ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে শীঘ্রই আলোর মুখ দেখছে ‘স্বপ্নের ফ্লাইওভার’

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২৮ মার্চ ২০২০

  রাজশাহীতে শীঘ্রই আলোর মুখ দেখছে ‘স্বপ্নের ফ্লাইওভার’

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। খুব শীঘ্রই এটির কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। রাজশাহীর প্রথম এ ফ্লাইওভারটি নির্মিত হলে ক্রমবর্ধমান নগরীর যানজট যেমন কমবে, তেমনই কম সময়ে মানুষ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে পারবে। এছাড়া যে নক্সায় ফ্লাইওভারটি নির্মিত হচ্ছে তাতে নগরীর সৌন্দর্যও বাড়বে। রাসিক সূত্র জানায়, মহানগরীর রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক থেকে মোহনপুর-রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার চার লেন রাস্তা ২০২ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ অনেকটা এগিয়ে চলেছে। ফ্লাইওভারের সঙ্গে ১২৪ মিটার র‌্যাম, ১টি ব্রিজ, আটটি কালভার্ট, ৭শ’ মিটার রিটেনিং ওয়াল এবং রাস্তার উভয় পাশে ১৪ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ করা হচ্ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ফ্লাইওভারটির শেষ পর্যায়ের কাজ পরিদর্শন করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় মেয়র ফ্লাইওভারের ওপরে উঠে হেঁটে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, খুব শীঘ্রই রাজশাহীবাসীর আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে ফ্লাইওভার নির্মাণের মধ্য দিয়ে। রাসিকের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী নগরীর যানজট নিরসন ও নগরবাসীর চলাচলের পথ সহজ করতে তার প্রথম মেয়াদে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এখন কাজটি শুরু হয়েছে। নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়ে চলেছে। আর কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে খুব শীঘ্রই রাজশাহীর প্রথম ফ্লাইওভারটি চলাচলের জন্য চালু হয়ে যাবে। মেয়র আরও বলেন, রাসিকের জন্য এটি অনেক বড় কাজ। ফ্লাইওভার নির্মাণের মাধ্যমে নাটোর-নওগাঁ সড়কের মধ্যে একটি বন্ধন তৈরি হতে যাচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, প্রতিনিয়তই বাড়ছে নগরীর পরিধি। বাড়ছে মানুষও। তাই ২০৫০ সালে রাজশাহীর চিত্র মাথায় রেখেই ফ্লাইওভারটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাসিক সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এমবিআইএল-আরই (জেভি)। এছাড়া প্রকল্পের অংশ হিসেবে ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে ডিয়েনকো লিমিটেড নামের কনস্ট্রাক্টশন প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী-নওগাঁ এবং রাজশাহী-নাটোর সড়কের সংযোগ হিসেবে এই ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে চলাচল করবে দ্রুতগামী যানবাহন। আর নিচ দিয়ে যাতায়াত করবে ট্রেনসহ অন্যান্য গাড়ি। এরই মধ্যে সংযোগ সড়ক ও ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। ঢাকার দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। চলতি বছর মুজিববর্ষেই ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, রাজশাহী-নওগাঁ-নাটোর চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এই ফ্লাইওভারটিও নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হবে ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩২ টাকা। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাজশাহীর নাগরিকরা বলছেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে যানজট যেমন কমবে, তেমনই কম সময়ে মানুষ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে পারবে। ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে নগরীর সৌন্দর্য বাড়ার পাশাপাশি যানজট কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, যে নক্সায় ফ্লাইওভারটি নির্মাণ হচ্ছে তাতে নগরীর সৌন্দর্য অনেক বাড়বে। এছাড়া নাটোর ও নওগাঁর সঙ্গে রাজশাহীর যোগসূত্র সহজ হবে। বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখনই পরিকল্পিতভাবে এমন কিছু উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এদিকে সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও আরেকটি আন্তর্জাতিকমানের ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-আরডিএ। প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজও এগিয়ে এগিয়ে চলেছে। চার লেনের এই ফ্লাইওভারের নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেড। শীঘ্র্র্রই এটি নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আরডিএ কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের জুন মাসে নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে খড়খড়ি বাইপাস পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভারসহ ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে ২০১৮ সালের জুন থেকে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। রাজশাহীর এ ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আরডিএ সূত্র জানায়, নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারটি নাটোর-রাজশাহী মহাসড়ক এবং বাইপাস সড়কটির সঙ্গে সংযুক্ত। রাজশাহী-নাটোর সড়কটি মহানগরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় যানজট সৃষ্টি হয়। নির্মাণাধীন সংযোগ সড়কটি চালু হলে বাইপাস দিয়ে রাজশাহী থেকে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোই যানবাহন চলাচল এবং প্রবেশ করতে পারবে। ফলে যানজট কমবে। পাশাপাশি কমবে রাস্তার দূরত্বও।
×