ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

মধুমাসের উপহার

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২ জুন ২০১৬

মধুমাসের উপহার

দেওয়ান সামছুর রহমান ঋতু বৈচিত্র্যের এ দেশে গ্রীষ্মকালের রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। কেবল রুদ্র রূপের জন্য নয়, এই ঋতু নানা মৌসুমী ফলের পসরা সাজিয়ে প্রস্তুতি নেয় মধুমাস জৈষ্ঠ্যের মাধ্যমে। এ সময়ের সুমিষ্ট, সুস্বাদু ফল সকলের কাছেই অত্যন্ত পছন্দের। গাছে গাছে পাকা ফলের সমারোহ চারদিকে ম ম গন্ধ অন্যরকম আবহ তৈরি করে। ফলের রাজা আম আর বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। আম-কাঁঠালের সুঘ্রাণ নাসারন্ধে আসার পাশাপাশি মাছিদের আনাগোনাও বাড়তে থাকে। বাড়িতে নতুন জামাইকে দাওয়াতের জন্য শ্বশুর মহাশয় আম-কাঁঠালের এ সময়টাকেই বেছে নেয়। ছেলেমেয়েদের স্কুলে এ সময়টাতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেয়া হয় যা কিনা আম-কাঁঠালের ছুটি হিসাবেই বেশি পরিচিত হয়। মধুমাসের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফল লিচু। বিশেষ করে শিশুদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এ ফল। পাকা জামের মধুর রসে মুখ রঙিন করার উপযুক্ত সময় এটি। এ সময়ের রসালো ফল হলো তরমুজ। বাংগীর মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও এদের স্বজাতি ফল চিনাল এ সময়ে পাওয়া যায়। এ সময় দেশী বেলেও বেশ প্রাচুর্য দেখা যায়। গ্রীষ্মের কাঠ ফাঁটা রৌদ্রে পাকা বেলের শরবত বেশ জনপ্রিয়। মজাদার এক ফল হলো আতা ফল। এ মাসে আতা ফল ও তার স্বজাতি সিতা ফল বাজারে পাওয়া যায়। জামরুলের বেশ উপযুক্ত সময় এটি। ডালিমের স্বাদ নেয়ার জন্যও সবাই উন্মুখ হয়ে থাকে এ সময়টাতে। দেশী ফল অরবরই। ডুমুরের মতো গাছে ধরেও প্রচুর। আচারের জন্য এর বেশ খ্যাতি রয়েছে। আরেক দেশী ফল ডেওয়া। গরমে টক হিসেবে ডেওয়াকে অনেকেই পছন্দের তালিকায় রাখেন। করমচা গাছে ঝেঁপে আসে এ ফল। খেতে টক হলেও দেখতে ভারি চমৎকার। কাওয়া জাম সবাই না খেলেও দেখতে মন্দ লাগে না। কেওড়া বা কেও ফল গাছে গাছে ঝুলতে দেখা যায়। লটকনও বাজারে আসতে থাকে এ সময়। বেথুম বা বেথ ফল জংলী হলেও স্মৃতিকাতর ব্যক্তিরা মনের মধ্যে একে গেঁথে রেখেছে। যে সকল ফল সাধারণত সারা বছরই সচরাচর পাওয়া যায় এদের মধ্যে কলা, পেঁপে, ডাব, পেয়ারা, কামরাঙ্গা। এসব ফল এসময়েও পাওয়া যায়। প্রকৃতির এক বড় আশীর্বাদ ফল। আর জ্যৈষ্ঠ মাস হলো মৌসুমী ফলের বেশ উপযুক্ত সময়। দেশী ফলগুলো আমাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা আর ঐতিহ্যের অংশ। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফলের মধ্যেও ভেজাল করে ফেলছে। ফলে ফল খাওয়াটাও এখন আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন সোচ্চার হতে হবে। বেশি করে দেশীয় ফল গাছ লাগানোর মাধ্যমে প্রকৃতি আর পরিবেশের যেমন ভারসাম্য রক্ষা হবে তেমনি আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য পুষ্টির ভা-ার হিসাবে কাজ করবে। বারদী, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×