ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে না পদ্মাবতী

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

১ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে না পদ্মাবতী

ভারতে ৭০০ বছর আগেকার চিতোরের রানী পদ্মিনীর জীবন নিয়ে তৈরি বলিউড ছবি ‘পদ্মাবতী’কে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তুমুল প্রতিবাদ শুরু“ হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কিছু মহল ‘পদ্মাবতী’ ছবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যে রাজস্থানের করনি সেনা ও উত্তর প্রদেশের ক্ষত্রিয় সমাজ সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। হিন্দুধর্ম অবমাননা, রাজপুত নারী আর রানী পদ্মিনীর সম্মানহানির অভিযোগ এনে তারা সঞ্জয় লীলা বানসালির এ ছবির বিরোধিতা করছে। এমনকি ছবির নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোনের নাক কেটে নেয়ার হুমকি দেয়া হয় গত বৃহস্পতিবার। সব হুমকি আর বাধা উপেক্ষা করে ১ ডিসেম্বর সিনেমা মুক্তির প্রস্তুতি নেন বানসালি ও তার টিম। কিন্তু এবার ছবিটি আটকে দিয়েছে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি)। কাজেই ১ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে না ‘পদ্মাবতী। এর আগে ‘পদ্মাবতী’র মুক্তি আটকে দেয়ার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছে উদয়পুরের রাজ পরিবার। উদয়পুরের মেওয়ারের রাজ পরিবারের অন্যতম সদস্য এমকে বিশ্বরাজ সিং মোদির পাশাপাশি এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও সিবিএফসি প্রধান প্রসূন যোশীকেও। তার একটিই আবেদন, পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানশালির ড্রিম প্রজেক্ট ‘পদ্মাবতী’র মুক্তি আটকে দেয়া হোক। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, মানব সম্পদ ও উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে এবং এসপির কাছেও একই অনুরোধ জানিয়েছে ওই রাজ পরিবার। ১ ডিসেম্বর ছবিটির মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যে রাজপুত সংগঠনগুলো এই ছবির বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন - বহু জায়গাতেই বিজেপি নেতারাও এই দাবিতে গলা মিলিয়েছেন। রাজপুতানার ইতিহাস বলে, দিল্লীর শাসক আলাউদ্দিন খিলজীর কবল থেকে রক্ষা পেতে রানী পদ্মিনী ১৬,০০০ নারীকে নিয়ে চিতায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন - কিন্তু পদ্মাবতী সিনেমায় তার সেই মর্যাদা ও আত্মত্যাগকে খাটো করা হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য। এই ছবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রাজস্থানের গ-ি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভারতের নানা প্রান্তে। ছবিটি নিয়ে যাদের আপত্তি এবার তাদের এক হাত নিয়েছেন বলিউডের অন্যতম আলোচিত অভিনেত্রী বিদ্যা বালান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘সব কিছুই কারোর না কারোর পয়েন্ট অব ভিউ। আমার মনে হয় এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করা উচিত, এটাই গণতন্ত্র। আপনার ভাল না লাগলে ছবিটি দেখতে যাবেন না, বয়কট করেন। কিন্তু আপনি এটা বন্ধের জন্য বল প্রয়োগ করতে পারেন না। এদিকে এসব প্রেক্ষিতে ভিডিও বার্তা ছেড়েছেন নির্মাতা বানসালি। তিনি বলেছেন অনেক দায়িত্ব, সততা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পদ্মাবতী সিনেমাটি বানিয়েছি। সব সময়ই রানী পদ্মিনীর গল্পের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে এসেছি এবং এই সিনেমাটি তার সাহস ও সম্মানের প্রতি উৎসর্গ করে নির্মিত। কিন্তু কিছু গুঞ্জনের কারণে এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গুঞ্জনটি হলো- সিনেমায় রানী পদ্মিনী ও আলাউদ্দিন খিলজীর ড্রিম সিকোয়েন্স রয়েছে। আমি এর আগেও বিষয়টি খোলাসা করেছি, এমনকি লিখিতও দিয়েছি। এই ভিডিওর মাধ্যমে আমি আবারও বলছি, সিনেমায় রানী পদ্মিনী ও আলাউদ্দিন খিলজীর এমন কোন দৃশ্য নেই যেটি কারও অনুভূতিতে আঘাত করবে। আমরা সিনেমাটি খুব দায়িত্ব নিয়ে নির্মাণ করেছি এবং রাজপুতদের সম্মান অটুট রেখেছি। আমি আবারও বলছি, কারও অনুভূতিতে আঘাত করবে এমন কোন দৃশ্য এ চরিত্র অথবা ড্রিম সিকোয়েন্স নেই।’ সিবিএসসির প্রধান প্রসূন যোশি আগে থেকেই নাকি বানসালির ওপর চটে ছিলেন। সঞ্জয় লীলা বানসালি ‘পদ্মাবতী’ মুক্তির তারিখ অনেক আগেই নির্ধারণ করেন। ছবির ট্রেলার মুক্তির আগে তিনি রাজপুত করনি সেনাদের ছবিটি দেখানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কথা রাখেননি বানসালি। সেন্সর বোর্ডেও ছবি জমা দিয়েছেন গত শনিবার। তবে, তা ছবির মুক্তি বাতিল করার মূল কারণ নয়। প্রসূন যোশি জানান, তাদের কাছে ছবি দেয়ার সময় উল্লেখ করা হয়নি ‘পদ্মাবতী’ ঐতিহাসিক ছবি, নাকি কাল্পনিক। এদিকে বানসালি সেন্সর বোর্ড থেকে পাস করানোর আগেই কয়েকজন সাংবাদিক নিয়ে তার ছবির বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন। এরপর সাংবাদিকেরা জাতীয় সংবাদমাধ্যমে ছবির রিভিউ দেন। তারা জানান, ‘পদ্মাবতী’ ছবিতে আপত্তিকর কিছু নেই। এ ছবির মাধ্যমে কারও ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করা হয়নি। যদিও কোন ছবির ব্যাপারে এ পর্যালোচনা দেয়ার অধিকার সবার আগে সিবিএফসির। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ‘বোর্ড থেকে অনুমোদন পাওয়ার আগেই বানসালি ছবির বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছেন। অনুমোদনহীন একটি ছবি দেখে আবার সাংবাদিকেরা জাতীয় সংবাদমাধ্যমে রিভিউ ও মতামত দিচ্ছেন। বিষয়টি দুঃখজনক।’
×