ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বুটজোড়া চিরতরে তুলে রাখছেন টাইগার শরীফ

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১০ জুলাই ২০১৯

বুটজোড়া চিরতরে তুলে রাখছেন টাইগার শরীফ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবার সত্যিই ফুটবলকে বিদায় জানাতে যাচ্ছেন এনামুল হক শরীফ। আগামী ১৫ জুলাই হতে যাচ্ছে তার বিদায়ের দিন। ওইদিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফুটবলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের বিরুদ্ধে খেলে চিরতরে বুটজোড়া তুলে রাখবেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিপিএল ফুটবলে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আবাহনীর বিরুদ্ধে খেলে অবসর নেয়ার পরিকল্পনা ছিল ‘টাইগার শরীফ’ খ্যাত মোহামেডানের ৮ নম্বর জার্সিধারী এই ফুটবলারের। কিন্তু ম্যাচের দু’দিন আগে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি! কারণ ছিল ক্লাবের অনুরোধ এবং পরিবারের ইচ্ছা। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার ছেলে শরীফ জনকন্ঠকে জানান, ‘তাছাড়া তখন পয়েন্ট টেবিলে ক্লাবের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। তখন ক্লাবের ওই দুরবস্থায় অবসর নিলে নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে যেতাম। তবে পরে অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করি অবসর নিয়েই ফেলবো। কারণ দুটি। এক. এখন লিগের দ্বিতীয় পর্বে পয়েন্ট টেবিলে মোহামেডানের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। দুই. আমার হাঁটুর অপারেশন করালে পুরোপুরি চোটমুক্ত হয়ে, ফিটনেস ফিরে পেয়ে আবারও খেলার জন্য মাঠে নামতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে। আমার এখন যা বয়স (৩৭), তাতে করে চোট থেকে ফিরেই মাঠে নামাটা চ্যালেঞ্জের। তখন কে আমাকে দলে নেবে? ১৯ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতায় জানি, এক বছর পর চোট থেকে ফিরেই প্রথম একাদশে খেলা সহজ নয়। তাছাড়া আমি যে ধাঁতে গড়া, তাতে করে সাইডবেঞ্চে বসে থাকাটাও আমার জন্য সম্ভব নয়। তাই পরিবারের সঙ্গে বসে অনেক আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সম্মান থাকতেই বিদায় নেয়া ভাল।’ আগেরবার বিদায় নেয়ার সময় প্রতিপক্ষ হিসেবে আবাহনীকে বেছে নিয়েছিলেন। মজার ব্যাপার- এবারও বিদায়র সময় শরীফের প্রতিপক্ষ সেই একই, আবাহনী! এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘আমার বহুদিনের স্বপ্ন মোহামেডানের জার্সি গায়ে মাঠ থেকে অবসর নেব এবং প্রতিপক্ষ থাকবে আবাহনী।’ অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছেন শরীফ। এজন্য তিনি কৃতজ্ঞ দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবুর প্রতি, ‘বাবু ভাই আমাকে অনেক স্নেহ করেন। তিনি আমাকে জিগ্যেষ করেছেন আমি কিভাবে অবসর নিতে চাই। আমি বলেছি আগামী ১৫ জুলাই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনীর বিরুদ্ধে কয়েক মিনিট খেলে চিরতরে বুটজোড়া তুলে রাখতে চাই। তিনি রাজি হয়েছেন। জানিয়েছেন সব ব্যবস্থা করে দেবেন। এজন্য তাকে অশেষ ধন্যবাদ।’ যদিও এবারও ক্লাব তাকে অবসরের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বলে? ‘না, এবার আর এমনটা হবে না। আমি ১২০ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, এবার আমি সত্যিই অবসর নিচ্ছি। আমাকে এক কোটি টাকা দিলেও আমি অবসরের সিদ্ধান্ত পাল্টাবো না।’ শরীফের দৃঢ়কণ্ঠ। উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে ফেডারেশন কাপের প্রস্তুতি হিসেবে মোহামেডানের হয়ে একটি প্রীতি ম্যাচে খেলেন আরামবাগের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে খেলতে গিয়ে বাজেভাবে হাঁটুতে চোট পান শরীফ। ফলে খেলতে পারেনি ফেডারেশন কাপে। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী চার সপ্তাহের মধ্যেই তার মাঠে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ব্যথা না কমায় ফেরা হয়নি। তারপরও অনুশীলন চালিয়ে যান স্বাধীনতা কাপে খেলার জন্য। কিন্তু ফিট না হওয়াতে সে আসরেও খেলতে পারেননি। এর কিছুদিন পরেই প্রিমিয়ার লিগ শুরুর ঠিক আগে লিগে খেলতে পারায় সম্ভাবনা যাচাই করতে ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে হাঁটুর পরীক্ষা (এমআরআই) করান। সেখানেই ধরা পড়ে বিষয়টি। জানা যায় লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে তার। সার্জারি করাতে হবে। আর সেটা করলে প্রায় বছরখানেক ফুটবল খেলতে পারবেন না। ফলে সবদিক বিবেচনা করেই চিরতরে বুটজোড়া তুলে রাখার কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেন শরীফ। দীর্ঘ ১৯ বছরের ক্যারিয়ার শরীফের। খেলেছেন ভিক্টোরিয়া, মোহামেডান, জামাল ও রাসেলে। অধিনায়ক ছিলেন ২০১১ সালে মোহামেডান এবং ২০১২ সালে জামালের। লীগ রানার্সআপ হয়েছেন চার বার (মোহামেডানে ৩ বার, জামাল ১ বার), আর লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এক বার (জামাল)। ২০০৬-২০১১ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে নিয়মিত খেলেছেন। এরপর হাঁটুর ইনজুরির কারণে ২০১-১৪ পর্যন্ত ফুটবল খেলেননি। ২০১৫-১৬ সালে পুনরায় খেলায় ফেরেন। তার আক্ষেপ- জাতীয় দলের অধিনায়ক হতে না পারা। ২০১২ সালে চোট না পেলে জাতীয় দলের অধিনায়ক হতে পারার জোর সম্ভাবনা ছিল তার।
×