ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬.৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬.৫ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ধরে আগামী ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ ধরা হয়েছে। এর আগের মুদ্রানীতিতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সরকারী খাতে ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বেলা সাড়ে এগারোটায় চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গবর্নর ফজলে কবির। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গবর্নর বলেন, বুধবার রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিউইয়র্ক আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফজলে কবির বলেন, আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারী খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬.৫০ শতাংশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারী খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৬.৮০ শতাংশ। গবর্নর জানান, নতুন মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন আসছে না। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও মুদ্রানীতির কৌশল নির্ধারণে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময় ডেপুটি গবর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট পরামর্শক আল্লা মালিক কাজমী, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, ব্যাংকিং রিফর্ম এ্যাডভাইজার এস. কে. সুর চৌধুরী, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকারী ঋণের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। মুদ্রানীতি ঘোষণার সূচনা বক্তব্যে গবর্নর বলেন, ২০১৮ সালের জুন শেষে ৫.৭৮ শতাংশ গড় বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বর ২০১৮ শেষে ৫.৫৪ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ২০১৯ অর্থবর্ষের জন্য জাতীয় বাজেটে প্রক্ষেপিত ৫.৬০ শতাংশ উর্ধসীমার নিচে। পূর্ববর্তী অর্থবর্ষের বন্যাজনিত ফসলহানির প্রতিকূলতা অতিক্রম করে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির এই সাফল্য অজর্নে বড় ভূমিকা রেখেছে। ২০১৮ সালের জুন মাসের শেষে সার্বিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ৭.১৩ শতাংশ থেকে কমে ডিসেম্বর মাসে ৬.২১ শতাংশ নেমেছে। তবে খাদ্য বর্হিভূত ভোক্তা মূল্যস্ফীতি জুনের শেষে ৩.৭৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪.৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে কোর মূল্যস্ফীতি ২০১৮ সালের জুন থেকে ৩.৮২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ডিসেম্বর ৪.৬৫ শতাংশে দাঁড়ায়। গর্বনর বলেন, ২০১৮ সালের জুলাই-নবেম্বর মাসে ৪.৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘাটতি ২০১৯ অর্থবছরের একইসময়ে ২.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ কর্মকা-ের সূত্রে এই ঘাটতি বাড়লেও পূর্ববর্তী অর্থবর্ষের ৯.৭৮ মার্কিন ডলারের বিপরীতে চলতি অর্থবছর শেষে তা ৬.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পরিমিত থাকবে বলে প্রক্ষেপিত হয়েছে। মুদ্রানীতির সূচনা বক্তব্যে বলা হয়েছে, কর্পোরেট খাতের অত্যধিক ব্যাংক নির্ভর মেয়াদী অর্থায়নকে ক্রমশ মূলধন বাজারে বন্ড ইস্যু করে অর্থায়নের দিকে মোড় ঘোরাবার চলমান প্রয়াসের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের মেয়াদী অর্থায়ন আহরণের সরলতর বিকল্পটির বিধিব্যবস্থা প্রণয়ন ও প্রবর্তন এখন সময়োচিত হবে। ফজলে কবির বলেন, বাংলাদেশের মূলধন বাজারের সূচকের গতিধারা এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সূচকের গতিধারার সঙ্গে বহুলাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা মূলধন বাজারে বৈদেশিক পোর্টফলিও বিনিয়োগ আন্তঃপ্রবাহ বৃদ্ধি সুগম করে আমাদের মূলধন বাজারের গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে। গণচীনের বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভের সঙ্গে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট হবার সূত্রে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আন্তঃপ্রবাহ বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উদ্যোগটি ছাড়াও নতুন বহুজাতিক অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক, সচ্ছল দেশগুলোর সভরেন ওয়েলথ ফান্ড এবং খ্যাতনামা বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এবং প্রকৃত খাতের বড় কর্পোরেটগুলোর যোগাযোগ ও সম্পর্ক সূত্র সৃষ্টি প্রত্যক্ষ ও পোর্টফলিও বিনিয়োগ আন্তঃপ্রবাহ দ্রুত বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফজলে কবির বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংক কর্তৃপক্ষসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে বুধবার নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করা হয়েছে। আমাদের একটি প্রতিনিধি দল এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ছাড়াও চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ, একই ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রব এবং এ্যাকাউন্ট এ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন রয়েছেন। গবর্নর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা এই মামলার উদ্দেশ্য। গবর্নর বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনা থেকে যারা লাভবান হয়েছে এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের এ মামলায় আসামি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির এই ঘটনা ফিলিপিন্সেও সাড়া ফেলেছিল। তারাও ঘটনার তদন্ত করে একটি মামলা করে। যে ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ জুয়ার টেবিলে গিয়েছিল, সেই আরসিবিসির কর্মকর্তা মায়া সান্তোস দেগিতোকে সম্প্রতি দোষী সাব্যস্ত করেছে দেশটির আদালত। ওই ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্টস এ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
×