ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

’২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পরে পাবে জিএসপি প্লাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

’২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পরে পাবে জিএসপি প্লাস

এম শাহজাহান ॥ রূপকল্প-২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পর রফতানিতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। শুল্ক ও কোটামুক্ত এই বাজার সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে সম্পৃক্ত ২৭টি কনভেনশন অনুসরণ বা রেটিফাই করতে হবে বাংলাদেশকে। এ লক্ষ্যে চার বছর সামনে রেখেই কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। মূল লক্ষ্য হচ্ছে-পোশাক কারখানায় সুশাসন ও শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরি বা কমপ্লায়েন্সের মতো বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে এসব শর্ত বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়েছে। অন্যথায় ইইউ’র মতো বড় বাজারে পণ্য রফতানি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, আগামী চার বছরের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর ফলে রফতানি খাতে এখন যে পদ্ধতিতে জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস) সুবিধা পাওয়া যায়, ভবিষ্যতে এটি আর থাকছে না। রফতানিতে টিকে থাকতে হলে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো জিএসপি প্লাস সুবিধা নিতে হবে বাংলাদেশকে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এখন সেই সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহে বৈঠক করে তিনটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক সপ্তাহের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনগুলোর কাছে। এ ছাড়া বিএফটিআই (ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট)-কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্র জরুরী ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার জন্য। এছাড়া আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানিতে জিএসপি সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ নীতির উপর একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে ইইউ প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। আর এই সবকিছু হচ্ছে এলডিসি দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশকে উন্নীত করার প্রস্তুতি হিসেবে। এদিকে, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দেবে। এই স্বীকৃতি অর্জনে যে তিনটি সূচক বিবেচনায় নেয়া হয় তা অর্জনে যথেষ্ট এগিয়েছে বাংলাদেশ। এগুলো হচ্ছে-মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদের অবস্থান এবং অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা। ইতোমধ্যে অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা সূচকে বাংলাদেশ নির্ধারিত মাপকাঠি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। অন্য দুটো সূচকে খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। এ কারণে ২০১৮ সালের মধ্যে তিনটি সূচকে নির্ধারিত প্রমাণ অর্জন করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এ কারণে আগামী ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে কাতারে শামিল হবে। এ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই স্বীকৃতি আসবে জাতিসংঘ থেকে। এ লক্ষ্যে আগামী ২০১৮ সালে জাতিসংঘের কাছে সরকার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব প্রেরণ করবে। মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদের অবস্থান এবং অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দেয়। অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা সূচকে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। বাকি দুটোতেও অর্জন কাছাকাছি। এ কারণে ২০১৮ সালে তিনটি সূচকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এদিকে, এই বিবেচনায় আগামী ২০১৮ সালে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের এ প্রস্তাব গ্রহণ করে রূপকল্প-২০২১ সালেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের স্বীকৃতি দেবে জাতিসংঘ। এ সংক্রান্ত অন্যান্য যেসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয় তাও সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ে বিশ্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাবে। শুধু তাই নয়, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমাদের স্বপ্নের দ্বিগন্ত আরও প্রসারিত করেছি। ছয় শতাংশের বৃত্ত ভেঙ্গে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সোপানে আরোহন এবং মাথাপিছু আয়ের ধারাবাহিক উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারে শামিল হওয়া সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। আর এসব কারণে উন্নত রাষ্ট্রগুলো বলছে, এলডিসি থেকে যেহেতু বাংলাদেশ বেরিয়ে আসছে তাই দেশটিকে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় আসতে হবে। জানা গেছে, জিএসপি প্লাস সুবিধা বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ্যাডভাইজরি কমিটি, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ও বিশেষজ্ঞ কমিটি নামে তিনটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ্যাডভাইজরি কমিটি হবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে হবে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। আর বিশেষজ্ঞ কমিটি হবে সরকারী-বেসরকারী সংস্থা ও প্রতিনিধির সমন্বয়ে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, রূপকল্প-২১ অনুযায়ী আগামী চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাচ্ছে। ওই সময় যাতে উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে পণ্য রফতানিতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া যায় সেলক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ইইউসহ অন্যান্য দেশ থেকে এ বিষয়ে কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে আমাদের প্রস্তুতি ভাল। ইতোমধ্যে পোশাক খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সাধারণ জিএসপি ওঠার পর জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এদিকে, সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটির চেয়ারম্যান বার্নেড লেগ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ খুব দ্রুত উন্নতি করছে। দেশটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে ২৭টি কনভেনশন অনুসরণ করার প্রয়োজন হবে। তিনি জানান, টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য সহায়তা হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদান করা হয়। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামসহ ২৫টি উন্নয়নশীল দেশ এ সুবিধা পাচ্ছে।
×