ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ওড়িশা অতিক্রমের পথে,;###;বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা না থাকলেও ভারি বর্ষণ ও ভূমিধসের আশঙ্কা

আবার প্রবল বৃষ্টি!

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ জুলাই ২০১৭

আবার প্রবল বৃষ্টি!

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে প্রবল বর্ষণ। বুধবার সকাল থেকে এই প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। যার মাত্রা আরও বাড়তে পারে। প্রবল বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামে ভূমিধসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এক আবহাওয়াবিদ। পতেঙ্গা আবহাওয়া দফতরের কর্মকর্তা শেখ ফরিদ আহমেদ জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ভারতের ওড়িশা অতিক্রমের পথে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার কোন আশঙ্কা না থাকলেও এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হবে। বুধবার সকাল থেকে এই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে এবং এর মাত্রা আরও বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বুধবারও ভিয়েতনাম থেকে আসা চালবাহী প্রথম জাহাজ ‘এমভি ভিসাই’ জেটিতে বেড়ানো সম্ভব হয়নি। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে প্রবল বর্ষণ এবং ঝড়ো হাওয়ায় মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে পণ্য হ্যান্ডলিং। এতে করে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জাহাজজট। পণ্য খালাসের অপেক্ষমাণ রয়েছে ৫৪টি জাহাজ। এর বেশিরভাগই খাদ্যপণ্য, সার, সিমেন্ট ক্লিঙ্কারসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পের কাঁচামাল। বুধবার বহির্নোঙ্গরে কাজ হয়েছে খুবই সামান্য। এদিকে, আমদানি পণ্য খালাস করতে না পারায় আমদানিকারক, শিল্পোদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার ভোর থেকে আবহাওয়া কিছুটা ভাল থাকলেও সকাল ১০টার পর বৃষ্টি হতে শুরু করে। কখনও বা গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও ভারি বর্ষণে জনজীবন থমকে যায়। বিশেষ করে নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে বসবাসকারীরা পড়ে যান শঙ্কার মধ্যে। কেননা, কিছুদিন আগে বেশ কয়েক দফায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এদিকে, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের আমদানি-রফতানি খাত। সাগরে পণ্য লাইটারিং স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। দফায় দফায় থমকে যাচ্ছে বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং। ফলে বড় বড় জাহাজগুলোকে অলস ভাসতে হচ্ছে। এতে করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে আমদানি-রফতানিকারক এবং শিপিং কোম্পানিগুলো। লাইটার জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়ার্টার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ জনকণ্ঠকে জানান, বহির্নোঙ্গরে কাজ হচ্ছে অতি সামান্য। পণ্য লাইটারিংয়ের অনুকূল অবস্থা না থাকায় লাইটার জাহাজ বুকিংও হচ্ছে না। বর্তমানে ৫৪টি মাদার ভেসেল রয়েছে বহির্নোঙ্গরে। স্বাভাবিক কাজ না হওয়ায় দিনে দিনে জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। যে সকল জাহাজ অপেক্ষমাণ রয়েছে তার অধিকাংশেরই মধ্যেই আছেÑ চাল, গম, ডাল, চিনি, লবণ, সিমেন্ট ক্লিঙ্কার এবং শিল্পের কাঁচামাল। আমদানিকারকরা জানান, স্বাভাবিক নিয়মে পণ্য খালাস করতে না পারায় তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। জাহাজগুলো দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকলে শিপিং কোম্পানিগুলোরও মাশুল গুনতে হবে। এ ব্যয় যুক্ত হবে পণ্যের ওপর, যা বাজারকে প্রভাবিত করে থাকে। ঈদের লম্বা ছুটির পর এই বৈরী আবহাওয়া চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারিকে ব্যাহত করছে। এতে করে সাগরে জাহাজজট এবং ইয়ার্ডে কন্টেনারজট দুটিই তীব্রতর হচ্ছে। ছুটির সময় বন্দরে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য খালাস না নেয়ায় কন্টেনারের স্তূপ এমনিতেই বেড়ে যায়। ছুটি শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতি স্বাভাবিকও হয়ে যায়। কিন্তু এবার প্রাকৃতিক বিরূপতা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে দফায় দফায় থমকে দিচ্ছে। এদিকে, ঈদের আগে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বিদেশী একটি জাহাজের ধাক্কায় বন্দরের দুটি কী-গ্যান্ট্রি ক্রেন বিকল হয়ে যাওয়ায় কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়েও দেখা দিয়েছে ধীরগতি। