ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত

স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুল কলেজ মাদ্রাসা বন্ধ

প্রচণ্ড গরম থেকে স্বস্তি পেতে স্কুল ছুটি শেষে বাসায় ফেরার পথে দুই বন্ধু আইসক্রিম খাচ্ছে

দেশজুড়ে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমের দাপটে অতিষ্ঠ যখন জনজীবন তখন তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর। চতুর্থ দফায় চলছে ‘হিট অ্যালার্ট’। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজ মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের ২৭ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 
একই সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় একই সঙ্গে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায়ও বৃহস্পতিবার পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সারাদেশে বহমান প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
একই দিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বিদ্যালয় বন্ধের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারও। 
তবে এদিন শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) রয়েছে সেগুলোতে যথারীতি পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে। এ ছাড়া যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার দিন ধার্য করা থাকে সেক্ষেত্রে সিডিউল অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এসব তথ্য জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, শ্রেণিকক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা এসি নেই, তীব্র গরমের কারণে এ ধরনের প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলো বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে, কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার দিন ধার্য থাকলে নির্ধারিত সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া যাবে বলেও জানান এ আইনজীবী।
ঈদের ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। তবে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এক সপ্তাহ ছুটি বাড়ানো হয়। এরপর গত ২৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে রবিবার থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথারীতি ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী রবিবার সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত গরমে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়।
তবে গত রবিবারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে তীব্র তাপপ্রবাহের এদিন ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী দেশের এই পাঁচটি জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা এসি রয়েছে, কর্তৃপক্ষ চাইলে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে পারবেন।
হাইকোর্টের আদেশে সংক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী, যাবেন আপিলে ॥ এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনায় নিজের সংক্ষুব্ধ অবস্থার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সোমবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে।

সবকিছুতেই কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আদালতের নির্দেশনা নিয়ে আসতে হয়। সাংবিধানিকভাবে যার যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা পালন করাই বাঞ্ছনীয় বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, যারা অসুস্থ হয়েছেন, তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাকি অন্যত্র ছিলেন, তাও দেখার বিষয়। স্কুল গরমের জন্য বিপজ্জনক, আর মাঠ-ঘাট নয়! যেসব জেলায় তাপমাত্রা কম সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার কোনো কারণ নেই।

এর আগে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। সেই রায় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলোর ছুটি ঘোষণা নির্বাহী এখতিয়ার। ক’দিন ছুটি থাকবে বা থাকবে না এটা একটা বিশেষায়িত বিষয়। এটা উচ্চ আদালতের এখতিয়ার নয়।
দেশজুড়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ ॥ সোমবার যখন দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে নিয়মিতভাবে চলছিল পাঠদান তখন তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পরে অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। এদিন নড়াইলের লোহাগড়ায় তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে একটি বিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ছাড়া জ্ঞান হারায় ৬ জন। উপজেলার ইতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ে একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচ- গরমে সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী অসুস্থবোধ করছিল। বেলা ১১টা পর্যন্ত ১২ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসক এনে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ইতনা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিন্দ্য সরকার সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক এনে তাদের সুস্থ করে বাড়িতে পাঠানো হয়।
এদিন তীব্র তাপপ্রবাহে বরিশালেও তিন স্কুলছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। নগরীর জগদীশ সারস্বত গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির তিন ছাত্রী অসুস্থ হয়। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী তাসনিন আক্তার প্রথমে পেটে ও পরে মাথাব্যথা, পরে বমি বমি ভাব হওয়ার পর পরই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর একই ক্লাসের অপর একজন ও সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী অসুস্থ হয়।

তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সহকারী শিক্ষক মো. কাওসার হোসেন বলেন, এক একটি শ্রেণিকক্ষে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী ক্লাস করছিল। প্রচ- গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় অসহনীয় তাপপ্রবাহে ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের অভিভাবকদের খবর দেওয়া হলে তারা এসে বাসায় নিয়ে যান। একই দিন তীব্র গরমে কলাপাড়ায় দুই শিক্ষার্থী, কচুয়ায় এক মাদ্রাসা শিক্ষক, ঠাকুরগাঁওয়ে কয়েক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বন্ধ ঘোষণার পরও ক্লাস হয় ঢাকার কিছু স্কুলে ॥ তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সোমবার ঢাকাসহ ৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও রাজধানীর কয়েকটি স্কুলে ক্লাস হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে, আবার কোথাও রয়েছে খোলা। এমনকি একই এলাকার অন্য সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও দু-একটি প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে দেখা গেছে।

খোলা রাখা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলছেন, তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনার চিঠি বা প্রজ্ঞাপন পাননি। এ জন্য যথারীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে রাজধানীর দনিয়া এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজ একটি।
জানতে চাইলে ব্রাইট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মহিদুর রহমান বলেন, প্রাথমিক শাখা তো সরকার বন্ধ করেনি। তাই খোলা রাখা হয়েছে।
মাধ্যমিক শাখা কেন খোলা রেখেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা না জেনেই স্কুলে চলে এসেছে। সে কারণে তাদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা দ্রুত ছুটি দিয়ে দেব।

×