ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খাবার ফুরিয়ে গেছে

এখনও উদ্ধার হননি মুসা ইব্রাহীম

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ জুন ২০১৭

এখনও উদ্ধার হননি মুসা ইব্রাহীম

বিডিনিউজ ॥ ইন্দোনেশিয়ার কার্সটেনজ পিরামিডে অভিযান শেষে ফেরার পথে বেজ ক্যাম্পে আটকা পড়া বাংলাদেশের মুসা ইব্রাহীমসহ তিন অভিযাত্রীকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি। এভারেস্ট জয়ী মুসার সঙ্গে এই অভিযানে আছেন ভারতের এভারেস্ট জয়ী পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও নন্দিতা চন্দ্রশেখর। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চারদিন ধরে তারা আটকে আছেন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ২৫৭ মিটার উচ্চতায় মাউন্ট কার্সটেনজের বেজ ক্যাম্পে। রবিবার সকালে তাদের উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টার রওনা হলেও আবহাওয়া খারাপের দিকে গেলে হেলিকপ্টার ফিরে যায়। রবিবার দুপুরে সত্যরূপের স্যাটেলাইট কমিউনিকেটরে যোগাযোগ করা হলে সাড়া দেন মুসা। তিনি জানান, যে ক্যাম্পে তারা আছেন সে জায়গার নাম লেক ফ্যালি। খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় আগের ক্যাম্পারদের ফেলে যাওয়া খাবার খুঁজে নিয়ে তাই দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। পর্বতারোহী রেইনল্ড মেসনারের তালিকা অনুসারে সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ার (সেভেন সামিট) একটি হলো কার্সটেনজ পিরামিড, যা ওশেনিয়া অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া প্রভিন্সে কার্সটেনজ পর্বতমালায় ৪ হাজার ৮৮৪ মিটার উঁচু ওই শৃঙ্গ স্থানীয়ভাবে পুঞ্চাক জায়া নামেও পরিচিত। এই অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য ২৯ মে ইন্দোনেশিয়ার বালি হয়ে পাপুয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন মুসা ইব্রাহীম। বালিতে তার সঙ্গে যোগ দেন সত্যরূপ ও নন্দিতা। পরে পাপুয়ার নাবির থেকে শুরু হয় মূল অভিযান, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ এক্সপেডিশন টু মাউন্ট কার্সটেনজ পিরামিড’। সত্যরূপের স্যাটেলাইট কমিউনিকেটরের রেকর্ড অনুযায়ী, ৬ জুন সুগাপা পুলিশ স্টেশন থেকে ছয় দিন ট্রেকিং করে তারা প্রথমবার বেজ ক্যাম্পে পৌঁছান। বাংলাদেশ সময় ১৩ জুন সকাল ৮টা ৪৯ মিনিটে তিন অভিযাত্রী পৌঁছান কার্সটেনজের চূড়ায়। এভারেস্ট জয়ী ভারতীয় পর্বতারোহী সত্যরূপের বর্ণনা অনুযায়ী, সামিটে পৌঁছানোর আগে যে দুর্গম পথ আর বিরূপ আবহাওয়ার মুখোমুখি তাদের হতে হয়েছে, তাতে এই অভিযানকে নির্দ্বিধায় ‘সব এ্যাডভেঞ্চারের বাবা’ বলা যায়। চূড়া থেকে সেদিন বিকেলেই বেজ ক্যাম্পে ফিরে আসেন তিন অভিযাত্রী। পরদিন ফিরতি পথে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও আটকা পড়েন তারা। এর মধ্যে রসদে টান পড়ায় এবং আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়ায় ১৫ জুন ট্রেকিং বাদ দিয়ে হেলিকপ্টারে ফেরার কথা ভাবতে শুরু করেন মুসারা। স্যাটেলাইট ফোনে যার যার দেশে যোগাযোগও শুরু করেন। তাদের আটকা পড়ার খবর বাংলাদেশে পৌঁছালে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা। মুসার পর্বতারোহণ সংগঠন নর্থ আলপাইন ক্লাবের সদস্য এবং বেশ কয়েক বন্ধু-সুহৃদ সাহায্যের আবেদনও ছড়িয়ে দেন। তাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে। শাহরিয়ার আলম রবিবার ভোরে ফেসবুকে জানান, স্যাটেলাইট কমিউনিকেটরের মাধ্যমে সত্যরূপের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের দূতাবাস একটু আগে জানিয়েছে, তিমিকাতে হেলিকপ্টার প্রস্তুত আছে। আবহাওয়া ভাল হলেই তারা তাদের আনতে যাবে। আশা করি রবিবার সকালেই। আসিয়ান দফতর, আমাদের দূতাবাস এবং ভারতীয় দূতাবাস তদারকি করছে। কিন্তু মুসার স্ত্রী উম্মে সরাবন তহুরা রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বলেন, সোয়া ১০টার দিকে মুসা তাকে জানিয়েছেন, হেলিকপ্টার একবার রওনা হলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফিরে যায়। এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এক বার্তায় একই কথা জানান । আর বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে সত্যরূপের সর্বশেষ যে বার্তাটি স্যাটেলাইট কমিউনিকেটরের রেকর্ডে এসেছে, সেখানেও তাদের অবস্থান দেখানো হয়েছে একই জায়গায়। ২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম। এবার তিনি যে চূড়ায় অভিযানে গেছেন সেই কার্সটেনজ পিরামিডে ২০১৫ সালের নবেম্বরে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে সেভেন সামিট পূর্ণ করেন এভারেস্ট জয়ী দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী ওয়াসফিয়া নাজরীন।
×