ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফেরদৌসী খানম লাকী

সহমর্মিতা ও ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৬ জুলাই ২০১৮

সহমর্মিতা ও ভালবাসা

আমাদের সমাজে একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাব এই ‘অটিস্টিক শিশু’দের যাদের আমরা ভালবেসে নাম দিয়েছি ‘স্পেশাল চাইল্ড’। এই ধরনের শিশুরা অন্যান্য সাধারণ শিশুদের চাইতে হয় একটু আলাদা। তাদের রয়েছে মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা। আর এ ধরনের শিশু যে পরিবারে রয়েছে তাদের পারিবারিক জীবন এবং সামাজিক জীবন হয় একটু আলাদা ধরনের। এ ধরনের শিশুদের লালন পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনেক ধৈর্য এবং মমতা। আর বলাই বাহুল্য এই ধৈর্য, মমতা তার ঘর থেকেই শুরু“করতে হবে। এই ধরনের শিশুদের লালন পালন করতে শুধু তার মা এবং বাবা নয় পরিবারের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে, করতে হবে সহযোগিতা। আমাদের সমাজে দেখা যায় অনেক বাবা, মা-ই তাদের ‘অটিস্টিক শিশু’দের নিয়ে বিড়ম্বনায় থাকেন। কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাতায়াত করতে চান না অন্যদের ব্যঙ্গ/তামাশার ভয়ে। অনেক আত্মীয়স্বজন ও তাদের অবহেলার চোখে দেখেন। আর কোন কোন প্রতিবেশী আরও বেশি নির্মম হন। তারা ‘পাগল’ আখ্যা দিতেও পিছপা হন না। একজন নিষ্পাপ শিশুকে নিয়ে যখন এই ধরনের অবস্থা চলতে থাকে তখন শিশুটির মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। আর সে সুস্থ জীবন থেকে আরও খারাপ অবস্থার দিকে যেতে বাধ্য। আর তাই অনেক বাবা, মা এই বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাকে সামাজিক জীবন থেকে দূরে রাখতে পচ্ছন্দ করেন যা তার জন্য এটা কারাগার সমতুল্য। এই যে সামাজিক জীবন থেকে দূরে রাখা তার এই প্রতিবন্ধকতাকে বাড়িয়ে তোলে। এই সময় বাবা, মা দৃঢ় চিত্ততা, শিশুটির পাশে দাঁড়ানো অনেকাংশেই তাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। সাধারণ শিশু থেকে অধিক মনোযোগী হয়ে তাকে মনুষ্য সমাজে ‘একা’ চলার যোগ্য করে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাতে হবে। দেখতে হবে তার মেধা, দেখতে হবে কি বিষয়ে সে আগ্রহী? আর সে বিষয়গুলো বিবেচনা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তাকে ধীর পদক্ষেপে এগুতে হবে। আজ খুশির খবর তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক বিকাশে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে এবং সাফল্যও এনে দিচ্ছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছেÑ ‘প্রতিবন্ধকতা’ থাকতেই পারে আর তা কাটিয়ে উঠতে পারলেই অন্যান্য সাধারণের মতো ‘স্বভাবিক’ জীবনযাপন সে অভ্যস্ত হতে পারে। জীবনে সে ‘একা’ চলার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারে। আমাদের সমাজের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক উন্নয়নও জরুরী। মানসিক উন্নয়ন না হলে ‘অটিস্টিক শিশু’কে পাগল বলে আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করবে না এ সমাজ। আর তাই সমাজ সচেতনতার জন্য চাই প্রচুর প্রচার। আজ ‘প্রচারের যুগ’। আর সরকার সে বিষয়ে বেশ সচেতনভাবে কাজ করছেন। আর এই সচেতনাকে আমাদের অন্তরে ধারণ করতে হবে। সমাজ সচেতন হলে প্রতিটি ঘরে ঘরে ‘অটিস্টিক শিশু’ পরিবার কিংবা সমাজের ‘জঞ্জাল’ নয় তা প্রমাণিত হবে।একজন ‘স্পেশাল চাইল্ড’ চায় করুণা নয়, সহমর্মিতা ও ভালবাসা। শুধু এটুকু পেলে ওরাও হতে পারে যোগ্য। একা চলার সাহস করতে পারে কারও উপরে নির্ভর না করে। মানুষ হিসেবে উজ্জ্বলতার স্বাক্ষর রাখতে পারে সমাজে। তাই, আসুন ওদের দিকে মমতার হাত বাড়াই। ভালবেসে যার যার অবস্থান থেকে একটু সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেই। মানুষ হিসেবে একজন মানুষকে সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেই। আগারগাঁও, ঢাকা থেকে
×