
বগুড়ায় শীতকালের সবজি ফলছে গ্রীষ্ম-বর্ষায়ও
ঋতুর পালাবদলে ফসল সময় পাল্টেছে। সকল ঋতুতে ফলানোর ধান না হয় অনেক ভ্যারাইটি এসেছে। তাই বলে শীতের সবজি গরমের (গ্রীষ্ম বর্ষা শরতে) মধ্যে ফলবে! এমনটিই ঘটেছে বগুড়ায়। শীত আসতে এখনও অনেকটা সময় বাকি। এর মধ্যে বগুড়ার শিবগঞ্জের অন্তত ২৫টি গ্রাম, মহাস্থানগড় ও তার আশপাশের এলাকা, শাজাহানপুর উপজেলার বিশটি গ্রামে শীতের সবজি ফুল কপি, বাঁধা কপি, টমেটো, বরবটি, শিম, পালং শাক, পুঁই শাক, বেগুন, মুলা, গাজর, করলাসহ শীতের সব ধরনের সবজি ফলছে। শিবগঞ্জের উথলি গ্রামের প্রবীণ কৃষক মালেক উদ্দিন বললেন ‘কিছুই কওয়া যায় না বাপো। কলিকালে সব পাল্টে গেছে।
গরমের মধ্যে ফুল কপি মূলা বেগুন গাজর হয় তাও দেখা লাগিচ্চে।’ এই বিষয়ে কৃষি বিভাগ জানায়, সময়ের ঋতু সময়ে ঠিক থাকছে না। প্রকৃতির মতিগতি পাল্টে গিয়েছে। এখন সকল সিজনে সব ধরনের ফসল মিলছে। তা ছাড়া উন্নত জাতের অনেক বীজ এসেছে। বাড়তি পরিচর্যায় শীতের ফসল গ্রীষ্মে মিলছে।
এদিকে বগুড়া অঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত গরমের মধ্যে যখন মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা তখন মধ্যরাতে ভোরে কুয়াশাপাত হতেও দেখা যায়। অসময়ের এই কুয়াশাপাত মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রকৃতি ভারসাম্য হারিয়ে না জানি কোন বিপর্যয় ডেকে আনে। মাঝেমধ্যে যে ভূকম্পন অনুভূত হচ্ছে তাও প্রকৃতির পালাবাদলের কারণে হচ্ছে এমনটি মনে করেন বিজ্ঞানীগণ। এই কুয়াশাপাত যে শীতের সবজিকে গ্রীষ্ম বর্ষায় আগাম ফলিয়ে দিচ্ছে। তাও মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীগণ।
বগুড়ার শিবগঞ্জ সোনাতলা শাজাহানপুর এলাকায় কৃষকদের সবজি আবাদ পরিচর্যায় দেখা যায়। শাজাহানপুরের রইস মোল্লা বললেন, তিনি জ্যৈষ্ঠ মাসে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করেছিলেন দশ শতাংশ জমিতে। বৃষ্টি না হওয়ায় এবং কুয়াশাপাতের কারণে ঈদের আগে তিন হাজার টাকা মণ দরে ফুলকপি বিক্রি করেছেন। শীত মৌসুমের চেয়ে দ্বিগুণ দাম পেয়েছেন।
তিনি জানান, গত ছয় মাসে তিন বার সবজি ফলন ঘরে তুলেছেন। শীতের সবজি গ্রীষ্মকালে বেচলে বেশি দাম পাওয়া যায়।
শিবগঞ্জের উত্তর শ্যামপর, মাঝপাড়া, বাকসন, এনায়েতপুর, সাদুল্লাপুর, জামালপুর, বাড়ুগড়, রায়নগর, কাজীপুর এবং মহাস্থানগড়ের আশপাশের গ্রামে এই সময়ে কৃষক এক ফসল সবজি বিক্রি করে পুনরায় সবজি আবাদের কেউ চারা রোপণ করছে কেউ উঠতি সবজি আবাদে পরিচর্যা করছে। সবই শীতের আগাম সবজি। এই সবজির তরকারির স্বাদ কি শীতের সবজির মতো! না কোন পার্থক্য আছে। এই বিষয়ে বগুড়া শহরের গৃহিণী কামরুন নাহার বললেন তিনি পালং শাক রেঁধেছিলেন স্বাদ একই। গ্রীষ্মের পালং শাক পাতার আকার বড়। বেগুনের স্বাদে কোন পরিবর্তন নেই।
শাজাহানপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বললেন, তাদের গ্রাম এখন চারার গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। সবজির এমন কোন চারা নেই যা পাওয়া যায় না। যে কারণে গ্রামের আশপাশের কৃষক কি গ্রীষ্ম কি শীত কি বর্ষা সব মৌসুমেই সকল ধরনের সবজি আবাদ করে।
তিনি ২০ শতক জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছিলেন। অধিক বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোদ ওঠার পর ফের আবাদ করলে বাঁধাকপি অধিক ফলন দেয়। এই সময়ে হঠাৎ কুয়াশাপাত সবজি আবাদের ভাল ফল দিচ্ছে। সবজি আবাদে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। প্রতিটি চারার দাম দেড় টাকা থেকে ১ টাকা ৩০ পয়সা। শাজাহনপুরের চারার গুণগত মান ভাল হওয়ায় চাহিদা বেশি। শীতের সবজি গ্রীষ্মে ফলায় দাম কিছুটা বাড়ে। একই কথা বললেন মহাস্থানগড়ের কৃষক শামীমুল ইসলাম। জানালেন, শিবগঞ্জ ও মহাস্থান এলাকার সবজি ভর বছর ঢাকায় যাচ্ছে। এই এলাকার সবজির কদর বেশি। ঢাকা থেকে যে মহাজন সবজির ট্রাক লোড দেয়ার জন্য যাদের পাঠান তারা বলেন বগুড়ার সবজি ঢাকায় পৌঁছার সঙ্গেই দ্রুত বিক্রি হয়। বগুড়ার সবজির স্বাদ বেশি।
এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, গত কয়েক বছর ধরেই বগুড়া অঞ্চল সবজি আবাদে বড় ভূমিকা পালন করছে। প্রতি বছর সবজি আবাদের জমি বাড়ছে। গত শীত মৌসুমে ১৮ হাজার ১শ’ ৮৮ হেক্টরে সবজি আবাদের টার্গেট করা হয়েছেল। চাষ হয়েছিল এর চেয়ে অনেক অধিক জমিতে। এর বাইরে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরতে যে সবজি আবাদ হয় তা টার্গেটের অতিরিক্ত। কৃষক নিজের গরজেই সবজি আবাদ করে। এদিকে শিবগঞ্জ এলাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ফলছে। সেখানে অবস্থিত মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউট গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উদ্ভাবন করেছে বছরতিনেক আগে। মাঠ পর্যায়ে তা এখনও যায়নি। এর মধ্যে সেখানে থেকে স্যাম্পল নিয়ে অনেক কৃষক পেঁয়াজের আবাদ করছে। আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে।
উত্তরাঞ্চলের বগুড়া অঞ্চল সবজি আবাদে বড় ভূমিকা রাখছে। ঋতুর পালাবদলে সব মৌসুমে সব ধরনের ফসল ফলছে। এগিয়ে আছে সবজি আবাদে।