃত হয় আফ্রিকা মহাদেশে। বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে হয়। বাংলাদেশেও বহুকাল ধরে আছে। গাছ লম্বায় ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুল প্রায় ৩ সেমি চওড়া হয়। পাপড়ি ও পুংকেশর অসমান। একটি গাছে একাধিক ফুল হয়। পরিণত ফুল অক্ষত অবস্থায় ঝরে পড়ে না। আস্তে আস্তে ফুলের বিভিন্ন অংশ খসে পড়তে থাকে। এক সময় হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো চুপসে যায়। 
নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অবশ্য ততদিনে একই গাছে নতুন ফুল ফুটতে শুরু করে। এভাবে মে মাসের প্রায় পুরোটাজুড়েই সৌন্দর্য বিলিয়ে যায়। গাছ থেকে সব ফুল ঝরে পড়ার পর পাতার সৌন্দর্য প্রধান হয়ে ওঠে। কয়েক মাস এই পাতারা সতেজ থাকে। তারপর পাতা কা- সবই শুকিয়ে যায়। কবিগুরু যেমনটি লিখেছিলেন, ‘দেখা  দেবে বলে তুমি হও যে অদর্শন ...।’ মে ফ্লাওয়ারও দেখা দেওয়ার শর্তেই যেন মাটির নিচে গুটিয়ে নেয় নিজেকে।

×