ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষক ধান ফলিয়ে ন্যায্যমূল্যের বদলে শাস্তি পাচ্ছে ॥ ড. কামাল

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ২৩ মে ২০১৯

 কৃষক ধান ফলিয়ে  ন্যায্যমূল্যের বদলে শাস্তি পাচ্ছে ॥ ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘অনির্বাচিত সরকারকে’ এভাবে বহন করায় সব মানুষকে মূল্য দিতে হচ্ছে এমন মন্তব্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ। তিনি বলেন, মানুষের বোঝা দরকার ‘অনির্বাচিত সরকারকে’ বহন করার কারণে তাদের মূল্য দিতে হচ্ছে। কৃষক ধান উৎপাদন করে মূল্যের পরিবর্তে এখন শাস্তি পাচ্ছে। এ অবস্থার জন্য সরকার দায়ী। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত ‘কৃষক-জনতা এক হও, সরকার হটাও দেশ বাঁচাও’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। কামাল হোসেন বলেন, কৃষক ধান বুনে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন করেছেন। তার ন্যায্য মূল্য পাওয়া তো দূরের কথা, তা না কেনায় সেই কৃষক বাধ্য হচ্ছেন ধানগুলো পোড়াতে। সরকারের কৃষিনীতি না থাকায় এ সঙ্কটগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষক যাতে উৎপাদনের জন্য খরচ তুলে আনতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। সরকারকে সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, শুধু কৃষকদের ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে না, সব ক্ষেত্রেই সরকার ব্যর্থ। কামাল হোসেন বলেন, এটা দায়িত্বহীন সরকার। তাদের যে একটা দায়িত্ব আছে কৃষকদের প্রতি, ক্রেতাদের প্রতি, নাগরিকদের প্রতি। কোন রকমের দায়িত্ব বোধ না রেখেই কিন্তু তারা দায়িত্বহীনভাবে এই সঙ্কটগুলো সৃষ্টি করার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকার রাখছে।’ কামাল হোসেন বলেন, দ্রুত নির্বাচন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা গণতান্ত্রিক সরকারে প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ও জবাবদিহিমূলক সরকার না থাকায় সাধারণ মানুষের মূল্য দিতে হচ্ছে। সরকার মানুষের আস্থা নিয়ে দায়িত্ব নেয়নি জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, সরকার ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছে। তারা দায়িত্ব পালন করতে সরাসরি ব্যর্থ হচ্ছে। সংসদের বাইরে অন্যতম বিরোধী জোট হিসেবে তারা কোন কর্মসূচী দেবে কি না, তা জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, তারা কিছু সুপারিশ দিয়েছেন। এ ছাড়া সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের আহ্বান জানান। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, কৃষক বাঁচাও আন্দোলন সব সরকারের সময়েই করতে হয়। কারণ কৃষকদের দাবিগুলো কেউ তুলে ধরতে চায় না। সরকার ঋণখেলাপিদের প্রতি সহানুভূতিশীল উল্লেখ করে রেজা কিবরিয়া সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যতটুকু সহানুভূতি ঋণখেলাপিদের দেখানো হচ্ছে, তার সামান্য যদি কৃষকদের প্রতি দেখানো হয়, অনেক কিছু হতে পারে। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে অভিযোগ করে বলা হয়, সরকার ফড়িয়া-মিলমালিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত ও লেনদেন করছে। ধান-চাল ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। গণফোরাম উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলাতে চারটি সুপারিশ দেয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, হাটগুলোয় ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা, শস্য বহুমুখী ও দেশে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে সহায়তা, শস্যবিমা চালু এবং খাদ্যগুদাম না থাকলে কৃষকের গোলাতেই ধান রাখা। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহসীন রশিদ, মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদ প্রমুখ। কামাল হোসেন বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ধান উৎপাদনের জন্য কৃষককে এমন শাস্তি পেতে হবে এটা অকল্পনীয়। ধান চাষ করে মূল্য না পেয়ে কৃষক তার ধান মাঠেই পুড়িয়ে ফেলছে। এই অবস্থা শুধু কৃষিক্ষেত্রে নয়, দেশের সব ক্ষেত্রে। এ অবস্থার জন্য সরকার দায়ী। ‘সরকারে কোন কৃষিজীবী নেই। তাই কৃষি বিষয়ে তারা যেসব কথা বলেন তা নিজেরাই মানেন না এবং করেন না। ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে দুইবার নির্বাচন করেছে সরকার। এখন তারা বলছে তৃতীয়বার নির্বাচিত হয়েছে। তার মানে তারা যে আগামী পাঁচবছর ক্ষমতায় থাকছে তাও বলে দিচ্ছে। এটা দেশবাসীর প্রতি চরম অবজ্ঞা।
×