ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

ভিড়ে ভ্রমণে চিড়ে চ্যাপ্টা, ধুলোয় নাকাল

মোরসালিন মিজান   

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ভিড়ে ভ্রমণে চিড়ে চ্যাপ্টা, ধুলোয় নাকাল

পাঁচটি নির্বাচিত বই। ছুটির দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা প্রাঙ্গণে ছিল বইপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়

ভিড় আর ভ্রমণে চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা। শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় ঢল নেমেছিল মানুষের। শেষদিকে এসে এমন ঢল নতুন নয়। তবে এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল পরিসরটিকে ছোট করা হয়েছে। প্রকাশকরা নাকি স্টল, প্যাভিলিয়ন নিয়ে পরস্পরের কাছাকাছি থাকতে চান। বাংলা একাডেমি সে দাবি এবার পূরণ করেছে। প্রথমত, এরই প্রভাব পড়েছে মেলায়। পাশাপাশি চরম অব্যবস্থাপনা, রুচির দৈন্য প্রকট হয়ে উঠেছে।

অমর একুশে বইমেলার ১৭তম দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করা ছিল দুরূহ কাজ। বিশেষ করে বিকেল  সন্ধ্যায় ভিড় ছিল উপচেপড়া। উদ্যানে দাঁড়িয়েও নিজেকে মুক্ত ভাবতে পারেননি পাঠক। গায়ে গা লাগা ভিড়ের মধ্যেই স্টলে স্টলে দাঁড়িয়ে বই দেখা সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন। এদিন প্রায় সব স্টল প্যাভিলিয়নে পৌঁছে গিয়েছিলেন পাঠক। এটা ভাল দিক। তবে ভিড়ের তুলনায় বই বিক্রি হয়েছে অল্প। অধিকাংশ প্রকাশক তাই জানিয়েছেন। তাদের মতে, অকারণ ভিড়ে প্রকৃত পাঠক হারিয়ে গেছে। তারা ক্লান্ত। কিছুটা হতাশ।

অন্যদিকে, বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন মানুষরা শুধু ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভ্রমণে ব্যস্ত তাদের পদচারণায় আর কিছু হয়নি। ধূলিঝড় সৃষ্টি হয়েছে মেলাজুড়ে। এদিন এত ধূলো উড়েছে যে, বিকেলটাকে মনে হয়েছে সন্ধ্যা। অনেকে দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেছেন। কিন্তু মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি ছিল নির্বিকার। দিনের প্রথমভাগে মেলায় কিছু পানি ছিটানো হলেও তা ছিল অপর্যাপ্ত। ফলে দূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

শিশু প্রহর মেলায় এদিন ছিল শিশু প্রহর। খুদে পাঠকদের জন্য যথারীতি বেলা ১১টায় খুলে দেওয়া হয় প্রবেশদ্বার। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় কিচিরমিচির। পাখিদের মতোই প্রাঙ্গণজুড়ে যেন উড়ে বেড়াতে থাকে শিশুরা। ঘুরে বেড়াতে থাকে। দুপুরের পর বদলে যেতে থাকে পরিবেশ।

২৭৬ নতুন বই ১৭তম দিনে মেলার তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়েছে ২৭৬ টি নতুন বই। সব মিলিয়ে নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯৩৬।

নির্বাচিত বই   মেলায় প্রচুর নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে। বিপুল সম্ভার থেকে কিছু বইকে আমরা আলাদা করার চেষ্টা করি। সে বিবেচনায় আজ নির্বাচিত পাঁচটি বইয়ের কথা বলা যাক।

আমার রবীন্দ্রনাথ   সনজীদা খাতুনের রবীন্দ্রবিষয়ক সমুদয় রচনার সংকলন। রবীন্দ্রনাথ চর্চা গবেষণায় গোটা এক জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর বাঙালিত্বের সাধনা সংগ্রামের উৎসমূলে দৃঢ়ভাবে ছিলেন কবিগুরু। বোধের গভীর থেকে রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরার সফল প্রয়াস তার সংক্রান্ত লেখালেখি। বিভিন্ন সময়ের লেখা দুই খন্ডে প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। প্রথমটি আগেই এসেছিল। দ্বিতীয়টি পাওয়া যাচ্ছে এবারের মেলায়। প্রতি ন্ডে মূল্য ১০৫০ টাকা।

বাংলার ভাস্কর্য কল্যাণ গংগোপাধ্যায়ের বই। বাংলাদেশের মূর্তিশিল্প কোন্পথে আত্মপ্রকাশ করেছিল, এই বিবর্তনের  পেছনে অঞ্চল, সমাজ ব্যক্তির পরিবেশ এবং আর্থিক পটভূমি কেমনভাবে সক্রিয় ছিল তা বইটি পাঠে সুন্দর জানা যাবে। প্রকাশ করেছে জার্নিম্যান বুকস।

বাংলাদেশের নাটকে সমাজ বাস্তবতা   . বাবুল বিশ্বাসের বই। মঞ্চ নাটকের মানুষ তিনি। মঞ্চে যে সমাজ বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলা হয় তা গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। সে অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্লেষণধর্মী রচনা। প্রকাশ করেছে নালন্দা।

গ্রামীণ সংস্কৃতি সংকটের বেড়াজালে গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতি উদাসীনতা দিন দিন বাড়ছে। অন্যের আচারে অভ্যস্ত শহুরে প্রজন্ম শিকড়ের খোঁজ জানে না। সংকট তাই ঘনীভূত হচ্ছে। বইয়ে সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন  লেখক প্রবীর চন্দ্র। প্রকাশ করেছে আগামী।

ঘাটের কথা, গোয়ালন্দ ব্যতিক্রমী প্রয়াস বলতে হবে। বইতে হারিয়ে যাওয়া এক ঘাটের খোঁজ করা হয়েছে। ঘাটটির নাম গোয়ালন্দ। রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পূর্বে এবং পরবর্তিকালে কেমন ছিল এই গোয়ালন্দ? প্রমত্তা পদ্মার খেয়ালী আচরণ কীভাবে একে বদলে দিয়েছিল? প্রবীণ সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, আমলাসহ সংশ্লিষ্টদের স্মৃতিকথা, সেকালের পত্র-পত্রিকার বয়ান ইত্যাদির আশ্রয়ে প্রায় একশবছরের -চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক হোসাইন মোহাম্মদ জাকি। প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। বইয়ের মূল্য  ১৭০ টাকা।

আলোচনা অনুষ্ঠান বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়  ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহীবুল আজিজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অনিরুদ্ধ কাহালি মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আকরম হোসেন।

×