ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈশ্বরদীর আলোচিত ইসাহাক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ২১ জুন ২০২১

ঈশ্বরদীর আলোচিত ইসাহাক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ ঈশ্বরদীর সাঁডাঘাট ব্লক পাড়ার বহুল আলোচিত ইসাহাক আলী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত জব্দ করছে করেছে ইনভেষ্টিগেশন অব পুলিশ ব্যুরো পাবনা (পিবিআই)। গত ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর রাত নয়টায় ভিকটিম ইসাহাক আলীর পিতা ও মামলার বাদী দুলাল আলী জানতে পারেন তার ছেলে ইসাহাক আলী দুর্ঘটনায় মারাতœক আহত হয়ে ঈশ্বরদী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তখন তিনি দ্রুত হাসপাতালে উপস্থিত হলে ভিকটিমের অবস্থা আশংক জনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। পরে ঐ রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ইসাহকের মৃত্যুর পর পিতা দুলাল আলী বাদী হয়ে পাঁচ জন এজাহারনামীয় আসামি ও অজ্ঞাত নামা ৫/৬ জনের নামে ঈশ্বরদী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ( মামলা নম্বর ৬ তারিখ ০২/১১/২০ ধারা ৩০২/৩৪ দন্ডবিধি) । হত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত গ্রেফতারকৃত এক নং আসামি মোঃ রবিউল ইসলাম সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত -৪ পাবনা এর নিকট ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এছাড়া এই মামল্রা এজাহারনামীয় অপর আসামী মোছাঃ খালেদাও গত রবিবার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মামলাটি রেকর্ড করার পর ঈশ্বরদী থানা পুলিশ এক সপ্তাহ তদন্ত করে। পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআই এ হস্তান্তর করার পর পিবিআই পাবনার উপ -পরিদর্শক মোঃ গোলাম রাব্বানীর উপর তদন্তভার ন্যাস্ত করা হয়। এর পর ডিআইজি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায় পিবিআই পাবনা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ ফজলে এলাহী এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক গোলাম রব্বানী মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তকালে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম ইসাহাক সাড়ঘাট ব্লক পাড়ার জয়নাল মোল্লার বাড়িতে জামা কাপড় তৈরীর সুবাদে প্রায় আট বছর ধরে যাতায়াত করতেন। গত ২০২০ সালের ৩০ জুন তারিখ ঘটনার দিন রাত নয়টায় ভিকটিম জয়নাল মোল্লার পুত্রবধূ ও কন্যার জামা সেলাই করে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য তাদের বাড়িতে যায়। ভিকটিম জামা ডেলিভারি দেওয়ার পর জয়নাল মোল্লার মেয়ে মোছাঃ খালেদার রুমে প্রবেশ করে। সেই সময়ে আসামি মোঃ রবিউল ইসলাম তার বোনের রুমে শব্দ পেয়ে তার ঘর থেকে বের হয়ে জানালা দিয়ে ভিকটিমকে তার বোনের সাথে ধস্তাধস্তি করতে দেখে। এই দৃশ্য দেখে আসামি মোঃ রবিউল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে ইসাহাক কে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে দৌড়ে পালানোর সময় আসামি উত্তেজিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে নিকটে থাকা বাঁশ দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করলে মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। এসময় আসামি রবিউলের চিৎকার শুনে আসামির পিতা, মাতা, বড় ভাই ঘর থেকে বের হয়ে আসে। একই সময়ে পাশের বাসা থেকে আসামীর ভগ্নিপতি হাফিজ ভান্ডারীও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এরপর ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে ঈশ্বরদী হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে অবস্থা বেগতিক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐ রতেই ইসাহকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয় । এ বিষয়ে পিবিআই পাবনার পুলিশ সুপার মোঃ ফজলে এলাহী বলেন, একজন আসামীকে ঘটনার পর পর গ্রেপ্তার করা হয় এবং অপর চারজন এজাহারনামীয় আসামিকে গত ১৪ জুন পুলিশী তৎপরতায় বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করানোর পর তাদের মধ্যে মূল আসামী রবিউল ইসলামকে দুইদিনের রিমান্ড শেষে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হলে ঘটনার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট আসামিদের নাম প্রকাশসহ হত্যাকান্ডের কাহিনী বর্ণনা করে।
×