ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পের বৈভবে দীপ্তিময় দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

শিল্পের বৈভবে দীপ্তিময় দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পের বৈভবে এখন দীপ্তিময় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা। শিল্পের বহুমাত্রিকতায় সেজেছে ছয়টি গ্যালারিতে যুক্ত বিশাল প্রদর্শনালয়টি। দেশ-বিদেশের শিল্পীদের সৃজিত বৈচিত্র্যময় কাজগুলো মুগ্ধ করছে শিল্পরসিকদের। প্রথম তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে মননকে আলোড়িত করা নানা সৃষ্টি-সম্ভার। নানা মাধ্যমে আঁকা দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে ভাস্কর্য, স্থাপনাশিল্প, আলোকচিত্র, ভিডিও-শিল্পের সঙ্গে আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে পারফরমিং আর্টের উপস্থাপনা। সামাজিক-রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক ভাবনার সঙ্গে শিল্পীর কল্পলোকে ভেসে বেড়ানো চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে এসব শিল্পকর্মে। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫৫টি দেশের শিল্পীরা এভাবেই আলোকিত করেছেন শিল্পের এই উৎসবকে। আর এভাবেই অশুভের বিরুদ্ধে সুন্দরের বারতায় শুরু হলো ১৭তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। আন্তর্জাতিক এই শিল্প উৎসবের সূচনা হয় বৃহস্পতিবার সকালে। এবারের আর্ট বিয়েনালটি দেশের শিল্পীদের জন্য দারুণ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ধরা দিয়েছে। এই শিল্প-সম্মেলনের তিনটি গ্র্যান্ড প্রাইজের মধ্যে দু’টি ঘরে তুলে নিয়েছেন দেশের শিল্পীরা। অন্যদিকে সম্মাননাসূচক ছয়টি পুরস্কারের সবগুলোই পেয়েছেন এদেশের চারুশিল্পীরা। গ্র্যান্ড পুরস্কারপ্রাপ্ত হারুন-অর-রশীদ নির্মিত স্থাপনাশিল্পটির শিরোনাম ছিল ‘অস্থির সময়ের স্রোত’। একই পুরস্কারজয়ী কামরুজ্জামান স্বাধীনের ‘লোভ’ শিরোনামের স্থাপনাশিল্পে ইঁদুরের মাধ্যমে প্রকৃতির উপর মানুষের সকল অত্যচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এই দুই বাংলাদেশী শিল্পীর সঙ্গে এ পুরস্কার পেয়েছেন চিলির ডাগমারা হুইসক্যাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকার সম্মানী। এছাড়াও সম্মানসূচক পুরস্কপ্রাপ্ত ছয় বাংলাদেশী শিল্পী হলেন কুন্তল বাড়ৈ, বিপাশা হায়াত, রাজিব কুমার রায়, শ্যামল চন্দ্র সরকার ও দিলীপ কুমার কর্মকার। তাঁদের প্রত্যেককে প্রদান করা হয়েছে তিন লাখ টাকার সম্মানী। এ পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো ১৭তম দ্বি-বার্ষিক এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে বিয়েনালের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অনুষ্ঠানে বিচারকম-লীর সভাপতির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উত্তর কোরিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ও ইয়ং চোল এবং থাইল্যান্ডের ভাইস মিনিস্টার চাওরো কাসিতসুন অরং ট্রং। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এ উৎসব আমাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক গ-ি পেরিয়ে শিল্পকলাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবে। সেই সঙ্গে আমাদের হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতির ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানতে পারছে বিশ্ববাসী। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এ প্রদর্শনীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে তাদের শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা সম্যক ধারণা পেয়ে থাকি, যা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের এক নিবিড় সাংস্কৃতিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে, যা দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কন্নোয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের ৫৫৬ জন শিল্পীর শিল্পকর্ম থেকে ১৪৮ জন শিল্পীর বাছাইকৃত ৫৪টি শিল্পকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। একইসঙ্গে দেশের খ্যাতিমান ৫৪ জন আমন্ত্রিত চিত্রশিল্পীর ৫৪টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৫৪টি দেশের ১২৭ জন শিল্পীর ২৭৭টি শিল্পকর্ম। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো থেকে শিল্পী, শিল্প সমালোচক, মিউজিয়াম কিউরেটরসহ মোট ১৪৬ জন বিদেশী এ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ছাড়া আরও অংশ নিচ্ছেন আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কলোম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, উত্তর কোরিয়া, মিসর, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মািন, গ্রীস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কুয়েত, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মিয়ানমার, নেপাল, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, পেরু, ফিলিপিন্স, পোল্যান্ড, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, রিইউনিয়ন আইল্যান্ডস, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সাউথ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্কো, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভিয়েতনাম ও উজবেকিস্তানের শিল্পীরা। মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মাসব্যাপী প্রদর্শনীর পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছে সেমিনার, পারফরমেন্স আর্টস প্রদর্শনী, আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প। মাসব্যাপী প্রদর্শনী উপলক্ষে আজ থেকে দুই দিনের ‘আর্ট অব দ্য সিটি’ শিরোনামে দুই দিনের সেমিনার শুরু হবে। এছাড়াও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোনে আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হবে। বিটিভির টেলিভিশন মিউজিয়াম উদ্বোধন ॥ চালু হলো বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) প্রতিষ্ঠিত টেলিভিশন মিউজিয়াম। বৃহস্পতিবার বিকেলে ইতিহাসের সাক্ষ্যবহ নানা অনুষঙ্গকে সঙ্গী করে এই সংগ্রহশালার উদ্বোধন হয়। এতে ঠাঁই পেয়েছে ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্মৃতির স্মারকে পরিণত হওয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ। আছে বিটিভিতে প্রথম গান গাওয়া সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের সেই গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজটি। আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিটিভি সফরের ফুটেজ কিংবা বিটিভিতে প্রথম সংবাদপাঠের চিত্রসহ সরকারী টেলিভিশন চ্যানেলটির দীর্ঘ পথচলায় নানা নিদর্শন, যেগুলো পরিণত হয়েছে দেশের টেলিভিশনশিল্প তথা গণমাধ্যমের বিকাশের দলিলে। এছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিটিভিতে সংগীতানুষ্ঠান, নাটক, আলেখ্যানুষ্ঠান, যাত্রা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ স্মরণীয় যেসব অনুষ্ঠান প্রচার হয়েছে সেসব সংরক্ষিত হয়েছে এই সংগ্রহশালায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর রামপুরার বিটিভির সদর দফতরের নিচতলার একটি কক্ষে এই সংগ্রহশালার উদ্বোধন হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে এ সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিভির মহাপরিচালক হারুন-অর-রশীদ. সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নওয়াজীশ আলী খান, অভিনয়শিল্পী, ইনামুল হক, কেরামত আলী প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বিটিভির মূল উদ্দেশ্য ব্যবসা করা নয়। মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করে বিটিভি। দেশ ও জাতির পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখাই বিটিভির প্রধান উদ্দেশ্য। একইসঙ্গে কাজ করছে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মনন গঠনে। উন্মুক্ত এ সংগ্রহশালায় দর্শনার্থীরা দর্শনী ছাড়াই সরকারী বন্ধ ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা এবং দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত টেলিভিশন মিউজিয়ামটি পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন। মহিলা সমিতিতে ‘বটতলা রঙ্গমেলা’॥ ‘ধরিত্রী ও মানবতার বিরুদ্ধে মুক্তির উৎসব’ প্রতিপাদ্যে রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তনে শুরু হলো ‘বটতলা রঙ্গমেলা’ শীর্ষক নাট্য উৎসব। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় উৎসবের আয়োজক নাট্যদল বটতলা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এম কে আরেফ, ফয়েজ জহির, আজাদ আবুল কালাম পাভেল, নূনা আফরোজ। এর আগে মহিলা সমিতির বহিরাঙ্গন পরিবেশনায় শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মঞ্চস্থ হয় বটতলার নাটক ‘ক্রাচের কর্নেল’। কর্নেল তাহেরের জীবনভিত্তিক উপন্যাস ‘ক্রাচের কর্নেল’-এর নাট্যরূপ দিয়েছেন সৌম্য সরকার ও সামিনা লুৎফা নিত্রা। নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। ‘বটতলা রঙ্গমেলা’ নাট্যোৎসবের’ সমাপনী হবে ১০ ডিসেম্বর। সেদিন নাট্যজন আলী যাকেরের হাতে ‘আজীবন সম্মাননা স্মারক’ তুলে দেবে বটতলা। ‘পুতুল পুতুল মূর্ছনা’ বইয়ের প্রকাশনা ॥ কবি ও ছড়াকার মারুফুল ইসলাম রচিত ছড়ার বই ‘পুতুল পুতুল মূর্ছনা’র প্রকাশনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হলো। বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্লাবের সিনহা লাউঞ্জে এই অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও কবি কাজী রোজী। মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে বইটি নিয়ে অলোচনা করেন আমীরুল ইসলাম, আহমাদ মাযহার, রাশেদ রউফ ও শিশু একাডেমির পরিচালক ছড়াকার আনজীর লিটন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইটির প্রকাশনা সংস্থা চন্দ্রাবতী একাডেমির নির্বাহী পরিচালক কামরুজ্জামান কাজল। চট্টগ্রামে ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব শুরু আজ ॥ চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রামে আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে দু’দিনব্যাপী ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব। চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের উদ্যোগে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব। বেলা ১১টায় উৎসব উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সোমনাথ হালদার।
×