ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আতাতুর্ক পাশা

একটি সুন্দর বসন্ত বিকেল

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

একটি সুন্দর বসন্ত বিকেল

ত্রি-জি-দের বেশ ক’জনের উপন্যাস, গল্প পড়ার সুযোগ হয়েছে। হুমায়ুন কবীর হিমুর কবি উপন্যাসটিও পড়লাম। মূল চরিত্র কবি দোলন, মোঃ সানাউল হক দোলন। লেখাপড়ার ধাপশেষে দুটো টিউশনি করে মেসে থাকে আর চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে একের পর একটি। মেসের বাড়িওয়ালা, সামনের চায়ের দোকানের মালিক, ধানমণ্ডিতে থাকা খালা-খালু, পরিচিতজনরা, কবি বলে সম্মান করে, খাতির করে। তবে সে নিজকে তেমন একটা বড় কবি মনে করে না। অনেকেই তার সপ্ত ইন্দ্রীয় আছে বলে মনে করে তার কাছে বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য চাইতে আসে। বাসে পরিচয় হওয়া এক বিশ^বিদ্যার্থী কবিকে ভালবেসে ফেলে। খালাতো বোন স্মৃতিও তাকে ভালবাসতে চায় সে তাকে সুযোগ দেয় না। দোলন খুব পরোপকারী। মেসের মালিক, প্রতিবেশী চায়ের দোকানদার, তার খালুকে মানসিকভাবে অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে হাইকোর্টের মাজার শরীফে এক জট বাবার কাছে নিয়ে যায়, কিছু পরে তাঁরা সবাই শান্তির পথ ফিরে পায়, তাদের মুশকিল আহসান হয়। কিন্তু দোলন নিজের জন্য জট বাবার কাছে কিছুই চায় না। লাভলীর বিয়ে অন্যখানে ঠিক হয়ে যায়। লাভলী বার বার দোলনকে একটি চাকরি যোগার করতে বলে, তাহলে সে বাবা মা-র কাছে দোলনকে পছন্দের কথা বলতে পারবে। দোলনের চাকরি যোগার হয় না, লাভলী বাধ্য হয়ে মায়ের পছন্দমতো ছেলেকে বিয়ে করে। এটিই উপন্যাসের সংক্ষিপ্তাসার। খুব বৈচিত্র্যময় আহামরি কাহিনী নয়। তবু একটানে পড়ে ফেলি। এটি ঔপন্যাসিকের ষষ্ঠ উপন্যাস। শুরুতে যে কথাটি বলেছি, তার আলোকে বলা যায়, এখানে কোন চরিত্রই লেখক বড় করে তোলেননি বা কোনটিকেই ছোট করে তোলেননি। এটিই ঔপন্যাসিকের সবচেয়ে বড় দক্ষতা, বলা চলে নির্লোভ ব্যক্তিত্ব। অনেক নোবেলজয়ী লেখকও তাদের সাক্ষাতকারে বলেন, লেখক তার উপন্যাসের কোন না কোন চরিত্রের মধ্যে নিজে উপস্থিত থাকেন। তবে এ উপন্যাসে লেখক নিজে একটি চরিত্রে কিছুটা ভর করেছেন কিন্তু তা বিশাল করে তোলেননি। ভাল লেখকরা এটিই করেন। উপন্যাসে যে ঘটনাগুলো বলা হয়েছে, সেগুলো সব নগরের হলেও অত্যন্ত সমান গুরুত্ববহ করে বা নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন হুমায়ুন কবীর হিমু। হয়ত এ কারণে কথাসাহিত্য নিয়ে তিনি বেশ দূরে যেতে পারবেন বলে মনে করা যায়। তবে আজকাল কিছু ক্রিয়া বা াবৎন অনেক গদ্যলেখক ভীষণ রকমের ভুল করছেন যা ‘কবি’ উপন্যাসেও পাওয়া যায়। কোথাও তিনি লিখেছেন, চিন না, হবে চেন না। লিখেছেন, ‘বুঝা’, হবে ‘বোঝা’ (বোঝানোর অর্থে, মালসামানার অর্থে নয়), ‘ছোটে’ যান, হবে ছুটে যান। এসব ব্যবহার আরও কাউকে কাউকে করতে দেখি, আসলে কথ্যরূপ এসব ক্রিয়াপদগুলোকে আমাদের আরও একটু ভাল বুঝতে হবে। যেমন বড় সাহেবের মতিগতি বোঝা বড় দায় (এখনো বুঝা বড় দায় হয় না), ছেলেটিকে অঙ্কটা ভালো করে বোঝাও (এখানে বুঝাও কখনও বলা যেতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বোঝাও ব্যবহৃত হয়)। তাছাড়াও উপন্যাসটির বিভিন্ন স্থানে বেশ বানান বিভ্রাট দেখা গিয়েছে, যেগুলো যত্নের অভাবে হয়েছে বলেই মনে হয়। শুরুতেই বলেছি, সাম্প্রতিক লেখা বেশ কিছু উপন্যাস পড়ার সুযোগ হয়েছে। সেগুলোর পাঠে এটুকু বলা যায়, লেখক যেভাবে লিখছেন, তাতে তিনি চেষ্টা করলে আমাদের কথাসাহিত্যকে অনেক দূর টেনে নিয়ে যেতে পারবেন বলে আমার কিঞ্চিত বিশ^াস। পারিজাত প্রকাশনী বেশ যত্নের সাথেই বই প্রকাশ করে থাকে, উপন্যাসটির বাঁধাই, মুদ্রণ, অঙ্গসজ্জা দেখলে তা-ই মনে হয়। প্রচ্ছদ সুন্দর। উপন্যাসটি অনেকের কাছে ভালো লাগবে বলেই মনে হয়। কবি/হুমায়ুন কবির হিমু/ প্রকাশক/শওকত হোসেন লিটু, পারিজাত প্রকাশনী, ঢাকা/ প্রকাশকাল/বইমেলা, মূল্য/৩০০ টাকা/ পৃষ্ঠাসংখ্যা/১৫২।
×