
চৈত্রে ফুটেছে অপরূপ মধুমালতী
ফুলটি ভীষণ চেনা। বাসা বাড়ির সামনে এমনভাবে নিজেকে মেলে ধরে যে, কারও চোখ এড়ায় না। এর পরও ‘কিন্তু’ আছে। বারবার দেখা ফুলের নাম বলতে গিয়ে অনেকে ভুল করেন। কেউ কেউ মুখস্তের মতো বলে বসেন: ‘চিনি তো, মাধবীলতা।’ অথচ কী কা- দেখুন, ‘মাধবীলতা’ নামে আলাদা একটি ফুল আছে। যে ফুলের কথা বলা হচ্ছে সেটির নাম তাহলে কী? উত্তরে বলি, মধুমালতী। একই ফুল অবশ্য মধুমঞ্জরিলতা নামে পরিচিত। আর ইংরেজি নামটি রেঙ্গুনক্রিপার। বৈজ্ঞানিক নাম কুইসকুয়ালিস ইন্ডিকা।
‘মধুমালতী ডাকে আয়...।’ এখন সত্যি যেন ডাকছে মধুমালতী। ক’দিন আগেও বাড়ির গেটে বা সীমানা প্রাচীরের ওপর শুকনো দড়ির মতো ঝুলছিল গাছটি। এখন চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে এসে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। পাপড়ির রং মূলত লাল। হাল্কা লাল বলা যায়। উল্টো বাতাস বইলে পাপড়ির পেছনের সাদা রংটাও দৃষ্টিগোচর হয়। থোকা থোকা ফুল যখন মৃদু বাতাসে দুলে তখন এর মিষ্টি ঘ্রাণ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পথিককে হঠাৎ থামতে হয়। বড় করে নিশ্বাস নিতে হয়। তাতেই ¯িœগ্ধ একটা অনুভূতি হয় ভেতরে।
সাধারণ মানুষ শুধু নন, রবীন্দ্রনাথ এ ফুলটিকে বিশেষ পছন্দ করেছিেেলন। নাম দিয়ে ফুলটিকে আপন করে নিয়েছিলেন তিনি। শুরুতে যে বলা হলো মধুমঞ্জরিলতা, এটি আসলে কবিগুরুর দেয়া নাম। তিনি সবুজ বৃক্ষ তরুলতা ফুল পাখি পছন্দ করতেন। ভালোবাসতেন। রবীন্দ্রনাথের জীবন-যাপনে, বহু লেখায় আমরা এর প্রমাণ পাই। একই প্রেম ভাব ও বোধের জায়গা থেকে এ ফুলের দিকে তাকিয়েছিলেন তিনি। তখনও অচেনা এক ফুল। এর কী নাম, কী বৃত্তান্ত, কেউ জানত না।
তাই তাকে নাম দেয়ার উদ্যোগ নেন কবিগুরু। কারণ হিসেবে তিনি লিখেছেন, ‘এ লতার কোন একটা বিদেশী নাম নিশ্চয় আছে- জানিনে, জানার দরকারও নেই। আমাদের দেশের মন্দিরে এই লতার ফুলের ব্যবহার চলে না, কিন্তু মন্দিরের বাইরে যে দেবতা মুক্তস্বরূপে আছেন তার প্রচুর প্রসন্নতা এর মধ্যে বিকশিত। কাব্যসরস্বতী কোনো মন্দিরের বন্দিনী দেবতা নন, তার ব্যবহারে এই ফুলকে লাগাব ঠিক করেছি, তাই নতুন করে নাম দিতে হলো। রূপে রসে এর মধ্যে বিদেশী কিছুই নেই, এ দেশের হাওয়ায় মাটিতে এর একটুও বিতৃষ্ণা দেখা যায় না, তাই ‘দিশী নামে একে আপন করে নিলেম।’
এই ‘দিশী’ (দেশী) নামটিই মধুমঞ্জরিলতা। কবিগুরুর কবিতা থেকে বললে, ‘ফুলে ফুল তার পরিচয়লিপি ধরে/নাম দিয়ে আমি নিলাম আপন ক’রে-/মধুমঞ্জরিলতা।’
অবশ্য কবিগুরুর দেয়া নামটি উচ্চারণের পক্ষে কঠিন মনে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ‘মাধবীলতা’ বলে ডাকলেই চলে। তবে মাধবীলতা অন্তত বলতে যাবেন না। ‘লতা’ শব্দটি ছাড়া দুই ফুলের মধ্যে আর কোন মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, মধুমালতী মালয়েশীয় প্রজাতি। গাছের পাতা একক অখ- আয়তাকার। ৬-৮ সেমি লম্বা। শিরা সামান্য রোমশ। বিন্যাস বিপ্রতীপ। দলনল প্রায় ৫ সেমি লম্বা। মুখে ৫টি গোল লতি। ফুল চওড়ায় ২ সেমি। সাদা ও ছোট ডবল ফুলের দুটি ভ্যারাইটি আছে। ড্যান্সিফ্লোরা প্রজাতির ফুল বড় হয়। প্রায় ৭ সেমি লম্বা। মুখ ৩ সেমি চওড়া। ম্যালাবারিকা প্রজাতির পাতা, ফুল, ফুলের থোকা ছোট। কিন্তু অজ¯্র। এর পর ফুলটি চিনতে ভুল হবে না। হবে?