ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘পিয়ংইয়ং যুদ্ধ বাধানোর পাঁয়তারা করছে’

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধানোর পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পিয়ংইয়ং ষষ্ঠ পরমাণু পরীক্ষার পর সবচেয়ে কঠিন ভাষায় নিন্দা জানাল ওয়াশিংটন। উত্তর কোরিয়া রবিবার ষষ্ঠ পরমাণু পরীক্ষাটি এ যাবতকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল বলে জানা গেছে। এএফপি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট। উত্তর কোরিয়া রবিবার শক্তিশালী পরমাণু পরীক্ষা চালানোর পর দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র এখন এ নিয়ে নিজেদের করণীয় ঠিক করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পিয়ংইয়ংয়ের অব্যাহত হুমকির মুখে মিত্রদের রক্ষার্থে তার দেশ পরমাণু সক্ষমতাকে ব্যবহার করতে প্রস্তুত আছে বলে জানালেও জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করতে চায়। উত্তর কোরিয়া রবিবার হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে। এরপর ট্রাম্প জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে ফোনে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন প্রতিবেশী দেশকে সতর্ক করতে দক্ষিণ কোরিয়া মঙ্গলবার তাজা গোলা নিয়ে নৌ মহড়া শুরু করেছে। রবিবারের ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া সোমবার একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠকে নিকি হ্যালি বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দিনের মধ্যে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব দিবে। আগামী সোমবার এর ওপর ভোটাভুটি হবে। তিনি বলেন, কেবল কঠোর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কূটনৈতিক উপায়ে আমরা এ সমস্যা সমাধান করতে পারব। উত্তর কোরিয়া রবিবার পরমাণু পরীক্ষা চালানোর পর সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন। এতে হ্যালি বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়ে এলেও কোন কাজ হয়নি। কিম জং উন যেভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষা করে যাচ্ছেন তাতে মনে হয় যুদ্ধ বাধানোই তার লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চায় না, অন্তত এই মুহূর্তে যুদ্ধ করার ইচ্ছা আমাদের নেই। তবে আমাদের ধৈর্যের সীমা আছে। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞায় কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে হ্যালি সেটি স্পষ্ট করে না বললেও কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ায় তেল সরববরাহ বন্ধ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া দেশটির পর্যটন ও শ্রম খাতও এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকরা অন্য দেশে গিয়ে কাজ করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞার খসড়া মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের অপর ১৪ সদস্য দেশের কাছে উপস্থাপনের কথা রয়েছে। উত্তর কোরিযা আরও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবরের পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবটি দ্রুত পাস হোক। পিয়ংইয়ং জুলাই মাসে দুটি আইসিবিএম পরীক্ষা করেছে এবং আরও পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে বলে প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া মনে করে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সোমবার বলেছেন, পিয়ংইয়ংয়ের হুমকি মোকাবেলা উপদ্বীপটিতে সাময়িকভাবে মার্কিন পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি করা হলে আকস্মিকভাবে সংঘাত বেধে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লিউ জিয়েউ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। চীন যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়ে চলা কখনও সমর্থন করবে না। চীন মনে করে সংলাপ ও কূটনৈতিক পথেই কেবল সমস্যার সমাধান হতে পারে। রাশিয়া বলেছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে, তবে কেবল এসব পদক্ষেপের মাধ্যমেই কোরীয় সঙ্কটের সমাধান হতে পারে না বলেও মস্কো মন্তব্য করেছে। এর আগেও হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষার দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া। গত বছর জানুয়ারিতে চতুর্থ পরমাণু পরীক্ষার পর একটি হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে পিয়ংইয়ং দাবি করেছিল। তবে এর কম্পন মাত্রা এত কম ছিল যে আসলে হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করা হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
×