ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নায়ক যখন নির্বাচনে

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

নায়ক যখন নির্বাচনে

আকবর হোসেন পাঠান বা মিয়া ভাইখ্যাত চিত্রনায়ক ফারুকের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট। তার পৈত্রিক বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জে। স্কুলে পড়া অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি। ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৭০-এর নির্বাচনী কার্যক্রম এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতার পর চলচ্চিত্রের নায়ক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্রে অভিনয় করে এদেশের লাখো কোটি মানুষের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। স্বীকৃতি হিসেবে সরকার কর্তৃক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত একজন প্রার্থী। নির্বাচনকে সামনে রেখে জনকণ্ঠ আনন্দকণ্ঠের জন্য চিত্রনায়ক ফারুকের সাক্ষাতকার নিয়েছেনÑ সাজ্জাদ কাদির আনন্দকণ্ঠ : নায়ক যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তখন কী অনুভূতি প্রকাশ করবেন? ফারুক : অপূর্ব অনুভূতি। এটা আমাকে এক প্রকার আমাদের পার্টিপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সংসদে গিয়ে মনের আবেগ থেকে দেশের কথা, মানুষের কথা বলতে পারব এই যে আনন্দ এটাকে আমি আমার সারাজীবনের অর্জন মনে করি। আনন্দকণ্ঠ : আপনি একজন তারকা প্রার্থী হিসেবে দেশের যে কোন স্থানেই আপনার গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন আপনার পৈত্রিক বাড়ি গাজীপুর-৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে। দল আপনাকে মনোনয়ন দিয়েছে ঢাকা-১৭ আসন থেকে। দলের এই সিদ্ধান্তকে কিভাবে দেখছেন? ফারুক : আমি মনে করি গাজীপুর-৫ আসন আমার বাব-দাদার ভিটাবাড়ি। স্বাভাবিকভাবেই আমি ওই জায়গাটিই চেয়েছিলাম। আমার ভাল লেগেছে একটা জিনিস সেটি হচ্ছে আমার নেত্রীর মনোভাব। তার মনোভাবটি এমন যে, তুই যেখানেই যাবি তোকে মানুষ ভালবাসবে। আনন্দকণ্ঠ : আপনাকে পেয়ে নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১৭ আসনের মানুষের প্রতিক্রিয়াটি কেমন? ফারুক : মানুষের ভালবাসায় আমি অভিভূত। আমি কিন্তু তিন-চারটা ইন্টারভিউতে মানুষের ভালবাসা দেখে কেঁদে ফেলেছি। কান্নাটি আমার অভিনয় নয়; ভেতর থেকে আসা। আনন্দকণ্ঠ : আপনি মনোনয়ন পাওয়ার পর আপনার বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলেছিল একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। ইউটিউব, ফেসবুকসহ নানা ডিজিটাল মাধ্যমে আপনার বিরুদ্ধে এখনও কুৎসা রটানো হচ্ছে। তাদের উদ্দেশে আপনি কী বলবেন এবং আপনার বক্তব্যের যে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন? ফারুক : যে ধর্মকে নিয়ে আপনারা কথা বলেন একজন মুসলমান হিসেবে আমাকেও এখানে একটু বলতেই হচ্ছে। আমার পুরো পরিবার মানে আমার ছেলেমেয়ে, স্ত্রীসহ আমরা সবাই পবিত্র হজব্রত পালন করেছি। আমার বংশ পীর বংশ। পূর্বাচলে সাড়ে পাঁচ বিঘা আয়তনের আমার উদ্যোগে নির্মিত একটি মসজিদ আছে। সেটার মোতাওয়াল্লি আমি। আমার অর্থায়নে একটি মাদ্রাসা বানিয়ে দিয়েছি। আমার পরিবার থেকে কবরস্থানের জমি দান করেছি। ভুল ব্যাখ্যা যেটা দেয়া হচ্ছে আসলেই ভুল। আমি দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি, এত বছর অভিনয় করে আপনাদের আনন্দ দিয়েছি, মানুষকে ভালবাসার কথা বলেছি। কখনও এমন কোন কথা বলিনি যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে। যারা কুৎসা রটাচ্ছেন আমি আপনাদেরও ভালবাসি। কাজেই এই ধরনের মিথ্যাচার থেকে আপনারা দূরে থাকবেন বলে আমি আশা করি। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানুষ কখনো মানুষের জয়কে আটকাতে পারে না; সুন্দরকে অসুন্দর করতে পারে না। আনন্দকণ্ঠ : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে আপনার রাজনৈতিক জীবনটি শুরু হয়েছিল অনেক বছর আগে। বলতে গেলে আপনার স্কুল জীবনে। