ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিরোধিতার রাজনীতি এবং বিএনপি নেত্রীর ভাষণ

প্রকাশিত: ০৩:০২, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিরোধিতার রাজনীতি এবং বিএনপি নেত্রীর ভাষণ

রাজনীতি আমাদের এক সময় মুক্তির পথ দেখাত। যখন এ দেশের স্বাধীনতা আমাদের আরাধ্য আর পাকিদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা ছিল প্রবল তখন রাজনীতি ছিল প্রধান হাতিয়ার। সে সুবর্ণ সময় আজ বিগত। বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় অভিভাবকের তিরোধানের পর আমাদের রাজনীতিতে জগাখিচুড়ি দল বিএনপির জন্ম হয়। যতদিন আমরা বাঁচব আমাদের বলে যেতেই হবে ইতিহাসে তার জন্ম বা দরকার যে কারণেই হোক আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো এই দলের হাতেই মূলত পাকিকরণের শুরু। আজ এমন এক জায়গায় তা পৌঁছে গেছে চাইলেও কিছু করা যায় না। এ লেখা যখন লিখছি তখন সামাজিক মিডিয়ায় দেশের দুই প্রধান ক্রিকেটারের কথোপকথন ফঁাঁস হয়েছে। যার মাধ্যম উর্দু। আরবী হলেও ধরে নিতাম এক ধরনের বিশ্বাস বশত তারা তা করেছেন। কিন্তু উর্দু কেন? তাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। তাদের জাতীয় পরিচয় আমাদের গর্ব। আর তারা প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশের। তাদের ভাষা কেন হবে উর্দু? এর জন্য তারা থোড়াই দায়ী। পুরো সমাজ আর দেশের ভেতরে এক, বাইরে আরেক। যার পেছনে আছে এই রাজনৈতিক দলের ইন্ধন। আজ আমরা যখন প্রায় রাজনীতি বর্জিত একটি সমাজ দেখছি তখন অনেকেই বিরোধী দলহীনতার জন্য আওয়ামী লীগ বা সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে দিতে ভালবাসেন। এটা মানি সরকারের কিছু কাজ আছে যাতে বিএনপিকে দমানোর চেষ্টা দেখি। অতীতে যেতে চাই না। সবাই জানেন কে কীভাবে কাকে সাইজ করতে চেয়েছিল। কারা রাজপথে গ্রেনেড হামলার মতো অসভ্য বর্বর কাজ করেছিল। ফলে আমাদের চোখ বন্ধ রেখে মধ্যবিত্তের মুসলিম লীগ কায়দায় আওয়ামী লীগকে দোষ দিলেই সমাধান মিলবে না। ভেবে দেখুন বিএনপি যদি আওয়ামী লীগকে এভাবে চেপে ধরত বা চেপে ধরেছিল যখন তখন কি তারা ঘরে ঢুকে গিয়েছিল? রাজপথে তাদের জোর বা তাদের পজিশন প্রমাণ করে তারা আসলেই মাঠের দল। গ্রামে মহল্লায় মাঠে ময়দানে তাদের নেতাকর্মী আছে। তাদের এই শেকড় তাদের পরাজিত হতে দেয় না। অন্যদিকে বিএনপির জনপ্রিয়তা মূলত স্বার্থনির্ভর। স্বার্থ বলতে যারা বাংলাদেশের জন্মপ্রক্রিয়া ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তারা সবাই জায়গা খুঁজছিল কোথাও দাঁড়াবার। আজ এরা নানাভাবে বিভক্ত এবং পরাজিত। ফলে তাদের সেই আগ্রহ বা মোহ কোনটাই নেই। না থাকার কারণে ভেতরে যত প্রিয়ই হোক বিএনপির মাঠে নামার মানুষ নেই বললেই চলে। সেটা আমরা গত কয়েক বছরে বারবার দেখেছি। বলছিলাম রাজনীতির পথ হারানোর এই কালে আমরা কি বিএনপি নামের বড় দলটিকে একবারও অভিযুক্ত করব না কেন তারা তাদের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ? বেগম জিয়ার বয়স হয়েছে। তিনি এদেশের একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে অযথা অপমান বা কটু কথা বলার দরকার নেই। যা বলব যুক্তিতর্কে বলব। বেগম জিয়া এখনও আগের ভাষায় কথা বলছেন। তিনি বলছেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে নাকি মানুষ করবেন। মাফ করে দিয়েছেন। এই মাফ করে দেয়ার বিষয়টা আসলেই হাস্যকর। কে তাঁর কাছে মাফ চেয়েছে? আগ বাড়িয়ে মাফ করে দিলাম বলাটা কি নিজের দুর্বলতার পরিচায়ক নয়? এখানে মাফ বা প্রতিশোধ নেয়ার কথা আসছেই বা কেন? তিনি যখন বলেন আমরা দেশ শাসনে গেলে প্রতিশোধ নেব না, তখন মনে হয় তিনি কাউকে আশ্বস্ত করতে চাইছেন। নিঃসন্দেহে সেট আওয়ামী লীগ নয়। কারণ আওয়ামী লীগ তাঁকে বা