ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

লকডাউন হলো ওয়ারী

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ৫ জুলাই ২০২০

লকডাউন হলো ওয়ারী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কঠোরভাবে রাজধানীর ওয়ারী এলাকার একাংশে শনিবার ভোর ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে ২১ দিনের লকডাউন, চলবে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। জোনভিত্তিক লকডাউন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পূর্ব রাজাবাজারের পর এটি রাজধানীতে দ্বিতীয় লকডাউন এলাকা। ভোর থেকে ওই এলাকার মানুষের অবাধ যাতায়াত, সড়ক ও গলির মুখ কার্যকরভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেক আগে থেকে ঘোষণা দেয়ার কারণে লকডাউন পালনে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে ওয়ারীবাসী। চিকিৎসক, নার্স, রোগী, সাংবাদিক এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া কাউকে লকডাউন এলাকার ভেতর প্রবেশ করতে এবং বের হতে দেয়া হচ্ছে না। অনুমতিপ্রাপ্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির কয়েকটি ভ্যান প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এলাকার বাইরে থেকে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহে দায়িত্ব পালন করছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা। ওষুধের ফার্মেসি/দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নজরদারি ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। লকডাউনের সার্রিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ওয়ারী বলধা গার্ডেনে একটি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানায়, ওয়ারী এলাকার তিনটি রোড ও পাঁচটি গলি এই লকডাউনের অধীনে রয়েছে। রোডগুলো হলো- টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন) পর্যন্ত। গলিগুলোর মধ্যে লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র‌্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিটে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার সকাল থেকেই লকডাউন এলাকার রাস্তা ও গলির মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রবেশমুখে অবস্থান করছেন পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক কমিটির সদস্যরা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ লকডাউন কার্যকর করতে ভালভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা। বিগত তিন দিন মাইকিং করে লকডাউনের প্রস্তুতি এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। ওয়ারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে লকডাউন এলাকার নাম ও কট্রোল রুমের জরুরী ফোন নম্বর উল্লেখ করে ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নানা অজুহাতে প্রবেশ ও বের হওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। বাধা দেয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যদের সঙ্গে অনেককে বাগ্বিত-া করতে দেখা গেছে। কর্মস্থলে যাচ্ছেন মোঃ সালাউদ্দিন। তিনি একটি বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টাওে কাজ করেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, এভাবে লকডাউন দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ খুব বেশি কমানো যাবে না। শুধু এলাকাবাসী দুর্ভোগে পড়বে। কয়েকদিন গেলেই বোঝা যাবে লকডাউন কার্যকরকারীরা কতটুকু সহযোগিতা করেন। পর্যাপ্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রেখেছি বের জানান মোঃ সালাউদ্দিন। সকাল সাড়ে ন’টার দিকে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন ওয়ারীবাসী মোঃ আখতারুজ্জামান। তিনি দিনাজপুর গিয়েছিলেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, লকডাউন শুরু হওয়ার বিষয়টি জেনেই তিনি ভোরে ঢাকায় পৌঁছার চেষ্টা করেছেন। জরুরী কাজে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। লকডাউন এলাকার ভেতরেই আমার বাসা। তাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না বলে জানান মোঃ আখতারুজ্জামান। লকডাউন এলাকার বাসিন্দা নন, কিন্তু লকডাউন দেখতে প্রবেশপথের সামনে উৎসুক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশের নিষেধ সত্ত্বেও কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দৃশ্য দেখেন। এমন একজন হলেন মোঃ সাত্তার মিয়া। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, গুলিস্তান যাচ্ছি। যাওয়ার পথে লকডাউন কিভাবে হয় তা দেখে নিলাম বলে তিনি গুলিস্তানের উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করেন। রাজধানীর ওয়ারীতে লকডাউন হওয়া এলাকায় কোন অব্যবস্থাপনা নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহ মোঃ এমদাদুল হক। তিনি বলেন, লকডাউন এলাকায় আমাদের কোন অব্যবস্থাপনা নেই। প্রতিটি কাজ সুচারুভাবে পালন করছি। তবে প্রথমদিন হিসেবে যদি কোন ঘাটতি থেকে থাকে তা আগামী দিনগুলোতে ঠিক হয়ে যাবে। এমদাদুল হক বলেন, আমাদের কোথাও কোন গ্যাপ নেই। ই-কমার্স রয়েছে, ভ্যান সার্ভিস রয়েছে, তারা বিভিন্ন খাবার-দাবার নিয়ে ভেতরে অবস্থান করছে। ওষুধের ফার্মেসিগুলো খোলা রয়েছে। আমাদের দেড় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী তিন শিফটে কাজ করছে। এছাড়া আমাদের অফিসার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লোকজন পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। লকডাউন এলাকায় স্যাম্পল কালেকশন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এখানে দুজন ডাক্তার রয়েছেন যারা করোনায় আক্রান্ত ৪৬ জন রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন লকডাউন অমান্য করার চেষ্টা করলে আপনারা কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এমদাদুল হক বলেন, লকডাউন হবে কি হবে না এটা আমাদের কোন সিদ্ধান্ত নয়, সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা শুধু সেটা বাস্তবায়ন করছি। স্থানীয় লোকজন যদি মনে করেন লকডাউন করা ঠিক হয়নি এটা আমাদের বিষয় নয়, এটা তাদের বিষয়। তিনি জানান, ওয়ারীতে একটি করোনা এ্যাম্বুলেন্স ও একটি নতুন করোনা এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনের জন্য হাসপাতাল রেডি রয়েছে। আমাদের সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি বিষয়ে আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি সুচারুভাবে পালিত হচ্ছে বলে জানান, শাহ মোঃ এমদাদুল হক। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ওয়ারী এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। পুলিশ সেখানে তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। সাধারণত লকডাউন এলাকায় প্রবেশপথ এবং বহির্পথগুলো যাতে নিরাপদ থাকে এ বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। লকডাউন চলাকালে ওই এলাকার মানুষ যাতে ঘরে থাকে, অপ্রয়োজনে বের না হয় সেটা নিশ্চিত পুলিশের টহন টিম, মোবাইল টিম ও পেট্রোল টিম কাজ করছেন। এছাড়াও পুরো এলাকায় পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও কাজ করছে। ঢাকা জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করেই পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, লকডাউনে এই এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী কর্মী এবং কাউন্সিলরের প্রতিনিধিরা থাকবেন, স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের যাতে কোন বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, সেটি আমাদের নজরদারিতে থাকবে। সেবাধর্মী কাজের মধ্যে যেমন কোন রোগীকে সহযোগিতা করা, কেউ মারা গেলে মরদেহ ডিস্পোজাল বা দাফন করাসহ বিভিন্ন কাজে পুলিশ নিয়োগকৃত থাকবে বলেও যোগ করেন তিনি।
×