ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরের এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ

নির্মাণশৈলী আর স্থাপত্য শিল্পে অনন্য, সাড়ে ৫ শ’ বছরের পুরনো

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ১২ জুন ২০২১

নির্মাণশৈলী আর স্থাপত্য শিল্পে অনন্য, সাড়ে ৫ শ’ বছরের পুরনো

সাজেদ রহমান ॥ যশোরের অভয়নগরে কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে হজরত খান জাহান আলীর (রহঃ) সময় তৈরি একটি মসজিদ। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলী বিবেচনায় স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন এই মসজিদ। এর অবস্থান অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া গ্রামে ভৈরব নদের তীরে। বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ইসলাম প্রচারক হজরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত মসজিদটি সাড়ে ৫০০ বছরের বেশি পুরোনো। ইতিহাস গবেষকদের মতে, যশোরের মুড়লী কসবা থেকে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) ১৫ শতকের শেষ ভাগে সৈন্য ও অনুসারীদের নিয়ে ভৈরব নদের তীর ধরে পূর্ব দিকে এগিয়ে যান। এ সময় তিনি বেশকিছু রাস্তা নির্মাণ, দীঘি খনন ও মসজিদ স্থাপন করেন। এগুলো তার যাত্রাপথের সাক্ষ্য। খানজাহান আলীর এসব কীর্তি বাগেরহাট-যশোর অঞ্চলে স্থানীয় ভাষায় ‘খাঞ্জালি’ নামে পরিচিত। অভয়নগর উপজেলা সদর নওয়াপাড়া থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শুভরাড়া গ্রাম। অসংখ্য গাছগাছালি ও বাঁশবাগানে ঠাসা গ্রামটি। সেখানে ভৈরবের তীরে এই মসজিদের গম্বুজটি দূর থেকেই নজরে পড়ে। সড়ক ও নদীপথে নওয়াপাড়া থেকে শুভরাড়ায় যাওয়া যায়। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থের প্রথম খন্ডের ‘খালিফাতাবাদ’ অধ্যায়ে খাঞ্জালি মসজিদের উল্লেখ রয়েছে। গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, হজরত খানজাহান আলী (রহ.) সম্ভবত নড়াইল অঞ্চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সামনের একটি বিলের অবস্থা দেখে বা অন্য কোন কারণে সে সংকল্প বাদ দিয়ে তিনি ভৈরবকূল ধরে এগিয়ে যাওয়ার পথ বেছে নেন। এভাবে তিনি শুভরাড়া গ্রামে গিয়ে পৌঁছান। খ্রিষ্টীয় ১৪৪৫ থেকে ১৪৫৯ সালের মধ্যে কোন এক সময় খাঞ্জালি মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে ইতিহাস গবেষকেরা মনে করেন। এতে একটিমাত্র গম্বুজ এবং চার কোণে চারটি মিনার আছে। মসজিদটির ভেতরের মাপ ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি বাই ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি। উচ্চতা ২৫ ফুট। বাইরের মাপ এক মিনারের মধ্যবিন্দু থেকে অন্য মিনারের মধ্যবিন্দু পর্যন্ত ২৮ ফুট ছয় ইঞ্চি। মসজিদটির উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে তিনটি দরজা অছে। পূর্বদিকে সদর দরজা এবং এর খিলান ১১ ফুট উঁচু এবং ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি প্রস্থের। এই মসজিদ নির্মাণে প্রকান্ড ও ক্ষুদ্র সব রকমের ইটই ব্যবহৃত হয়েছিল। এসব ইটের আকার ১২ ইঞ্চি বাই ১০ ইঞ্চি থেকে ৪ ইঞ্চি বাই ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা কার্যালয় সূত্র জানায়, কারুকাজ ও নির্মাণশৈলী অবিকৃত রেখে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচবার মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। কিছু সংস্কার কাজ এখনও বাকি রয়েছে। স্থানীয় প্রবীণ লোকজন বলেন, প্রায় ১০০ বছর আগে খাঞ্জালি মসজিদের ছাদ ভেঙ্গে পড়ে। এরপরও গোলপাতার ছাউনি দিয়ে মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকেন স্থানীয় লোকজন। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর খুলনার কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইউনেস্কো স্বীকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নীতিমালা বা কোড পুরোপুরি অনুসরণ করেই মসজিদটি সংস্কার-সংরক্ষণ করা হয়েছে। মৌলিকতত্ত্বের কোন পরিবর্তন করা হয়নি। আগে মসজিদ যেমন ছিল, সংস্কারের পর ঠিক তেমন আছে।’ যশোরের অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুর রহমান জানান, শুভরাড়া মসজিদটি দেশের একটি অনন্য নিদর্শন। খান জাহান আলী (রহ.) এর স্মৃতিবিজড়িত এই মসজিদ দেখতে ছুটে আসেন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।
×