ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২১ মে ২০২৪

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকায় দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ আমাদের জমি কমছে আর মানুষ বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়া এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে পারে কারণ অস্ট্রেলিয়া কৃষি প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত। 
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর পেনি ওং মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী বলে জানান পেনি ওং।  
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনে সফল হয়েছে কারণ গত ১৫ বছরে কৃষি উৎপাদন বহুগুণ বেড়েছে, তবে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে উৎপাদন আরও বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো শুধু তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু জলবায়ু ইস্যুতে সেগুলো পূরণ করছে না।
 বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে তিনি উল্লেখ করেন, সাক্ষাৎকালে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী তাঁর হতাশা ব্যক্ত করেছেন (জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার কারণে)।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন। বলেন, আমরা অলস বসে থাকিনি (উন্নত দেশগুলোর জন্য), বরং আমরা আমাদের জনগণকে বাঁচাতে আমাদের নিজস্ব জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করেছি; আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করছি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কবলে পড়ে। রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিন ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের যুদ্ধ বা সংঘাতের বিরুদ্ধে। আমরা সব দ্বন্দ্ব নিরসনে আলোচনা ও সংলাপ চাই ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে । বাংলাদেশ এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করলেও তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে না।

বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও এর আয়তন খুবই কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেজন্য তাঁর সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার সারাদেশে ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। অস্ট্রেলীয় উদ্যোক্তারা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে এবং দেশের বিনিয়োগ-বান্ধব সুবিধাগুলো ব্যবহার করে তাদের মুনাফা অর্জন করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে দারিদ্র্যের মাত্রা ৪১ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের মাত্রা ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
উভয়ে কৃষি, শিক্ষা ও বাণিজ্যসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা  এসব বিষয়ে দেশ দুটির মধ্যে যোগাযোগ ও অংশীদারিত্ব বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজার বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং তারা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁদের দেশে আরও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য সুযোগ বাড়ানোর অনুরোধ জানান।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার ও গভীর করার ওপর জোর দেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ায় শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের সময় এই আগ্রহের কথা জানান অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং।
বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিংয়ে ড. হাছান জানান, পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশী, শিক্ষার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিবেশ ইস্যুতেও কথা হয়েছে বলে জানান তিনি। পরে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে আলাদা আর্থিক সহায়তা, বাংলাদেশের কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বাড়াতেও অবদান রাখতে চায় অস্ট্রেলিয়া।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দুদেশের জনগণ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে দুদেশই উদ্যোগ নেবে বলেও জানান অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন পেনি ওং। যান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত যাদুঘরে। কিংবদন্তী রাষ্ট্রনায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দুদিনের এ সফরে বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা রয়েছে পেনি ওং এর। ওই দিনই ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। 
দ্ইু দিনের সফরে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছান পেনি ওং। বাণিজ্য-বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, আঞ্চলিক সমুদ্র নিরাপত্তা এবং মানবপাচারের মতো অভিন্ন চ্যালেঞ্জে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা গভীর করতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং।
ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পেনি ওংকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।

×