ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

বর্ণের বৈভবময় চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘প্রকৃতির ছন্দ’

​​​​​​​সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বর্ণের বৈভবময় চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘প্রকৃতির ছন্দ’

শিল্পকলার চারুকলা বিভাগের আয়োজনে ‘প্রকৃতির ছন্দ’ শিরোনামের প্রদর্শনীতে দর্শক

রঙের ওপর রং চাপিয়ে আঁকা হয়েছে ছবিগুলো। এভাবে বর্ণের বৈভবে চিত্রিত হয়েছে প্রতিটি চিত্রকর্ম। লাল-নীল কিম্বা সবুজ-হলদুসহ বিবিধ রঙের  সমারোহ ঘটেছে ক্যানভাসে। অজস্র রঙের স্ফুরণে উদ্ভাসিত হয়েছে বিষয়। বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে  নিসর্গের বৈচিত্র্যময়তা। নানা প্রজাতির বৃক্ষের সমান্তরালে উদ্ভাসিত হয়েছে লতা-পাতা বা পুষ্পের প্রতিচ্ছবি।  আর প্রকৃতির  এমন মনোহর রূপের মাঝেও নানা অবয়বের দেখা মেলে।  সেই সুবাদে বিমূর্ত রীতিতে চিত্রিত অধিকাংশ ছবিতে মূল  বিষয়ের ভেতর থেকে ভেসে উঠে এসেছে ভিন্ন আরেক বিষয়। সেথায় ফুল বা পাতার মাঝে উঁকি দেয় নারী-পুরুষের শরীরী কাঠামো থেকে চারপাশের চেনা জগতের নানা  কিছু। শিল্পরসিকের মননে ভাবনার বীজ বুনে দেওয়া নিরীক্ষাধর্মী ছবিগুলো এঁকেছেন ইসমাইল চৌধুরী। সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার নম্বর গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী।   প্রকৃতির ছন্দ শিরোনামের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগ। 

শুক্রবার ছুটির দিনের সন্ধ্যায় একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর  উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী ইমেরিটাস অধ্যাপক হাশেম খান প্রধান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিল্প-সমালোচক মইনুদ্দিন খালেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক চিত্রশিল্পী সৈয়দা মাহবুবা করিম। অনুভূতি প্রকাশ করেন শিল্পী ইসমাইল চৌধুরী। সভাপতিত্ব  করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

উদ্বোধনী বক্তব্যে হাশেম খান বলেন, চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রখর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ভিন্নতর  এক অনুভব রয়েছে ইসমাইল চৌধুরীর। এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে সুন্দর-অসুন্দর নানা বিষয়কে  তিনি   নিজের মতো উপলব্ধি করেন। সেই উপলব্ধিজাত অনুভবই  তাকে শিল্প সৃজনের অনুপ্রেরণা জোগায়। দেখা জগতের মাঝেও ভিন্ন কিছু  আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ করে  তাকে।  শেষ পর্যন্ত সেই ভিন্নতাকে  তুলে ধরেন ক্যানভাসে।   কারণে তার ছবি দেখলে খুব  চেনা মনে  হলেও প্রকৃতিনির্ভর সেই চিত্রেই নানান কথা বলেছেন তিনি। তার কাজ একই সঙ্গে পরিশ্রম মেধার পরিচয় বহন করে। কারণেই তার চিত্রকর্ম শিল্পরসিকদের মননে ভালোলাগার অনুভব ছড়িয়ে দেয়।

মইনুদ্দিন খালেদ বলেন, সহজাতভাবেই সবুজের প্রতি আরাধনায় আমাদের আন্দোলিত করে। সেই ছন্দই ফুটে উঠেছে ইসমাইল  চৌধুরীর চিত্রকর্মে।

লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বিষয়বস্তুর সহজ উপস্থাপনের পাশাপাশি রঙের  চমৎকার প্রয়োগে ভিন্নধর্মী আবহ তৈরি হয়েছে ইসমাইল চৌধুরীর চিত্রপটে। কম্পোজিশন বা বিন্যাসেও রয়েছে দক্ষতার স্বাক্ষর। সব মিলিয়ে বলা যায়, নিরীক্ষা শিল্প সৃজনে পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন এই শিল্পী।

অনুভূতি প্রকাশে ইসমাইল চৌধুরী বলেন, চিত্রকর্ম চিত্রণে মূলত  আবহমান বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি আমাকে অনুপ্রাণিত করে। একটু গভীরভাবে খেয়াল করলে বৃক্ষের কান্ড, শিকড় বা  ছড়িয়ে থাকা পাতার মাঝে ভিন্ন এক জগতের দেখা মেলে।  সেখানে নানা ধরনের অবয়ব বা আলো-ছায়ার খেলা থাকে। মূর্তের মাঝে সেই বিমূর্ত ভাবটিই হয়ে ওঠে আমার ছবির আঁকার বিষয়।   

সৈয়দা মাহবুবা করিম বলেন, শিল্পকলা একাডেমি প্রতিবছরই বিশিষ্ট চারুশিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা সহযোগিতার মাধ্যমে একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।  সেই ধারাবাহিকতায় ইসমাইল চৌধুরীর  এই চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিনেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে অর্ধশতাধিক একক   যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন এই শিল্পী। তার শিল্পকমের্র সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিটি দর্শকই নিজের অজানা জগতকে খুঁজে পানবেঁচে থাকার নিজেকে আলোকিত করার সার্থকতা বুঝতে পারেন।

অ্যাক্রেলিক মাধ্যমের আশ্রয়ে ছবিগুলো এঁকেছেন ইসমাইল চৌধুরী। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

 

 

×