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘটনাক্রমে নায়ক হয়ে যান। নায়ক জীবন বা চলচ্চিত্র জীবনে থাকা অবস্থাতেও রাজনৈতিক আদর্শ থেকে এক চুলও বিচ্যুত হননি; বরং আপনি সক্রিয় ছিলেন। এত একনিষ্ঠ কিভাবে থাকা যায়? ফারুক : আমার মন শক্তিকে আমি দশ বছর বয়সে বেঁধে নিয়েছিলাম। আমার আদর্শ বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর এবং তাঁর কথা মনে হতো আমার কথা। যে কারণে এটা ধীরে ধীরে আমার রক্তের ভেতরে ঢুকে যায়। আনন্দকণ্ঠ : অতীতে আপনি আপনার পেশাগত সংগঠনের নির্বাচন করেছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন। অনেক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম। আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের তুলনায় কি একটু দেরি হয়ে গেল কিনা? ফারুক : আমার কেন যেন মনে হয় ৩০ বছর আগে আমার পার্লামেন্ট মেম্বার হওয়া উচিত ছিল। ভাগ্যের খেলা হতে পারে। যা হওয়ার হয়েছে। আগামীতে যতটুকু করা যায় করার চেষ্টা করব। এটা আমার দুর্ভাগ্য যে ৩০ বছর আগে আমি পার্লামেন্টে যেতে পারিনি। আনন্দকণ্ঠ : সারাদেশে আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে নির্বাচন করছে। ঢাকা-১৭ আসনে আপনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। কিন্তু অনেক আসনে মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়ে গেছে। আপনার আসনেও স্বয়ং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ তার পার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এটি আপনার জন্য কতটা বিব্রতকর? ফারুক : বিব্রতকর বলব না। আওয়ামী লীগের সেই ক্ষমতা আছে, আওয়ামী লীগের সেই বেজ তৈরি করা আছে, আওয়ামী লীগ কাউকে ভয় পায় না। আল্লাহ্ আছেন। আনন্দকণ্ঠ : ধরুন এইচএম এরশাদ নির্বাচন করছেন তাহলে তিনি আপনার একজন অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবং অন্যদিকে বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনিও আপনার অপর একজন প্রতিদ্বন্দ্বী। আপনাদের এই তিনজনের মধ্যে নিজেকে এগিয়ে রাখবেন কোন বিবেচনায় এবং জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী? ফারুক : আমি এই তিনজনের কাউকে খাটো করে দেখি না। আমি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। যা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ করে থাকে। এরশাদ সাহেব নির্বাচন করলে তাঁকে আমি স্বাগত জানাব। তবে তার থেকে নানা কারণে আমি নিজেকে এগিয়ে রাখব। পার্থর ব্যাপারে বলব ও আমার অনেক জুনিয়র, আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমি তাকে দোয়া করব, পার্থ তুমি ভাল থাকবে, সুন্দর থাকবে। আর জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। আনন্দকণ্ঠ : সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে আপনার নির্বাচনী এলাকা নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? ফারুক : এই আসনের পিকিউলিয়ারিটি এটা যে একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এখানে একদিকে যেমন দেশের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা আছে আবার তেমনি এখানে অনেক দুঃখী মানুষ বাস করে। আর দীর্ঘ ১৬ বছর এখানে নৌকার মাঝি ছিল না। এবার আমাদের নেত্রী এখানে নৌকার মাঝি পাঠিয়েছেন। আমার যতটুকু করার থাকবে আমি ইনশাআল্লাহ এক বিন্দুও কাজ কম করব না। আনন্দকণ্ঠ : আকবর হোসেন পাঠান থেকে সুপারস্টার নায়ক ফারুক হয়েছেন যে অঙ্গন থেকে সেই চলচ্চিত্রাঙ্গনের জন্য একজন সংসদ সদস্য হিসেবে কী ভূমিকা রাখতে চান? ফারুক : চলচ্চিত্রের অনেক দুঃখ-দুর্দাশা আছে। যেটি আমাকে অবশ্যই তুলে ধরতে হবে। আমি মনে করি সরকারের জন্য এটি খুবই ছোট্ট একটি কাজ। একটু পদক্ষে নিলেই অনায়াসে করা যাবে বলে আমি আশা ব্যক্ত করি। আনন্দকণ্ঠ : সারাদেশে আপনার অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী আছে এবং তাদের দৃষ্টি ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনের এই মুহূর্তে তাদের উদ্দেশে কী বলবেন? ফারুক : আমার সারাদেশের দর্শকদের নিকট আমি দোয়া চাইব আমি যেন পার্লামেন্টে গিয়ে আপনাদের মুখ উজ্জ্বল করে রাখতে পারি। আনন্দকণ্ঠ : নির্বাচনের এই ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেয়ার জন্য জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ। ফারুক : জনকণ্ঠকেও আমার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
×