ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনে আবার সন্ত্রাসী হামলা

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৭ জুন ২০১৭

লন্ডনে আবার সন্ত্রাসী হামলা

ম্যানচেস্টারে হামলার রেশ না কাটতেই পুনরায় ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হামলা হলো। তিন মাসেরও কম সময়ে যুক্তরাজ্যে এটি তৃতীয় সন্ত্রাসী হামলা। হামলায় ৭ জন নিহত ও অন্তত ৪৮ জন আহত হয়। ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল। স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল এই সন্ত্রাসী হামলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন ব্রিজ ও বরো মার্কেটে বর্বরোচিত ওই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্যের জনগণের প্রতি সংহতি জানাই।’ শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির রাতে লন্ডন ব্রিজে ভিড়ের মধ্যে ভ্যান চালিয়ে দিয়ে এবং ছুরি নিয়ে হামলা হয়। নির্বাচনের চার দিন আগে এ হামলার পর যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই নির্বাচনী প্রচারে সাময়িক বিরতির ঘোষণা দিয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গত ২২ মার্চ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের বাইরে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে শনিবারের হামলার মিল রয়েছে। বলাবাহুল্য, এ ঘটনা বিশ্বনেতৃবৃন্দকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলবে। কিছুকাল আগে ব্রিটেনের নতুন সন্ত্রাসী আইন পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ম্যাক্স হিল এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন ব্রিটেন এখন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলার হুমকি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘ইসলামিক স্টেট ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে নিরপরাধ সাধারণ মানুষদের ওপর, তারা যে জাতি বা বর্ণেরই হোক নির্বিচারে হামলার পরিকল্পনা করছে।’ বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বিমানবন্দর ও মেট্রোস্টেশনে একযোগে তিনটি সন্ত্রাসী হামলার এক বছর পূর্তির দিনে লন্ডনে চলতি বছরের প্রথম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছিল। শনিবারের সন্ত্রাসী হামলার দায় কেউ না নিলেও পক্ষকাল আগে ম্যানচেস্টারে কনসার্ট হলে আত্মঘাতী হামলার দায় আইএস নিয়েছিল। লন্ডনে আগের হামলার দায়ও আইএসই নিয়েছিল। সাম্প্রতিক বিশ্বে যেখানেই বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা ঘটুক না কেন তার বেশির ভাগেরই দায় স্বীকার করে নিচ্ছে আইএস। বর্তমান বিশ্বে আইএস মূর্তিমান আতঙ্কেরই নাম। তাদের নীতিনৈতিকতার কোন বালাই নেই। ইসলামবিরোধী কর্মকা-ের জন্য ইতোমধ্যে তারা ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ঘৃণা কুড়িয়েছে। ইসলামের নামে তারা বর্বরতা ছড়াচ্ছে। মার্চে লন্ডনে প্রথমবার জঙ্গী হামলার পর পরই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জারি করা আছে সতর্ক অবস্থা। নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতর, ব্রিটিশ হাইকমিশন, গ্র্যান্ড সেন্টার টার্মিনালে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। এসব স্থানে ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এতে বোঝা যায় সন্ত্রাস কী ভীষণ এক উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। ক্ষুদ্র বা বৃহতÑ যে পর্যায়েই সন্ত্রাস পরিচালিত হোক না কেন তার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হয় সাধারণ মানুষকেই। মানুষ জীবন পায় একবারের জন্যই, সেই জীবন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে অকালে যাতে ঝরে না যায় বিশ্ববাসীর সেটাই প্রত্যাশা। সন্ত্রাসবাদ মানবতার শত্রু হিসেবেই শনাক্ত হয়। বিশ্বের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সব সময়েই সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে। বিশ্বনেতাদের কর্তব্য হচ্ছে এই গ্রহ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য সম্মিলিতভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া, সন্ত্রাস উস্কে দেয়া নয়। সন্ত্রাসী দমনে কার্যকর পন্থা হলো শুরুতেই তাকে অকার্যকর করে দেয়া।
×