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে হ্যান্ডলিং বন্ধ থাকায় এখন গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি করতে হচ্ছে পুরনো পদ্ধতিতে। গিয়ারলেস জাহাজের পরিবর্তে ক্রেনসংবলিত জাহাজে আনতে হচ্ছে পণ্য। গ্যান্ট্রি ক্রেন অকার্যকর থাকায় সিসিটির (চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল) একটি জেটি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। পণ্য খালাস ও ডেলিভারিতে ধীরগতি এবং ইয়ার্ডে কন্টেনারের স্তূপ জমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যবসায়ীদের অনেক অভিযোগ থাকলেও অনেকটাই নিরুপায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কারণ, এর নেপথ্যে রয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়া। জেটিতে কন্টেনার ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সেখানে কন্টেনার জটের প্রধান কারণ হলো লম্বা ছুটিতে পণ্য ডেলিভারি না নেয়া। এছাড়া অফডকগুলোও তাদের কন্টেনার যথাসময়ে সরিয়ে নিয়ে বন্দরকে সহযোগিতা করেনি বলে জানান বন্দর কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম বন্দরে বুধবারও ছিল ৩০ হাজারের অধিক কন্টেনার। আবহাওয়ার উন্নতি এবং স্বাভাবিক নিয়মে পণ্য ডেলিভারি অব্যাহত থাকলে দুই সপ্তাহের মধ্যে কন্টেনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদ বন্দর কর্মকর্তাদের। বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে উত্তাল অবস্থার কারণে বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারেনি ভিয়েতনাম থেকে আসা চালবাহী প্রথম জাহাজ। বহির্নোঙ্গরে অবস্থান করছে ‘এমভি ভিসাই’ নামের জাহাজটি। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় দফায় দফায় থমকে যাচ্ছে ওই জাহাজ থেকে চাল লাইটারিং। ফলে বুধবারও তা জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে ভিয়েতনাম থেকে জাহাজটি আসে ২০ হাজার মেট্রিক টন সরকারী চাল নিয়ে। গত রবিবার জাহাজ থেকে চাল লাইটারিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও লাইটার জাহাজ জটিলতার কারণে তা শুরু করতে বিলম্ব হয়। মঙ্গলবার সকালে শুরু হয় চাল লাইটারিং। কিন্তু বিকেলেই আবার লাইটারিং বন্ধ করতে হয়। বুধবারও লাইটারিং হয়নি। বৃষ্টির কারণে চাল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় জাহাজের হ্যাচ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বন্দর সূত্র জানায়, ২০ হাজার টন চালবোঝাই জাহাজটিকে পাইলটিং করে সরাসরি বন্দর জেটিতে নিয়ে আসা ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় এর কিছু চাল বহির্নোঙ্গরেই খালাস করতে হচ্ছে। আড়াই হাজার টন চাল খালাস করা গেলে জাহাজটি অনেকটাই হালকা হবে। এরপরই নিয়ে আসা হবে জেটিতে। জাহাজটি জেটিতে ভেড়াবার পরিকল্পনা ছিল বুধবারই। কিন্তু লাইটারিং ব্যাহত হওয়ায় এদিন জেটিতে জাহাজ আনা যায়নি। উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম থেকে এ পর্যন্ত দুটি জাহাজ এসেছে। এর মধ্যে প্রথম জাহাজটিতে রয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টন এবং দ্বিতীয় জাহাজে রয়েছে ২৭ হাজার মেট্রিক টন চাল। এ নিয়ে মোট ৪৭ হাজার মেট্রিক টন চাল চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। চুক্তি অনুযায়ী, ভিয়েতনাম থেকে আনা হবে মোট আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল। বিভিন্ন জাহাজে পর্যায়ক্রমে চালগুলো আসবে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ চাল চট্টগ্রাম বন্দরে এবং বাকি ৪০ শতাংশ চাল মংলা বন্দর দিয়ে সরবরাহ হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা দ্বিতীয় জাহাজের চালের শুল্কায়ন, গুণগত মান পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন আবহাওয়া অনুকূল থাকলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালগুলো খালাস করা হবে বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ। কক্সবাজারে অবিরত বৃষ্টি, বিপাকে পর্যটকরা স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি উত্তাল রয়েছে সাগর। এ কারণে বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা। বুধবার সকাল থেকে অবিরত বৃষ্টি হওয়ায় হোটেলের কক্ষে অবসর সময় কাটাচ্ছেন পর্যটকগণ। আর যারা সমুদ্রসৈকতে এসে পানিতে নামতে চাচ্ছেন, তাদের নামতে দেয়া হচ্ছে না। লাইফগার্ড কর্মীরা বলছেন, সাগর উত্তাল থাকার কারণে কাউকে সাগরের পানিতে নামতে দেয়া হচ্ছে না। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে কক্সবাজারে সাগর উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত কক্সবাজারে এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানীসহ অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টি স্টাফ রিপোর্টার জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। অনেকদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে মৌসুমি বায়ু। বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর এখন পর্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েনি মৌসুমি বায়ু। নিম্নচাপের কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়ার এমন অবস্থা আগামী দুই থেকে তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বুধবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং ভারতের ওড়িশা উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পুরীর কাছ দিয়ে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সতর্ক অবস্থায় চলাচল করতে বলা হয়েছে।
×