ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আনন্দ নাকি বেদনার উৎসব!

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

আনন্দ নাকি বেদনার উৎসব!

ধবধবে সাদা টি-শার্ট। কাছের মানুষগুলোর লেখায় ভরে গেছে। লেখালেখির লগ্ন এসেছে আজ। কেউ একজন লিখেছে, ‘তোর জন্য একটা ছেলে আজও ভীষণ একা’। বিদায় বেলা সেটা দেখে একা থাকার আর কি উপায় আছে! এই হচ্ছে র‌্যাগ ডে। ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, ঘোরাঘুরি, ক্লাস এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি এভাবে পার হয় জীবনের সব থেকে সেরা দিনগুলো। কখন যে সময় চলে যায় কেউ টেরই পায় না। চারটি বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টুং করে বেজে ওঠে বিদায়ের ঘণ্টা। শিক্ষাজীবনের সেই মধুময় দিনগুলো বিদায়ী শিক্ষার্থীর পিছু ডাকে। আর মধুময় দিনগুলোর স্মৃতি হৃদয়ের ফ্রেমে বেঁধে রাখতে, স্মরণীয় করে রাখতে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে, সেøাগানে, রঙে-রূপে এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে র‌্যাগ-ডে পালন করেন শিক্ষার্থীরা। র‌্যাগ-ডে একটি ইংরেজী প্রবাদ। যার বাংলা অর্থ পড়ালেখা শেষের হৈচৈ পূর্ণ দিন। ঘটা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের এ বিদায়ী অনুষ্ঠান পালন করেন নাচ-গান আর হাসি-তামাশার মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবে র‌্যাগ-ডে কি কোন আনন্দের দিন, নাকি বেদনার? নিজেদের মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে কৃষিশিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভর্তি হয়েছিলাম চার বছর আগে। একেক করে ৪টি বছর পার করে দিলাম এবং শেষ করে ফেললাম ক্লাসের পাঠ। এই চার বছরে ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কত মজার স্মৃতি, আনন্দ-বেদনার বিভিন্ন ঘটনা। স্নাতক পাস করার পর ক্লাসের বিভিন্নজন বিভিন্ন বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়বে। ফলে আর কোনদিন একসঙ্গে ক্লাস, মজা করা হয়ে উঠবে না। তাই স্নাতক পাস করার পর ক্লাসের সবাই মিলে মেতে উঠে পাঠ সমাপনী উৎসব তথা র‌্যাগ ডে নামক মহানন্দে। এভাবেই চার বছরের নানা স্মৃতির কথা বলছিল বাকৃবির মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ৪৪তম ব্যাচের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। সাধারণত স্নাতক পর্যায়ে ক্লাস শেষের দিনে হয়ে থাকে র‌্যাগ ডে। র‌্যাগ ডে পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য দেন না। তাই চাঁদাই একমাত্র ভরসা। আনন্দ, উচ্ছ্বাস, রঙে, রূপে এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে ৯ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল র‌্যাগ ডের আনন্দে মেতে উঠেছিল মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ৪৪ ব্যাচের ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পাস মমতাময়ী মায়ের মতো আপন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ দিনে চোখের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বর্ণাঢ্য ও স্মৃতিময় ঘটনাগুলো ভেসে ওঠে। ক্যাম্পাস যেন ছেঁয়ে যায় উৎসবমুখর পরিবেশে। উৎসবকে সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। নানা রঙের আলপনায় সাজিয়ে তোলে অনুষদ ভবনসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও স্থাপনা। শেষ ক্লাসে কেক কাটা দিয়ে শুরু হয় র‌্যাগ ডের উদযাপন কর্মসূচী। সকল শিক্ষার্থীর গায়ে থাকে র‌্যাগ ডের স্লোগান সংবলিত টি-শার্ট যেখানে সবাই লিখছে মনের না বলা কথা। বন্ধুদের কেউ দুষ্টুমির ছলে রঙ দিয়ে রাঙিয়ে দিচ্ছে অন্য বন্ধুর মুখ, কেউ বা হৈ হুল্লোড়, রং ছোড়াছুড়ি, বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচ, গান, আড্ডায় মেতে ওঠে। আবার কেউ ব্যস্ত স্মরণীয় এসব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে। তিন দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রং খেলা, সাইক্লিং, ফ্লাসমুভ, ট্রাকে করে পুরো ক্যাম্পাস ঘোরা, নৌকা ভ্রমণ, ফানুস ওড়ানো, আতশবাজি ফুটানো, রিক্সায় পুরো ক্যাম্পাস ভ্রমণসহ বার-বি-কিউ পার্টির আয়োজন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস জীবনের নানান স্মৃতিচারণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকে বলেন, আনন্দ উৎসব করলেও প্রিয় ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে। শেষ দিনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী, ব্রহ্মপুত্র নদে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন তারা। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে এসে একে অন্যকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সবশেষে সবাই যেন বলছেন বিদায়, ভাল থেকো বন্ধু। মোঃ শাহীন সরদার
×