স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে ব্যাটসম্যানদের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। বোলাররাই দাপট দেখিয়েছেন। উভয় দল একটি করে ম্যাচ জিতে ১-১ সমতায় এখন চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। রাঁচিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। তবে প্রথমদিনেই দারুণ ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়েছে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের সেঞ্চুরি ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অর্ধশতকে প্রথমদিন শেষ করেছে তারা ৪ উইকেটে ২৯৯ রান নিয়ে। পঞ্চম উইকেটের ১৫৯ রানের বড় জুটিটা অসিদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিশাল একটি সংগ্রহের।
রাঁচির উইকেটটা উভয় দলের জন্যই অপরিচিত। কারণ এর আগে ঝাড়খ-ের এ ভেন্যুতে টেস্ট খেলা হয়নি। ভারতের ২৬তম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে বৃহস্পতিবার যাত্রা শুরু হয়েছে ঝাড়খ- স্টেট এ্যাসোসিয়েশন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। এবার ভারত সফরে অসিদের নতুন ভেন্যুতেই খেলতে হচ্ছে টেস্ট। আর সে কারণে প্রথম টেস্টে ভারতকে চমকে দিয়ে জিতেছিল তারা। ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতেই পারেননি স্পিনারদের দাপটে। পরের টেস্টেও ঘূর্ণি বলের আক্রমণে পথ হারিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। এবার জিতে যায় বিরাট কোহলির দল। রাঁচির এ নতুন ভেন্যু নিয়েও ছিল জল্পনা-কল্পনা। সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও উপস্থিত নেই। নিজের মাঠটা সম্পর্কে কোহলিদের সম্যক ধারণা দেবেন সে উপায় নেই। বিজয় হাজারে ট্রফিতে খেলার জন্য বর্তমানে দিল্লী আছেন ধোনি। তাই কি ঘটতে যাচ্ছে রাঁচিতে সেটা নিয়ে ছিল আলোচনা। তবে বৃহস্পতিবার ম্যাচশেষে অবশ্য সেই শঙ্কাগুলো কেটে গেছে। কারণ বেশ ভাল ব্যাটিং উইকেট বলেই মনে হয়েছে।
টস জিতে অসিরা আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুটা দারুণ করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও ম্যাট রেনশ। ৫০ রানের জুটিতে চিড় ধরে রবীন্দ্র জাদেজা এসে নিজের বলে ফিরতি ক্যাচে ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক মেজাজে ২৬ বলে ১৯ রান করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেট অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৩০ রানের জুটি গড়ার পর রেনশ ৬৯ বলে ৭ চারে ৪৪ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন উমেশ যাদবের পেসে। এরপর ক্রিজে এসে ব্যর্থ হয়েছেন শন মার্শ, ২ রানে ফিরে গেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে। পিটার হ্যান্ডসকম্বকে নিয়ে আগত বিপদ কাটানোর চেষ্টা চালিয়ে যান অধিনায়ক স্মিথ। ৫১ রানের জুটিতে হ্যান্ডসকম্বের অবদান ছিল ১৯। এরপরই তিনি যাদবের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন। কিন্তু স্মিথ দারুণ খেলছিলেন ভারতীয় বোলিংয়ের বিরুদ্ধে। স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকেন তিনি। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন ম্যাক্সওয়েল। আগের দুই টেস্টে খেলেননি তিনি। ২০১৪ সালের পর আবার ফিরেছেন টেস্ট দলে। ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টে নেমেছেন এ আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। আগের সবগুলো ম্যাচই এশিয়ার মাটিতে খেলেছেন।
এবার সুযোগ পেয়েই জ্বলে ওঠেন ম্যাক্সওয়েল। স্মিথের সঙ্গে জুটি বেঁধে ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে নিষ্ক্রিয় করে দেন। পঞ্চম উইকেটে ১৫৯ রান যোগ করেন তারা। ভারতের মাটিতে পঞ্চম উইকেটে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সেরা জুটির রেকর্ড। আবার সেঞ্চুরি হাঁকান স্মিথ। ভারতের মাটিতে কোন টেস্ট সিরিজে বিদেশী অধিনায়কের দুটি সেঞ্চুরি হাঁকানোর এটি সবেমাত্র চতুর্থ ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড ১৯৭৪-৭৫ এবং ১৯৮৩-৮৪ সালে এবং ২০১২-১৩ সালে ইংল্যান্ডের এ্যালিস্টার কুক দুটি করে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন এক সিরিজে। এরপর স্মিথ একই ঘটনার জন্ম দিলেন। তিনি এই সেঞ্চুরির সুবাদে টেস্টে ৫ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন। সেজন্য ৯৭ ইনিংস ব্যাট করতে হয়েছে তার। অবশ্য এই ইনিংসটা এখনও শেষ হয়নি। ২৪৪ বলে ১৩ চারে অপরাজিত আছেন ১১৭ রানে। মাত্র ৫৩ টেস্টে ৫ হাজার রান করে এখন তিনি এই মাইলফলক ছোঁয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় দ্রুততম। তবে ইনিংসের হিসেবে সপ্তম অবস্থানে স্মিথ। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত আছেন ১৪৭ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৮২ রানে। এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আগের ৩ টেস্টে কোন অর্ধশতক হাঁকাতে পারেননি, সর্বোচ্চ ছিল ৩৭ রান। এ জুটির দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ৪ উইকেটে ২৯৯ রান নিয়ে স্বস্তিতে মাঠ ছাড়ে অসিরা।
স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস- ২৯৯/৪; ৯০ ওভার (স্মিথ ১১৭*, ম্যাক্সওয়েল ৮২*, রেনশ ৪৪, ওয়ার্নার ১৯, হ্যান্ডসকম্ব ১৯; যাদব ২/৬৩, অশ্বিন ১/৭৮, জাদেজা ১/৮০)। *প্রথম দিন শেষে