ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলার ঐতিহ্য হালখাতা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

বাংলার ঐতিহ্য হালখাতা

পুরনো হিসাব নিকাশ চুকে নতুন বছরে নতুন খাতায় নাম তোলাই হলো হালখাতা। গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ডিজিটাল যুগে একটু ভাটা পরলেও একেবারে গুটিয়ে যায়নি। ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের পুরনো হিসাবের খাতা বন্ধ ও নতুন বছরে নতুন খাতা খোলার আনন্দ-আয়োজন, আনন্দ উল্লাস, মিষ্টি মুখ ও আনুষ্ঠানিকতার নামই হালখাতা। হালখাতা’ আবহমান বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানের হিসাব আনুষ্ঠানিক হালনাগাদের এ প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়েছে। পয়েলা বৈশাখ থেকে হালখাতা শুরু হয়ে চলছে গ্রাম শহরে পুরাদমে। বৈশাখ মাসজুড়ে চলবে হালখাতা। ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন হালখাতার মাধ্যমে ক্রেতাদের পুরনো হিসাব নিকাশ চুকাতে। ক্রেতারাও মিষ্টি মুখ করে হিসাব চুকিয়ে যাচ্ছেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০-১১ মার্চ স¤্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকেই ‘হালখাতা’র প্রচলন হয় তৎকালীন ভারতবর্ষে। পুরনো বছরের হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায়, তা-ই ‘হালখাতা’ নামে পরিচিত। হালখাতা বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। বছরের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনার হিসাব চুকিয়ে এদিন হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এজন্য ক্রেতাদের বিনীতভাবে পাওনা শোধ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় শুভ হালখাতা কার্ড-এর মাধ্যমে। হালখাতার কার্ডের মাধ্যমে ঐ বিশেষ দিনে দোকানে আসার নিমন্ত্রণ জানানো হয়। এই উপলক্ষে নববর্ষের দিন ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টি মুখ করান। ক্রেতা তাদের সামর্থানুসারে পুরোনো দেনা শোধ করে দেন। আগেকার দিনে ব্যবসায়ীরা একটি মাত্র মোটা খাতায় তাদের পুরো বছরের যাবতীয় হিসাব লিখে রাখতেন। এই খাতাটি বৈশাখের প্রথম দিনে নতুন করে হালনাগাদ করা হতো। হিসাবের খাতা হাল নাগাদ করা থেকে ‘হালখাতা’-র উদ্ভব। পহেলা বৈশাখের সকালে সনাতন ধর্মাবলম্বী দোকানি ও ব্যবসায়ীরা সিদ্ধিদাতা গণেশ পূজার মাধ্যমে দিনের শুভ সূচনা করেন। দেবতার পায়ে ছোঁয়ানো সিন্দুরে স্বস্তিকা চিহ্ন অঙ্কিত ও চন্দন চর্চিত খাতায় নতুন বছরের হিসাব নিকেশ আরম্ভ করা হয়। আগে হালখাতায় অনেক আনন্দ হতো। দোকানে দোকানে প্লেটে করে মিষ্টি বিতরণ করা হতো। ক্রেতারা পুরনো হিসাব পরিশোধ করতে আসত। ক্রেতাদের জন্য দোকানে চা, মিষ্টি, সন্দেশসহ নানা আয়োজন থাকত। মহাজনেরা দোকানে নতুন মাল দিত, সেই মালে সিঁদুরের ফোঁটা দিত দোকানিরা। গদিতে উঠতো নতুন পাটি।’ পয়লা বৈশাখে হালখাতা বাঙালী ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যবাহী অংশ হলেও বর্তমানে হালখাতা আর আগের মতো জমজমাট নেই। তবুও শহর গ্রামের অনেক ব্যবসায়ী হালখাতার রেওয়াজ ধরে রেখেছেন। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে হালখাতার প্রচলন এখনও বেশি রয়েছে। বর্তমান আধুনিক যুগে আদিকালের হালখাতা অনেকটা উঠে গেছে। ‘হালখাতা’ শব্দটি শুনলেই চোখে ভাসে মোটা রঙের লালখাতা। দোকানিরা লাল খাতায় লিখে রাখেন পুরো বছরের বাকির হিসাব। বৈশাখের প্রথম দিন দোকানিকে বাকি পরিশোধ করতে গেলে তাদের আপ্যায়ন করাটাই হালখাতার ঐতিহ্য। বেশ কয়েক ধরনের লাল রঙের খাতায় হালখাতা চালু আছে বাজারে। এসব খাতার দামে ও নামে রয়েছে চমক। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে মানুষ আস্তে আস্তে হালখাতা ব্যবহার থেকে সরে আসছে। সুমাইয়া বুক হাউসের মালিক সুলতান আহম্মেদ বলেন, আগের মতো এখন আর হালখাতার প্রচলন নেই। আমতলী উপজেলা পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আবদুল জব্বার হাওলাদার বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হালখাতায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। প্রতিবছর বৈশাখের পূর্বে হাজারো লালখাতা বিক্রি হতো কিন্তু এখন অনেক কমে গেছে। -মোঃ হোসাইন আলী কাজী, আমতলী-বরগুনা থেকে
×