ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাটিংয়ে ইমরুল, বোলিংয়ে জার্ভিস সেরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

ব্যাটিংয়ে ইমরুল, বোলিংয়ে জার্ভিস সেরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে কী অসাধারণ ব্যাটিংটাই না করলেন ইমরুল কায়েস। দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন। প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৪ রান ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ১১৫ রান করলেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেন। তিন ম্যাচে ১১৬.৩৩ গড়ে রান করেন ৩৪৯। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিপক্ষীয় কোন ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ রান করে দেখান। তাতে সিরিজ সেরাতো তার হওয়ারই কথা। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজসেরা হলেনও। প্রথমবারের মতো কোন সিরিজে সিরিজসেরা হলেন। সবাইকে ছাপিয়ে রানের দিক দিয়ে সবার ওপরেও থাকলেন ইমরুল। বল হাতে কাইল জার্ভিস ৫ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে সবার ওপরে থাকলেন। ইমরুলের আসলে দুর্ভাগ্যই। ২০০৮ সালে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে ইমরুলের। ১০ বছর ওয়ানডে ক্রিকেট খেলার পরও এ ব্যাটসম্যান ৭৬টি ওয়ানডে খেলতে পেরেছেন। ৩২.৮৩ গড়ে ২৪৩০ রানও করেছেন। কিন্তু ইমরুল কখনই জাতীয় দলে নিয়মিত হতে পারেননি। ভাল খেলেও জাতীয় দলে আসা যাওয়ার মধ্যেই তার দিন কেটেছে। এবার যে খেলা দেখালেন তাতে দলে যে থিতু হচ্ছেন ইমরুল তা নিশ্চিতই। এশিয়া কাপের দলে ছিলেন না ইমরুল। হঠাৎ করেই ডাক পান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে অপরাজিত ৭২ রান করে নিজেকে জাতীয় দলে নিয়মিত করলেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে অনায়াসেই দলে ঢুকে গেলেন। একাদশেও খেললেন। তামিম ইকবাল না থাকায় ওপেনিংয়েও সুযোগ পেয়ে গেলেন। দেখালেন ঝলক। এমন ঝলকই দেখান, এখন ইনজুরি কাটিয়ে তামিম দলে ফিরলে ইমরুল না লিটন ওপেনিংয়ে থাকবেন; সেই দ্বিধা তৈরি করে ফেললেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তামিম ইকবাল ৩১২ রান করেছিলেন। যা বাংলাদেশের হয়ে এক সিরিজে সর্বোচ্চ রান ছিল। ইমরুল এবার তামিমকেও ছাপিয়ে গেছেন। ৩৪৯ রান করে এখন তিন ম্যাচের এক সিরিজে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান ইমরুলেরই হয়ে গেল। অল্পের জন্য বিশ্বরেকর্ড গড়তে পারেননি ইমরুল। একেবারে কাছে চলে গিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে তিন ম্যাচেই সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের বাবর আজম করেছিলেন ৩৬০ রান। তিন ম্যাচের সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড সেটিই। ইমরুল ছুঁতে পারলেন না ১২ রানের জন্য। তবে দুই নম্বর স্থানটিতে আছেন ইমরুলই। ইমরুলের সামনে টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি করে দেশের হয়ে ইতিহাস গড়ার সুযোগও ছিল। দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা তিন ম্যাচে কিংবা এক সিরিজে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়ার হাতছানি ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে না পারায় সেটি আর হয়নি। তবে এক সিরিজে দুই সেঞ্চুরি করে ফেলেন ইমরুল। চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি হয়ে যায় ইমরুলের। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বা টুর্নামেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে একই সিরিজ বা টুর্নামেন্টে দুটি সেঞ্চুরি করেন ইমরুল। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এবং এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি আছে তামিম ইকবালের। আর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দুটি সেঞ্চুরি করেন। এবার ইমরুল এক সিরিজে দুই সেঞ্চুরি করলেন। ইতিহাস গড়তে না পারায় আক্ষেপও আছে ইমরুলের। বলেছেন, ‘তিনটা সেঞ্চুরি হলে ভাল লাগত যেহেতু এটা কেউ কখনও করেনি বাংলাদেশের হয়ে। বাংলাদেশী হিসেবে আমি প্রথম করতাম। আমার একটা সুযোগ ছিল। সেদিন রুমে গিয়ে আমারও খুব খারাপ লেগেছে। তখন এটাই চিন্তা করছিলাম যে, আবার ৯০-এর ঘরে গেলে আর এই ভুল করব না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আগের ম্যাচে আসলে নিজের কাছে আমার একটু বেশি প্রত্যাশা ছিল। পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করব, যার জন্য চাপ বেশি লাগছিল। আমি শূন্য রানেও আউট হতে পারতাম। তবে আমি রান করেছি তিনটা ম্যাচে। এ জন্য অবশ্যই ভাল লাগছে।’ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে ইমরুলের ধারে কাছে নেই কোন ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুইয়ের শন উইলিয়ামস ২২৬ রান করেন। এরপর আছেন ব্রেন্ডন টেইলর (১৫৫ রান) ও সৌম্য সরকার (১১৭ রান)। এক ম্যাচে খেলতে পেরে সেঞ্চুরি হাঁকান সৌম্য। সৌম্যকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ২২০ রানের রেকর্ড জুটিও গড়েন ইমরুল। বল হাতে অবশ্য জিম্বাবুইয়ের জার্ভিস (৫ উইকেট) বাজিমাত করেছেন। তার পরেই আছেন ৪ উইকেট করে নেয়া মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও নাজমুল ইসলাম অপু। তবে ইমরুলের প্রশংসাই চতুর্দিকে। কঠিন সময় অতিক্রম করে এসে এমন উজ্জ্বলতা ছড়াতে পেরেছেন ইমরুল। এখন এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান। তাই বলেছেন, ‘ভাই আমাকে খেলতে দেন। আমি অতো কিছু জানি না, কিভাবে কি (সম্ভব হয়েছে)। এত বড় প্লেয়ার হইনি এখনও। তিনটা ম্যাচ ভাল খেলেছি। আর চেষ্টা করব বাকি ম্যাচগুলোও ভাল খেলার। খুব ভাল লাগছে। কারণ ম্যাচটা জেতাতে পেরেছি। এটা অবশ্যই আমার ক্রিকেট জীবনে বড় প্রাপ্তি। আমি চেষ্টা করব এটা ধরে রাখতে। আসলে অনেক লোকেই বলে যে, আমার ধারাবাহিকতা নেই। আমি জানি, আমি কোথায় রান করি বা করি না। এটা নিয়ে আমি আতঙ্কিত না।’
×