ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুরে দুই কিশোর গ্যাং সদস্যের হাতে প্রাণ হারায় নরসুন্দর ইমরান

প্রকাশিত: ১০:১৮, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 সৈয়দপুরে দুই কিশোর গ্যাং সদস্যের  হাতে প্রাণ  হারায় নরসুন্দর ইমরান

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরে বেশ কিছু কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা হয়ে উঠছে অসহিষ্ণু। ঠুনকো ঘটনা ঘিরেও জড়িয়ে পড়ছে সহিংসতায়। পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা দেয়া, তরুণীদের উত্ত্যক্ত করা, স্টাইলে চুল কাটাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছে কিশোর গ্যাং। এক গ্রুপের দেখাদেখি জন্ম নিচ্ছে আরেক গ্রুপ। তাদের কাছে রয়েছে ধারালো অস্ত্র। তারা মাদকে মেতেছে। কাউকে পরোয়া করে না। সিনিয়র-জুনিয়র বা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঘটছে হত্যাকান্ড। অভিযোগ উঠেছে সৈয়দপুরে যে কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে তারা সকলেই নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান। স্কুলের গন্ডি তাদের ভাল লাগে না। বখাটে, বেপরোয়া স্বভাব, চলাফেরায় থাকে তারা উগ্র। নিজ নিজ এলাকায় তারাই রাজা। আর ছোটখাটো ছিনতাই, ছিচকে চুরি। বেশির ভাগ কিশোর অবাঙালী পরিবারের সন্তান। এই অবস্থায় সৈয়দপুরের কিশোর গ্যাং দলের দুই সদস্য পূর্ব শত্রুতার জের ধরে নরসুন্দর পেশায় জড়িত এক যুবককে খুন করেছে। শুক্রবার কথা বলা হলে সৈয়দপুরের বেশ কিছু সচেতন মহল অভিযোগ করে জানায়, সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংদের। যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন কিশোর গ্যাংদের দুই সদস্য হলো উপজেলার হাওলাদার পাড়া এলাকার কালু বাবুর্চির ছেলে সুমন (১৮) ও হাতিখানা ক্যাম্প এলাকার মইদুর রহমানের ছেলে আকবর আলী (১৯)। পূর্ব শক্রতার জেরে এই দুই কিশোর উপজেলার হাওলাদার পাড়া এলাকার মোহাম্মদ তেলির ছেলে ইমরানকে (২৪) ধারালো চাকু দিয়ে খুন করে। খুনী এই দুইজনকে গ্রেফতার করেছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানা পুলিশ। হত্যার শিকার ইমরান নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার হাওলাদার পাড়ার (সিরিজগাছ সংলগ্ন) ফল ব্যবসায়ী মোঃ টেনির ছেলে। সে বিয়ে করে উপজেলা শহরের হাতিখানা মহল্লার মোহম্মদ আজাদের মেয়েকে। ইমরানের একটি সন্তান রয়েছে। সে নরসুন্দর পেশায় জরিত। কাজ করত রাজধানীতে। ইমরানের পরিবার জানায়, মহরমের আশুরায় তাজিয়া মিছিলের সময় প্রতীকী দুলদুল ঘোড়ার সাজে পাইক পরিধান করত ইমরান। এবারও আশুরায় তার এই সাজ করার কথা ছিল। এ জন্য ১০ সেপ্টেম্বর মহরমের তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে ঢাকা থেকে ইমরান ২ সেপ্টেম্বর সৈয়দপুর আসে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সুমনের সঙ্গে মূলত ইমরানের পূর্ব শক্রতা ছিল। দুই বছর আগে ইমরান ও সুমনের খুবই ভাব ছিল। তারা এক সময় অবৈধভাবে ভারতে যাওয়া-আসা করত। অবৈধভাবে ভারত যাওয়া-আসায় এক সময় সুমন বিএসএফের হাতে আটক হয়। আর ইমরান পালিয়ে আসে। ভারতে সুমনের ১৭ মাসের জেল হয়। জেল খেটে সুমন সৈয়দপুরে ফিরে আসে। সুমনের ধারণা ছিল সে ভারতে বিএসএফের হাতে আটকের পেছনে ইমরানের ভূমিকা ছিল। সে জন্য সুমন ইমরানের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সুযোগ খুঁজছিল। ইমরান ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে সৈয়দপুর এলে সুমন ও আকবরের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। সুমন তার মনের ক্ষোভ গোপন রেখে ইমরানের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলে। পাশাপাশি বন্ধু আকবরকে সঙ্গে নিয়ে ইমরানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমরানকে নিয়ে সুমন ও আকবর গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে চিরিরবন্দর উপজেলার উত্তর বাংগালপাড়ায় বেড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে ধান ক্ষেতের অদূরে তারা বসে মাদক সেবন করছিল। সেখানেই ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে ইমরানকে ক্ষত-বিক্ষত করে সুমন ও আকবর আলী। পরে স্থানীয়রা ইমরানকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ সময় এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশ হত্যাকারী সুমন ও আকবর আলীকে গ্রেফতার করে। বাঙ্গালপাড়া গ্রামের আব্দুল হালিম (৫০), মাহফুজুর রহমান ও রাকিব জানান, ধান ক্ষেতের অদূরে তিনজন কিশোর ধস্তাধস্তি করছিল। একজন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুইজন যুবক দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া করে আটক করে থানা পুলিশে খবর দেয়। সৈয়দপুর উপজেলার হাতিখানা গ্রামের ইমরানের শ্বশুর মোঃ আজাদ সাংবাদিকদের জানায়, সে ঢাকায় সেলুনে কাজ করত। কয়েকদিন আগে সে বাড়িতে এসেছে মহরমের তাজির মিছিলে অংশ নিতে। ইমরান হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আশরাফুল ইসলাম জানান, নিহত ইমরানের বাম চোয়ালে, গলার নিচে, বাম কানে এবং বুকের বামদিকে চাকুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ দিনাজপুরের মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। ইমরানকে পূর্ব শত্রুতার জেরে হত্যার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত সুমন ও আকবর। নীলফামারীর সনাক সভাপতি এসএম সফিকুল ইসলাম জানান, আমরা দেখছি দেশজুড়ে কিশোর গ্যাং গ্রুপের নানান কথা। সৈয়দপুর উপজেলা শহরে কিশোর গ্যাং থাকতে পারে এমনটা আমরা কোনদিন ভাবিনি। তিনি মনে করেন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়েও উঠতে পারে। এদের প্রতিহত করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
×