ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা মোকাবেলায় কৃষিতে বড় প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৫ জুন ২০২০

করোনা মোকাবেলায় কৃষিতে বড় প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার প্রভাব মোকাবেলায় কৃষিতে বড় প্রকল্প গ্রহণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কৃষিমন্ত্রী বলেন, করোনার এই মহাদুর্যোগের প্রভাবে সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা করতে হলে কৃষি খাতে বাস্তবধর্মী সমন্বিত বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। বুধবার সকালে কৃষিমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন থেকে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনায় অনলাইন সভায় এ কথা বলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান। এ সময় মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধানসহ প্রকল্প পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, মহামারী করোনার প্রভাব মোকাবেলা করে কৃষিই সকলকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এ সময় অর্থনীতির যত ক্ষতিই হোক ঘরে খাবার থাকলে অন্তত জীবনটা বাঁচানো যাবে। আর সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয় করোনার প্রকোপের শুরু থেকেই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যন্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষকের পাশে থেকে কাজ করছে। আর এর ফলে কৃষিতে এ দুর্যোগের সময়ও সাফল্য ধরে রাখা গেছে। এ সময় মন্ত্রী কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও এ সাফল্য বজায় রাখার আশা প্রকাশ করেন। উদ্ভাবিত জাত বা প্রযুক্তি দ্রুত মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তি বা জাত উদ্ভাবন করে ফেলে রাখলে চলবে না। সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করে যত দ্রুত সম্ভব সেসব জাতকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এ সময় তিনি লবণসহিষ্ণু ধানের জাতকে অতিদ্রুত দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় কৃষকের কাছে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, বর্তমান অর্থবছরে মে ২০২০ পর্যন্ত অর্জিত জাতীয় গড় অগ্রগতি অপেক্ষা এ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি বেশি হয়েছে। তিনি এ ধারা অব্যাহত রাখার তাগাদা দেন। সভায় জানানো হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট ৭৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এসব প্রকল্পের অনুকূলে মোট বরাদ্দ আছে ১৭৬৩.৯৪ কোটি টাকা। এ অর্থবছর মে ২০২০ পর্যন্ত সময়ে অর্থ অবমুক্ত হয়েছে ১২৮৯.৫৪ কোটি টাকা, যা মোট সংশোধিত বরাদ্দের ৭৩.০০ শতাংশ এবং অর্থ ব্যয় হয়েছে ১০৪২.৫৬ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৫৯ শতাংশ। এছাড়া, করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে বসতবাড়ি ও অনাবাদি পতিত জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে সবজি ও ফল চাষাবাদের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে যা শীঘ্রই অনুমোদনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হবে। কৃষিপণ্য কেনাবেচার অনলাইন সাইট ‘হর্টেক্সবাজারবিডি.কম’ উদ্বোধন ॥ এদিকে, এদিন কৃষিপণ্যের রফতানির সুযোগ বৃদ্ধি, মানসম্পন্ন সবজি ও ফলমূলের বাজার উন্নয়ন, করোনা পরিস্থিতিতে সতেজ পণ্য ক্রয়ে ভোক্তাশ্রেণী সৃষ্টি, কৃষিপণ্যের সঠিক বাজারজাত ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে অনলাইন মার্কেট সাইট ‘হর্টেক্সবাজারবিডি.কম’ (যড়ৎঃবীনধুধৎনফ.পড়স)’ উদ্বোধন করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। কৃষিমন্ত্রী সরকারী বাসভবন থেকে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ সাইট উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে মন্ত্রী বলেন, কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি বা রফতানি বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ বাজারে সেসব পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে, বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে, দেশে উন্নত অভ্যন্তরীণ বাজার স্থাপন করতে হবে, কাঁচাবাজার ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তা না হলে বিদেশীরা এদেশ থেকে কৃষিপণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হবে না। তিনি বলেন, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন কৃষিপণ্যের রফতানি বাড়াতে কাজ করছে। এই অনলাইন মার্কেট কৃষিপণ্যের রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, মানসম্পন্ন কৃষিপণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধি করে রফতানির সুযোগ বৃদ্ধি করা এ সাইটটির মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি, অভ্যন্তরীণ বাজারজাত আরও সহজতর করতে এবং সেই সঙ্গে ভোক্তা যাতে সহজে ও স্বল্প সময়ে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য পেতে পারেন সেক্ষেত্রেও ‘হর্টেক্সবাজারবিডি.কম’ সাইটটি বড় ভূমিকা রাখবে। হর্টেক্স ফাউন্ডেশন ‘সফটওয়্যার শপ লিমিটেড’(এসএসএল)-এর মাধ্যমে এই ই-কমার্স সাইটটি তৈরি করেছে। এটি পুরোপুরি ব্যবহারকারীবান্ধব, একজন ভোক্তা সহজেই তার পছন্দমতো পণ্যের ক্রয়াদেশ দিতে পারবেন। পণ্যের মূল্য ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড/বিকাশ/নগদ/রকেট ইত্যাদির মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়া নগদ টাকা পরিশোধ করেও পণ্য গ্রহণ করতে পারবেন। পণ্য সরাসরি হর্টেক্স ফাউন্ডেশন অফিস থেকে ভোক্তা গ্রহণ করতে পারবেন। এমনকি হোম ডেলিভারির মাধ্যমেও পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমান পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সবজিসহ আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আনারস, সুগন্ধি চাল, ইত্যাদি ভোক্তাসাধারণের জন্য যোগান দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার ভোক্তাসাধারণের জন্য হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের রিফার ভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি ও ফল সরবরাহ করা হচ্ছে।
×