ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মালয়েশিয়া প্রবাসীদের পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

মালয়েশিয়া প্রবাসীদের পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি

আজাদ সুলায়মান ॥ মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা পাসপোর্ট করতে গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সঠিক নিয়মে আবেদন করেও তিন মাসের আগে পাসপোর্ট পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সরকার ঘোষণা দিলেও এখনও মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট চালু করা সম্ভব হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতবাসে পাসপোর্ট শাখায় জনবলের অভাব ও ঢাকা থেকে সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে না পারায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যেই পাসপোর্ট মাত্র ১৫ দিনে দেয়া সম্ভব বলে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ মনে করে সেখানে কেন ৩/৪ মাস লাগছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব অভিযোগ সব সঠিক নয় বলে পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আসলে পাসপোর্ট করতে কেউ যদি দালালের মাধ্যমে আবেদন করে থাকে, সেটা যদি দালালই দেরি করে দূতাবাসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠায় তাহলে তো সময় নষ্ট হতেই পারে। এর দায় কেন পাসপোর্ট অধিদফতর নেবে। আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি- আবেদন জমা দেবার তারিখ থেকেই কেউ যদি নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে থাকেন- সেটা অবশ্যই আমরা খতিয়ে দেখব। মালয়েশিয়ার ভুক্তভোগী বেশ কজন দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, কুয়ালালামপুর দূতাবাসের মাধ্যমে ১২০ রিঙ্গিত দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করার পর সেটা ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা থেকে সেই পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে সেখানে যেতে তিন/চার মাস লেগে যায়। এমনই একজন ভুক্তভোগী মালয়েশিয়া প্রবাসী গণমাধ্যম কর্মী নাজনীন সুলতানা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জমা দেয়ার কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও দেখা যায়- পাসপোর্ট নট ফাউন্ড। আবার পরে জমা দেয়া পাসপোর্ট এসে গেলেও আগে জমা দেয়া পাসপোর্ট হাইকমিশনে আসে না। দুই সপ্তাহে বারকোড দেয়ার কথা থাকলেও বার কোড পেতে মাত্রাতিরিক্ত বিলম্ব ও ডেলিভারি স্লিপ নম্বর ভুল থাকাসহ আছে নানান রকম অভিযোগ। সবচেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যারা আগে জমা দিয়েও পাসপোর্ট পাননি- অথচ পরের জন পেয়ে যাচ্ছেন। নাজনীন সুলতানা বলেন- আমার ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম পাসপোর্টের আবেদন করে চার মাস পর পেয়েছে। আমার নিজের কন্যা মালয়েশিয়া প্রবাসী শিক্ষার্থী মাহজাবীন বিনতে হুসেন আবেদন করার পর আড়াই মাস পর পেয়েছে-এজন্য তখন আমি ঢাকায় ছিলাম। তদ্বির করে কিছুটা সময় আগেই পেতে সক্ষম হয়েছি। এভাবে অনেককেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। কারণ, মালয়েশিয়ার পুলিশ ধরলে পাসপোর্টের আবেদন স্লিপ দেখিয়েও পার পাওয়া যায় না। তারা চায় ভিসার কপি যা পাসপোর্টেই থাকে। প্রবাসীদের অভিযোগ, সেখানকার দূতাবাসে পাসপোর্ট শাখায় মাত্র দুজন জনবল কর্মরত। তাদের পক্ষে সম্ভব নয় দৈনিক এই বিপুল পরিমাণ আবেদন গ্রহণ করে প্রসেস করে তা সময়মতো ঢাকায় পাঠানো। এ বিষয়ে মামুন নামের অপর ভুক্তভোগী বলেন- আমি চার মাসে পাসপোর্ট পেয়ের্ছি। আসলে এখানে সমস্যা হচ্ছে- মাত্রাতিরিক্ত পাসপোর্ট জমার স্তূপ। এ জন্য এ কাজে জড়িত কর্মকর্তারা প্রচ- ক্লান্ত ও হিমশিম খাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের দাবি আরও বেশি কর্মচারী এবং এক্সপার্ট যুক্ত করা। মাত্র দুটি হটলাইনে ১০ লাখ প্রবাসীর সেবা দেয়া সম্ভব নয়। এখানে দরকার কমপক্ষে ৫০টি হটলাইন। এ বিষয়ে নাজনীন সুলতানাও মনে করেন- মালয়েশিয়াতে যথেষ্ট এক্সপার্ট এবং হাজার হাজার স্টুডেন্ট আছে। যাদেরকে স্বল্প সময়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে কার্যকরী করে তোলা সম্ভব। প্রবাসী ভাইদের জন্য হাইকমিশনারের ডাকে বিনা পারিশ্রমিকে এগিয়ে আসবে অনেক এক্সপার্ট এবং স্টুডেন্ট। প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে এক্সপার্ট এনে দ্রুত পাসপোর্ট বিতরণ করার সুযোগ রয়েছে। জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আইয়ূব চৌধুরী বলেন- আগে কিছুটা জটিলতা ছিল। এখন আর তেমন অভিযোগ নেই। স্বাভাবিকভাবেই চলছে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণ। তবে দালাল চক্র যদি সময় নষ্ট করে তার দায় তো সরকার নেবে না। যেমন কোন প্রবাসী যদি পেনাংয়ে বসে কোন দালালের কাছে একশ’ ডলার দিয়ে পাসপোর্ট চায় সেই দালাল যদি তার কাছে রেখে দেয় আবেদন, তাহলে তো বিলম্ব ঘটবেই। দেখা যায় ওই দালাল এক মাস পর সেই আবেদনের জন্য আবেদন করে দূতাবাসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠায়। ঢাকা থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেটা প্রিন্ট হয়ে দূতাবাসে গেলে দালাল সংগ্রহ করে নিতে বিলম্ব করে। আবার দালাল হাতে পেয়েও গ্রাহককে দিতে করে। এভাবে তো তিন মাস লাগায় তার জন্য পাসপোর্ট অধিদফতর দায়ী হতে পারে না। তবে ছয়টি ক্যাটাগরি যেমন নাম ঠিকানা, বয়স, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান পরিবর্তন সংক্রান্ত পরিবর্তন থাকে তাহলে সেটা পুলিশ প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে। তখন পুলিশের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত পাসপোর্ট অধিদফতর দিতে পারে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-পাসপোর্ট নিয়ে লুকোচুরি করার কিছু নেই। এখন সেটা অনায়াসেই অনলাইনে ট্রেকিং নম্বর দিয়ে দেখা যায়, কোথায়, কবে জমা হয়েছে, কি অবস্থায় আছে ও কতদিনে পাবে। আবেদন সার্ভারে পৌঁছার পর বিলম্বের শিকার হয়েছে কেউ এমন একটি অভিযোগও কেউ দিতে পারবে না। যদি একটা নজির থাকে তাহলে তাকে আমার কাছে পাঠান, আমিই জবাব দেব। মালয়েশিয়ায় কবে নাগাদ ই-পাসপোর্ট চালু করা হবে জানতে চাইলে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আইয়ূব চৌধুরী বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের বড় কর্মস্থল হওয়ায় দ্বিতীয় ধাপেই ই-পাসপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। এখন সেটা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
×