ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নব সূচনা থিয়েটারে

কম শিল্পী, স্পর্শহীন অভিনয়- তবুও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ

প্রকাশিত: ২১:১৯, ৬ জুলাই ২০২০

কম শিল্পী, স্পর্শহীন অভিনয়- তবুও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ

মোরসালিন মিজান ॥ ঘরবন্দী সময় এখন। এরপরও অনেককিছু হচ্ছে। সীমিত পরিসরে হলেও, হচ্ছে তো। শিল্প সংস্কৃতির চর্চা তাহলে বন্ধ থাকবে কেন ? পেটের ক্ষুধায় খাবার চাই। বেশ তো। মনের ক্ষুধার কী হবে? প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে বৈকি। আশার কথা যে, উত্তর পেতেও খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অনেকে শিল্প সংস্কৃতির চর্চা করছেন। বিকল্প মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চোখে পড়ছে। তবে থিয়েটারকে থিয়েটার হয়ে উঠতে কঠিন শর্ত পালন করতে হয়। এর ফর্ম বজায় রেখে আজকের বিরুদ্ধ সময়ে কাজ করা, বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন তাই আলোটা নেভানো ছিল। আর সাম্প্রতিক সময়ের খবর এই যে, করোনাকালের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে বাংলা নাটক। নবসূচনা হয়েছে থিয়েটারের। মঞ্চের আরাধ্য ভূমিতে আবারও পা রাখতে শুরু করেছেন থিয়েটারকর্মীরা। এখনও সবকিছু প্রাথমিক পর্যায়ে। তাতে কী ? একটা উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এভাবে থিয়েটারের দলগুলো এগিয়ে এলে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে করা হচ্ছে। থিয়েটারের তীর্থভূমি রাজধানী শহর ঢাকা। উর্বর সব মঞ্চ এখানেই। কিন্তু সরকারী বিধি-নিষেধ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় দলগুলো সক্রিয় হতে পারছে না। সক্রিয় হওয়ার আহ্বানটা জানানো হচ্ছিল ঢাকা থেকেই। সম্প্রতি এ আহ্বান জানান নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। করোনাকালের ইশতেহার ঘোষণা করে তিনি বলেন, সব হলে নাটক হবে। কেন নয়? প্রতিকূল সময়ের সকল সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখেও নাটক হতে পারে বলে অভিমত দেন তিনি। কাজটি সহজে করার উপায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঙালীর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী রীতির নাটক সহজে করা সম্ভব। এ রীতির নাটক খোলামেলা ও গীতল। সচেতনভাবে চাইলে অভিনেতার শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়। সমতলে আসনবিন্যাসের বিধি মেনে কাজ করা অধিকতর সহজ। এর বাইরে যে যার মতো করে সৃজনশীল চর্চা এগিয়ে নিতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। নাসির উদ্দীন ইউসুফ একইসঙ্গে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা গ্রাম থিয়েটারের প্রধান। গ্রাম থিয়েটারেরই কয়েকটি সক্রিয় সংগঠন করোনাকালে নাট্যাভিনয় শুরু করেছে। স্বল্প চরিত্র নিয়ে স্পর্শ এড়িয়ে সরল নাটক মঞ্চায়নের চেষ্টা করছেন তারা। একে বলা হচ্ছে করোনাকালীন নাট্যাভিযান। জানা যাচ্ছে, এরই মাঝে দেশের বিভিন্নস্থানে তিনটি দল নাটক মঞ্চায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। রাজশাহীর পুটিয়া থিয়েটার মঞ্চায়ন করেছে ‘ক্রান্তিকাল’। দলের সূত্র জানায়, একটি বাড়ির খোলা ছাদকে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন নাট্যকর্মীরা। ছয়টির মতো চরিত্র। মুখে মাস্ক পরে পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে অভিনয় করেছেন শিল্পীরা। নাটোরের ইঙ্গিত থিয়েটার মঞ্চায়ন করে নাটক ‘স্পেশাল ট্রেন’। এটি উৎপল দত্তের লেখা প্রথম নাটক। ১৯৬১ সালে এই পথনাটক রচনা করেছিলেন তিনি। করোনাকালে একই নাটক অভিনীত হয় নাটোরে। জয়পুরহাটে নাটক নিয়ে সক্রিয় হয়েছে শান্তিনগর থিয়েটার। বহু বছর ধরে দলটি কাজ করছে। এবার করোনার কারণে নাটক থেকে অনেকদিন দূরে ছিল। কিন্তু নাট্যাভিনয়ের মধ্য দিয়ে ভেতরের সব হতাশা দূর করেছেন তারা। এমন দুর্দিনে নাটক করার অভিজ্ঞতা কী হলো? জানতে দলগুলোর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে পাওয়া যায়নি কাউকে। বিস্তারিত জানান নাসির উদ্দীন ইউসুফ। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, সৃজনশীল মানুষ তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকেন। অলস বসে থেকে তারা বাঁচবেন না। তাছাড়া এমন দুঃসময়ের কথা যতটা সম্ভব তুলে ধরা নাটকের দায়। আমি সে দায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি মাত্র। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কম অভিনেতা-অভিনেত্রী নিয়ে কাজ করা যেতে পারে এখন। অন্তত চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। ঢাকার বাইরের কয়েকটি দল উদ্যোগী হয়েছে। ঢাকার নাট্যকর্মীরা এগিয়ে এলে মঞ্চগুলো খুলে দেয়ার দাবি জোরালো হবে বলে জানান তিনি। নাটক মানব জীবনের অপারাজেয় সহযাত্রী উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোগ-শোক জরা-ব্যধি অতিমারী-মহামারী ঝড়-জলোচ্ছ্বাস যুদ্ধ-মৃত্যু সকল কিছুকে অতিক্রম করে নাটকের জয়রথ এগিয়ে চলবে।
×