ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষকে গিনিপিগ ভেবে...

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মানুষকে গিনিপিগ ভেবে...

ঞযব ড়ৎরমরহ ড়ভ ষরভব ড়হ বধৎঃয প্রবন্ধের প্রবন্ধকারের নাম স্মৃতির মণিকোঠা থেকে হারিয়ে গেলেও তার রচনার মূল বিষয়বস্তু যৎকিঞ্চিৎ মনে আছে। খালি চোখে অদৃশ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীট থেকেই জীবজগতের যাত্রা শুরু। ক্রমবিবর্তনের সর্বশেষ ধাপ মনুষ্যজাতি। কীট থেকে মানুষ সৃষ্টি- প্রাকৃতিক এ কলাকৌশলের মধ্যে আকৃতি ও চিন্তা-চেতনাগত পরিবর্তন সমান্তরালভাবে সাধিত হয়েছে। ‘মানুষ মরণশীল’ এর চেয়ে সত্য আর নেই। কিন্তু এ ধ্রুবসত্যকে মেনে নিয়েও যেন আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে মানুষ কষ্ট পেয়ে থাকে। নিজ জীবনকালকে দীর্ঘায়িত করার প্রাণপণ চেষ্টা করে, যুদ্ধ করে। আর এ যুদ্ধের একমাত্র ও প্রধান হাতিয়ার ওষুধ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময় মানসিক ও শারীরিক আরাম আয়েশের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করার গভীর বাসনা-কামনা পোষণ করে থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবর্তন এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক চেতনার অভাবে কখনও কখনও মানুষের সেই বাসনা-কামনা পূরণে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত বনজ লতা-পাতা প্রভৃতি খেয়ে সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করেছে এবং ফলপ্রসূ হয়েছেও। বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রার এক পর্যায়ে ঐসব লতা-পাতা ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সমন্বয়ে তৈরী হয় আধুনিক কালের ওষুধ। আহারের উপযোগী-অনুপযোগী নির্ধারণ করতে অনেক কালই কেবল ব্যয় হয়নি, মানুষকে অতুলনীয়-অপরিমেয়-অবর্ণনীয় ত্যাগের সন্মূখীন হতে হয়েছে। মানুষের এ জাতীয় ত্যাগ এখনও থেমে থাকেনি এবং অনন্তকাল ধরে সমাজের কল্যাণার্থে চলতেই থাকবে। কিন্তু এক শ্রেণীর লিপ্সু মানুষ সমাজে আছে তারা কোন ধরনের ভাল-মন্দের বিচার করে না, কেবল সম্পদের মালিক হতে চায়। তাদের সেই আকাঙক্ষা পূরণ করতে গিয়ে উচিত-অনুচিত কাজের ধার ধারে না। যাচ্ছেতাই করতে থাকে। এরূপ করতে করতে মানুষের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের উপর হাত দিয়েছে। ভেজাল ওষুধ তৈরী করার ফন্দি কোন সাধারণ বিবেকবান সামাজিক মানুষ করবে না, এটা নিশ্চিত। গরীব ও অশিক্ষিত কিংবা অল্পশিক্ষিত মানুষের কাছে ওষুধ ভেজাল করার উপকরণ জানা থাকবে না এবং অসচ্ছল মানুষ এত লোভীও নয়। যারা সমাজ পরিচালনার কলকাঠি নাড়ে এবং দেশীয় ওষুধ ব্যবহার করে না, এদের দ্বারাই এ কাজ সম্ভব। দেশীয় উৎপাদনে এরা শুধু ব্যাঘাতই সৃষ্টি করে না, নিজে বিদেশী ওষুধ কিনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পাচারও করে। অপরপক্ষে দেশ থেকে ভেজাল ওষুধ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথকে রুদ্ধ করে দেয়। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে বাঙালীকে তুলে ধরার পথ কন্টকময় করে দেয়। ওষুধ আবিষ্কারের পর তা সেবনের উপযোগী কি না পরীক্ষার জন্যে গিনিপিগ কিংবা তৎজাতীয় জীবে প্রথমত ব্যবহার করা হয় এবং এরপর মানুষকে খাওয়নো হয়। এখন আর গিনিপিগ লাগে না। গরীব মানুষই যথেষ্ট। দেশের আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ, গরীব মানুষকে রক্ষা করা এবং দেশ ও জাতির মান সম্মান বৃদ্ধির জন্যে ওষুধের মধ্যে ভেজাল করার প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করা অত্যন্ত জরুরী। যে ওষুধের সাথে মানুষের বাঁচা-মরার বিষয় সরাসরি জড়িত, সুখ-শান্তির অন্বেষণ যার মধ্যে করা হয় এবং যা দ্বারা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানো যায় তা ভেজাল করে সর্বস্ব হারানোর পায়তারা যারা করে, তারা মানুষ নামের কলংক। এদেরকে মানুষের পর্যায়ে আনার উপায় খোঁজ করা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। কেননা, মানুষের জীবন রক্ষার পথ সুগম করা সমাজের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে
×