ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ করল হনুমানের দল

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ করল হনুমানের দল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর ॥ কেশবপুরের বিরল প্রজাতির কালোমুখো লেজ লম্বা হনুমান আবারও তাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিবাদ করে নজির স্থাপন করল। একটি শিশু হনুমানকে কে বা কারা পিটিয়ে আহত করায় হনুমান দল থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা প্রায় এক ঘন্টা থানার গেটের সামনে অবস্থান করে অবরোধ করে রাখে। বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতির কালোমুখ হনুমানের থানা ঘেরাও করার কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান এবং কেশবপুর থানার ওসি মোঃ শাহিন নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানূর রহমান জানান, রবিবার কেউ একটি শিশু হনুমানকে রক্তাক্ত জখম করে। দুপুরে একদল হনুমান আহত ওই বাচ্চা হনুমানটিকে নিয়ে কেশবপুর থানায় ঢুকে পড়ে। তারা গেটের সামনে প্রায় এক ঘন্টা অবস্থান করে থাকে। এরপর থানার ওসি মোঃ শাহিন হনুমান দলের সামনে এসে আসামীকে ধরে সাজা দেয়া হবে বলার পর কিছু খাবার খাওয়ালে তারা থানা থেকে চলে যায়। নির্বাহী অফিসার আরও জানান, কে বা কারা হনুমানের বাচ্ছাটিকে আহত করেছে তা এখনো জানা যায়নি। তিনি হনুমানের খাবার সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে তাদের খাবারের জন্য বছরে ৭ লাখ টাকা বরাদ্ধ রয়েছে। এ ঘটনার পর আমি জেলা প্রশাসককের কাছে তাদের খাবার বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছি। তিনি জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে কিছু পরিমান খাবারের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেনে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে হনুমানের খাবারের বরাদ্ধ বাড়ানোর আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন। কেশবপুর থানার ওসি মোঃ শাহিন জানিয়েছেন, থানায় গেটের সামনে একদল হনুমান অবস্থান করার আমি বাইরে বেরিয়ে গিয়ে দেখি দুটো মেয়ে হনুমান দেয়ালের একপাশে আলাদা বসে আছে। তাদের একজনের কোলে একটি রক্তাক্ত আহত শিশু হনুমান। তখন আমি বুঝতে পারি বাচ্চাটিকে মারধর করে আহত করা হয়েছে এবং আহত করার অভিযোগ জানাতেই হনুমান দল থানায় এসেছে। তিনি আরও জানান, ২০ থেকে ২৫টি হনুমান দলবদ্ধভাবে থানার গেটের সামনে ও ডিউটি অফিসারের কক্ষে অবস্থান নেয়। আমি হনুমান দলের সামনে দাঁড়িয়ে বাচ্চা হনুমানের ওপর হামলাকারীদের বিষয়ে দেখবো বলে আশ্বাস দেই। প্রায় এক ঘন্টা অবস্থানের পর কিছু খাবার দিলে খেয়ে তারা চলে যায়। কেশবপুরের হনুমান অনেকটা মানুষে মতো আচরন করে। প্রায় শহরের খোলা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে হনুমান মারা যায়। তখন ওই দলের সকল হনুমান মৃত হনুমানের চারপাশে নীরবে বসে শোক প্রকাশ করে থাকে। ৫/৬ বছর আগে শহরের জনৈক ব্যক্তি একটি হনুমানকে ইয়ার গানের গুলি করে হত্যা করে। সেই সময় হনুমান দল তার বাড়ির ছাদে গিয়ে লাফালাফি ও ঝাপাঝাপি করে গাছের ডাল ভাংচুর করে। কয়েক বছর আগে অজ্ঞাত কেউ একটি হনুমানের লেজ কেঁটে দেয়। ওই সময়ও হনুমানরা দল বেঁধে থানার ভেতর গিয়ে ঘেরাও করে ছিল। ৪ বছর আগে নছিমনের ছাপায় একটি বাচ্চা হনুমান মারা গেলে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মা হনুমানটি হাসপাতাল রোডে অবস্থান করে প্রতিটি চলন্ত নছিমনের ওপর হামলে পড়ে চাকা কাঁমড়াতে থাকে। এমন অনেক প্রতিবাদের নজির স্থাপন করেছে কেশবপুরের হনুমানরা। আবহমান কাল থেকে কেশবপুরে হনুমানের বসবাস। চরম খাবার সংকট ও রক্ষানাবেক্ষনের অভাবে বিরল প্রজাতির হনুমান দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সরকাবিভাবে প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প পরিমান খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল মোনায়েম হোসেন জানান প্রতিদিন ৩৫ কেজি কলা, ২ কেজি বাদাম ও ২ কেজি পাউরুটি চারটি পয়েন্টে দেয়া হয়। সরকারিভাবে দেওয়া অল্প পরিমান যে খাবার দেয়া হচ্ছে তাতে একটি পয়েন্টের হনুমানেরও পেট ভরে না। তারপর ঠিকাদার বরাদ্ধের খাবার ঠিকমতো দেয় না বলে অভিযোগ রযেছে। আর খাবারের অভাবে হনুমান প্রতিনিয়ত বাসাবাড়ি, খাবারের দোকানে এবং হাসপাতালের রোগির জন্য বাইরে থেকে নিয়ে যাবার সময় সেই খাবার হামলা করে ছিনিয়ে নিয়ে খাচ্ছে হনুমানরা। ক্ষুধার জ্বালায় হনুমান দলছুট হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। প্রয়োজনীয় খাবার ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ক্রমেই কমে যাচ্ছে কেশবপুরের ঐতিয্যবাহী বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান। এক সময় হাজার হাজান হনুমান থাকলেও এখন তা কমে হাতে গোনা ২শ’ ৬০ টিতে নেমে এসেছে। উন্নয়ন, মাথাপিছু আয়সহ সবকিছু বাড়লেও হনুমানের খারারের পরিমান দিনদিন কমে যাচ্ছে। খাবার বাজেট কমে যাওয়ায় এবং তাদের রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা গ্রহন না করায় বিরল প্রজাতির হনুমানদের ধবংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ক্ষুধার্ত হনুমান গুলো পেটের জ্বালায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরের অলিতে গলিতে, বাসাবাড়িতে, হাসপাতালে। হামলা করছে দোকান পাটে, কেঁড়ে নিচ্ছে পথচারীর খাদ্য খাবার। আর এ কারনে হনুমানরা মানুষের রোসানলে পড়ে আহত নিহত হচ্ছে।
×