বিএনপির কথাকে কতটা বিশ্বাস করে সেটা তাঁরা খুব ভাল জানেন। আসলে এটি তিনি বলেন দেশের বাইরের শক্তির জন্য। যাদের কাছে বিএনপির ইমেজ একটি প্রতিশোধ গ্রহণকারী দল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু শুধু কথায় কি চিড়ে ভেজে? তাঁরদলের কর্মকা- এখন কারও অজানা নেই। তাছাড়া বিশ্বায়নের এই যুগে তাঁকে এটাও মনে রাখতে হবে দোষারোপের রাজনীতি মানুষ আর খায় না। আমাদের ধারণা ছিল চলমান সমস্যা অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতা গুম হত্যা কিংবা দ্রব্যমূল্য বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবে বিএনপি নেত্রী। মানুষ যে নতুন কিছু শুনতে চায় সেটাই আমলে নিলেন না তিনি এবং দলের নেতারা তাদের সেই ভাঙ্গা রেকর্ডই বাজালেন। আওয়ামী লীগের বেলায়ও আমরা একি দৃশ্য আর আওয়াজ পাই। কিন্তু যখন পরস্পরবিরোধী দুটো দল মাঠে নামে তখন মানুষ আশা করে জবাবদিহিতার প্রশ্নে একে অপরের বিপরীতে দাঁড়িয়ে জনগণকে সত্য জানাতে বাধ্য করবে। আমার ধারণা এই বিষয়টি বিএনপি এখন আর বোঝেই না। ভাষণ কিংবা জনসমাবেশের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে এখানে দুটো বিষয় কাজ করেছিল। এক) শো ডাউন। দুই) আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলে নিজেদের গদি হারানোর দুঃখ ভুলে থাকা। মাদাম জিয়া ভুলে গেছেন সে এখন দূর অতীত। আসলে যারা আগামী দিনের ভোটার তাদের মনে বিএনপি এখন কোন ছায়াও ফেলে না। তারা ভুলে গেছে এ দল একদা দেশ শাসনে ছিল। বলব নিজেদের অতীতের কথা ভাবুন। একদম কিছু না থাকলে ইতিহাসের জোরেও অনেক দূর যাওয়া যায়। সে সম্ভাবনাও আপনারা পায়ে দলে দিয়েছেন ক্ষমতার দাপটে। আজ সেই ক্ষমতা নেই আর ঘোষক ও নেই। মুক্তিযুদ্ধের ফাউ খেতে গিয়ে আসল হারানো বিএনপির তাই এখন শিরে সংক্রান্তি। আপনি কাকে মাফ করছেন? কেন মাফ করছেন? আপনি এমন একটা কারণ দেখান যেখানে আপনাকে আক্রমণ করা হয়েছে শারীরিকভাবে? আর শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে ফেলার মতো জঘন্য কাজ করেছে আপনার দলের লোকেরা। তাঁকে নানাভাবে দুনিয়া থেকে সরানোর চক্রান্তে কারা দায়ী সেটা কি মানুষ বোঝে না? ওয়ান ইলেভেনের নায়কদের কাছ থেকে আপনারা কেন শাসনভার পাননি? সেটা তাদের কাছে প্রশ্ন রাখুন। আমরা আওয়ামী লীগ করি না, কিন্তু এটা জানি শেখ হাসিনাকে মাফ করে দেয়ার মতো কথা বলার ভেতর প্রচ্ছন্ন একটা সত্য আছে। যার মানে এমন কিছু আপনারা করছেন বা করতে চেয়েছেন যাতে কামিয়াব না হওয়ায় এখন সাধু সাজার চেষ্টা চলছে। মার্জনার রাজনীতি চালু হতে হবে আপনাদের নিজের বিবেক থেকে। সেটা সরকারী বেসরকারী সব দলের জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের বাঙালী প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখতে দেখতে ক্লান্ত। তারা চায় রাজনীতিতে সুন্দর ও স্বাভাবিকতা ফিরে আসুক। যার অনেকটাই আপনাদের ওপর নির্ভরশীল। আপনি সেদিন সমাবেশে কোন দিকনির্দেশনা দেয়ার পরিবর্তে মাফ করে দেয়ার কথা বলছেন আবার এও বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচনে যাবেন না। যার মানে আগের কথাটা বানোয়াট। বা তাতে আপনাদের বিশ্বাস নেই। এই দ্বৈততা মানুষ বোঝে। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া আপনি কবারের প্রধানমন্ত্রী। এখন আপনার বয়স হয়েছে। এখন মানুষকে নতুন কিছু দেয়ার সময়। তারুণ্য যৌবন আর বাংলাদেশের ভবিষ্যত হাত ধরাধরি করে চলতে চাইছে। দেশে বিদেশে তার প্রয়োজন গতিশীল নতুন নেতৃত্ব। শেখ হাসিনার কর্মকুশলতা আর একক প্রজ্ঞায় যতদূর আমরা এগিয়েছি তাকে ধারণ করা আর সামনে নিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা এখন জনগণের চাওয়া। তা না বুঝে হাজার মিটিং মিছিলে কি আসলেই কোন লাভ হবে? একবার ভাবুন তো!
×